Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামে নৈতিক চরিত্রের গুরুত্ব

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

এই নশ্বর পৃথিবীতে মানুষের পদার্পণ ঘটেছে হযরত আদম আ.-এর মাধ্যমে। তারপর ক্রমাগতভাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মহান আল্লাহপাকের পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছেন যুগে যুগে বহু নবী ও রাসূল। যারা দুনিয়ার মানুষকে নৈতিক চরিত্রের উত্তম শিক্ষা দান করেছেন। কিন্তু তাদের শিক্ষা ও আদর্শের মাঝে পূর্ণতা ছিল না, ছিল না সর্বাত্মক পবিত্র চরিত্রের গতিধারার পূর্ণ বাস্তবায়ন।
তাই সর্বশেষ নবী রাসূলুল্লাহ সা. এর মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র নৈতিক চরিত্রের পূর্ণতা সাধন করেছেন। এই নিরিখে রাসূলুল্লাহ সা. সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘অর্থাৎ আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে নৈতিক চরিত্র-মাহাত্ম্যকে পরিপূর্ণ করে দেয়ার উদ্দেশে। (মুয়াত্তা ইমাম মালেক)।
মানবজীবনের বিভিন্ন অঙ্গনের পর্যায়ক্রমিক সিঁড়ি রচিত হয়েছে ব্যক্তিগত জীবনের সমন্বয়ে। রাসূলুল্লাহ সা.-এর পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণের শিক্ষা ও আদর্শ সর্বব্যাপী ছিল না বিধায় মানবজীবনের সকল সিঁড়িতে তারা আংশিক আদর্শ ছাড়া পরিপূর্ণ আদর্শের রূপরেখা প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। এই অপূর্ণতাকে পূর্ণতা দান করেছেন নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. নিজের কর্মময় জীবনে।
তিনি তার ২৩ বছরের নবুওয়াতী জিন্দেগিকে জীবন ও জগতের প্রয়োজনীয় যাবতীয় নৈতিক চরিত্র মাহাত্ম্যকে পূর্ণতা দান করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তার মাধ্যমেই বিশ্বজগৎ লাভ করেছে পরম আদর্শভিত্তিক নৈতিক চরিত্রের উজ্জ্বলতম বিকাশ।
শুধু তাই নয়, ইসলামী জীবনধারার প্রধান অবলম্বন হচ্ছে ঈমান। আল্লাহর ওপর ঈমান, তার ফেরেশতাদের ওপর ঈমান, কিতাবসমূহের ওপর ঈমান, তার প্রেরিত রাসূলগণের ওপর ঈমান, কিয়ামতের দিনের ওপর ঈমান, তকদিরের ওপর ঈমান, ভালো এবং মন্দ সব কিছু আল্লাহপাকের পক্ষ থেকেই হয় এবং মৃত্যুর পর পুনর্জীবন লাভের ওপর ঈমান আনয়ন করা অপরিহার্য।
এই ঈমানের পরিপূর্ণতাও সাধিত হয় না, যদি নৈতিক চরিত্র পূর্ণতা লাভ না করে। এই বিশেষত্বটি রাসূলুল্লাহ সা. এভাবে ঘোষণা করেছেন, ‘ঈমানদার ব্যক্তিদের মাঝে ঈমানের দিক থেকে পূর্ণতা সেই ব্যক্তিই লাভ করতে পারে, যে নৈতিক চরিত্রের দিক থেকে সবার অপেক্ষা উত্তম হবে। (আবু দাউদ, দারেমি)।
বস্তুত ঈমান ও নৈতিকতা পরস্পর গভীর বন্ধনে আবদ্ধ। এর একটিকে বাদ দিয়ে অপরটির পূর্ণতা কল্পনা করা যায় না। উত্তম নৈতিক চরিত্র যেমন ঈমানের পরিপূর্ণতার পথকে সহজ ও সুগম করে তোলে, তেমনি নৈতিকতাহীন ঈমানের কোনোই মূল্য নেই। নেকি ও বদি উভয় প্রকার কাজের পরিচয় লাভ করা উত্তম নৈতিকতার জন্য একান্ত প্রয়োজন।
হযরত মাওয়ায়েস ইবনে সায়মন আনসারী রা. বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সা. বিরর, নেকি এবং ইসম বদি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি উত্তরে বললেন, ‘বিরর হচ্ছে উত্তম চরিত্র এবং ইসম হচ্ছে এমন কাজ যা তোমার মনে কুণ্ঠা জাগায় এবং লোকেরা তা জানতে পারুক, তা তুমি পছন্দ করো না। (মুসলিম)। এ থেকে বোঝা যায় যে, নেকির কাজ অবলম্বন এবং বদির কাজ পরিত্যাগ করার মাধ্যমে নৈতিক চরিত্রের পূর্ণতা সাধন সম্ভব।



