Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ যেন আসমানিদের ঘর

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : | প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

আসমানিদের ঘরে পরিণত হয়েছে নরসিংদী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (নপবিস) বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। সামান্য বৃষ্টি হলেই কয়েক ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। সামান্য বাতাস হলেই ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে রাখছে নপবিস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া ঘন ঘন ত্রæটির কারণেও ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে।
একবার ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ ঘটছে, একবার জাম্পার চলে যাচ্ছে, কখনো তার ছিঁড়ে পড়ছে, কখনো দেখা দিচ্ছে রেড হট।
বিগত মাসখানেক ধরে এই অবস্থাায়ই চলছে নরসিংদী পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যবস্থা। হাজার হাজার গাছ-গাছালি মুন্ডপাত ঘটিয়েও সরবরাহ ব্যবস্থাকে সামাল দিতে পারছে না। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের। অন্ধকারে থাকতে থাকতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে বহুতল ভবনের বাসিন্দারা। এসব ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জেনারেল ম্যানেজার, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজারসহ কারো কাছ থেকেই কোনো সদোত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।
দিনের পর দিন এই অচলাবস্থা চলতে থাকায় লাখ লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। গত রোববার মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত নরসিংদীতে বিদ্যুৎ ছিল না। কমবেশি ৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ বন্ধ থাকায় আইপিএসগুলো সব অচল হয়ে পড়ে। ভ্যাপসা গরমে সারারাত মানুষ ঘুমাতে পারেনি। সীমাহীন কষ্টের শিকার হয় বহুতল ভবনের বাসিন্দারা। সকালে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হলেও দশটার দিকে আবার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম মাহফুজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শহরের ব্রাহ্মন্দী এলাকায় নদী বাংলার সামনে তার ছিড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। মধ্যরাতে তার ছিড়ে পড়েছে। আর পল্লী বিদ্যুতের কর্মচারীরা খবর পেয়েছে সকালে।
কিন্তু বিদ্যুৎ গ্রাহকের অভিযোগ হলো রাতের বেলায় পল্লী বিদ্যুতের এ বিশাল স্থাপনার দায়িত্বে থাকে সাধারণ লাইনম্যানদের উপর। অফিসাররা লাইনম্যানদের উপর এই বিশাল স্থাাপনার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে রাতে ঘুমিয়ে থাকেন। কোন প্রকার ত্রæটির কারণে রাতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে তাৎক্ষণিকভাবে লাইন মেরামত করতে কেউ আসে না। এছাড়া পল্লী বিদ্যুতের সরবরাহ লাইনসম‚হের উপর নপবিস কর্তৃপক্ষের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। কোথাও তার ছিড়ে গেলে জাম্পার আউট হয়ে গেলে কিংবা কোথাও কোনো ট্রান্সফর্মার বিস্ফোরণ হলে তা খুঁজে বের করতে তাদের সময় কেটে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। গ্রাহকদের পক্ষ থেকে কমপ্লেন সেন্টারে কোন অভিযোগ দায়ের করা হলে ইঞ্জিনিয়ার বা লাইনম্যানরা কেউ তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেন না।
গত মঙ্গলবার সকালে সামান্য বৃষ্টিপাতের পর বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে কমবেশি তিন ঘন্টা। একই দিন দুপুরের পর সম্পূর্ণ ভালো আবহাওয়ার মধ্যেও ঘণ্টা দেড়েক বন্ধ থাকে। সন্ধ্যায় সামান্য বৃষ্টিপাত হওয়ার সাথে সাথেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। কমবেশি ২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। আকাশে মেঘ জমতে দেরি হয়। কিন্তু বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করতে দেরি হয় না। সরবরাহ লাইনসমূহকে ঝঞ্ঝাটমুক্ত রাখার জন্য বছরে দুইবার গাছ গাছালিকে কেটে ছেঁটে ন্যাড়া করে দেয় পল্লীবিদুৎ কর্তৃপক্ষ। সরবরাহ লাইনগুলো ইনসুলেটেড তার দিয়ে তৈরি করা হলেও প্রতিবছর পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ লাইনসম‚হ সংলগ্ন হাজার হাজার গাছ গাছালির ডালপালা কেটে গাছগুলির সর্বনাশ ঘটিয়ে লাইনগুলোকে ঝুঁকিমুক্ত করে পল্লীবিদ্যুত কর্তৃপক্ষ। এই বৃক্ষনিধন পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ালেও বিদ্যুৎ সরবরাহের খাতিরে মানুষ মুখ খুলেন না।
গত মঙ্গলবার এ ব্যাপারে ডিজিএম মাহফুজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘুমের ঘোরে এই প্রতিবেদককে বলেন, বৃষ্টি হলে এ অবস্থাই হবে।
জেলা শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ যখন বন্ধ তখন তিনি বাসায় শুয়ে ঘুমুচ্ছিলেন তার বক্তব্য অনুযায়ী ঝড় বৃষ্টির ফলে তারা লাইন বন্ধ করে ঘুমাবে আর জনগণ বিদ্যুতের জন্য কষ্ট করবে। এ অবস্থাা থেকে উত্তরণের কোনো ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করবে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