 

Show all comments
  • Shohidul Islam ১২ মে, ২০১৯, ২:০৯ এএম says : 0
    নৈতিক শিক্ষা ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলির অন্তর্গত। ইসলামি দর্শনে আদি শিক্ষক হলেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। তাই ফেরেশতারা বলেছিলেন: ‘হে আল্লাহ, আপনি পবিত্র! আপনি যা শিখিয়েছেন তা ছাড়া আমাদের কোনোই জ্ঞান নেই; নিশ্চয় আপনি মহাজ্ঞানী ও কৌশলী।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৩২)।
    Total Reply(0) Reply
  • হাসিবুল ইসলাম ১২ মে, ২০১৯, ২:০৯ এএম says : 0
    নৈতিক চরিত্র মানবজীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদ। যারা উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী তারা পরিচিতজনদের আস্থা সহজেই অর্জন করতে পারে। পরিবার আত্মীয়স্বজন সমাজ তাদের দ্বারা উপকৃত হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • সানী ১২ মে, ২০১৯, ২:১০ এএম says : 0
    ইসলামে নৈতিক চরিত্রকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো লোক সে বা তারা যাদের চরিত্র তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম। বুখারি, মুসলিম
    Total Reply(0) Reply
  • স্বদেশ আমার ১২ মে, ২০১৯, ২:১০ এএম says : 0
    নৈতিক চরিত্রের দিক দিয়ে যে ব্যক্তি সর্বোত্তম, ইসলামের দৃষ্টিতে সেই হচ্ছে উত্তম ব্যক্তি। এখানে প্রকৃত মনুষ্যত্ব ও উত্তম নৈতিক চরিত্র একই জিনিসের দুই নাম। যার উন্নত মুনষ্যত্ব রয়েছে সে-ই উৎকৃষ্ট চরিত্রের অধিকারী। উত্তম চরিত্র ব্যতীত কোন মানুষই হওয়ার দাবি করতে পারে না।
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মাদ নাজমুল ইসলাম ১২ মে, ২০১৯, ২:১০ এএম says : 0
    ইসলামে ইমানের পর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে নৈতিক চরিত্রকে। নৈতিক চরিত্রকে কল্যাণের উৎস হিসেবেও ঘোষণা করা হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মাহমুদুল হাসান রাশদী ১২ মে, ২০১৯, ২:১১ এএম says : 0
    পৃথিবীতে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমন ঘটেছিল মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটানোর জন্য। মানুষকে সব ধরনের ক্লেদ কালিমামুক্ত করে মন মননে পরিচ্ছন্ন মানুষে রূপান্তরের জন্য।
    Total Reply(0) Reply
  • মিরাজ মাহাদী ১২ মে, ২০১৯, ২:১১ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদের সবাইকে উন্নত চরিত্রের অধিকারী হওয়ার তৌফিক দান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • নাবিল ১২ মে, ২০১৯, ৯:৫২ এএম says : 0
    এই সুন্দর লেখাটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন