Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইন্টার্ন ডাক্তারদের আল্টিমেটামে সিলেটে গ্রেফতার ধর্ষণের হুমকিদাতা সেই ছাত্রলীগ নেতা

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০১৯, ৩:২১ পিএম

ডেম-কেয়ার ভাবে ঠিকতে থাকতে পারলেন না ধর্ষণ হুমকি দাতা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার চৌধুরী। ঐতিহ্যের ছাত্র সংগঠন সিলেট ছাত্রলীগের বিষফোঁড়া কথিত এই নেতাকে আজ মঙ্গলবার সাড়ে ১২টায় নগরী কোর্ট পয়েন্ট এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিসি (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ, পিপিএম। হুমকি দেয়ার ঘটনাটি ধামাচাপার বিভিন্ন অপ্রচেষ্টা ভেস্তে যায় ইন্টার্ন ডাক্তারদের অনড় ভূমিকায়। গত শনিবার (১১ মে) বিকালে দায়সারা গোছের একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেই ঘটনা চাপিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ যেন আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার মতো রূপ নেয়। কর্মবিরতি সহ নানা কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামে সিলেটের সবক‘টি হাসপাতালের ইন্টার্ন ডাক্তাররা ইন্টার্ন ডাক্তাররা। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার চৌধুরীরের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয় ইর্ন্টান চিকিৎসকরা। এরই-পেক্ষিতে ঘটনার ৪দিন পর সোমবার সোমবার (১৩ মে) রাতে কতোয়ালী মডেল থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ফেরদৌস হাসান। মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম মিঞা। মামলার বাদি ও হাসপাতাল পরিচালক ফেরদৌস হাসান বলেন, সোমবার রাতেই অভিযোগ দেয়ার পর মামলা হিসেবে রেকর্ড করেন থানা পুলিশ। এদিকে, আজ ( মঙ্গলবার) দুপুরে ছাত্রলীগ নেতা ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারে আল্টিমেটাম বেঁধে দিয়েছেন ইর্ন্টান ডাক্তাররা। সিলেট চৌহাট্টাস্থ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ঘোষিত মানববন্ধন শেষে বক্তারা মামলা রুজুর ঘটনাকে সাধুবাদ জানালেও, আসামীদের গ্রেফতারের জন্য পুনরায় ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন, পাশাপাশি উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইর্ন্টানরা কর্মবিরতি কর্মর্সূচী অব্যাহত রাখার ঘোষনা দেন। সোমবার নগরীর মিরবক্সটুলাস্থ উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করন ডা. ইফাত আরা চৌধুরী। তারা আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা গ্রহন ও গ্রেফতারের দাবিতে সিলেটের সকল মেডিকেলের ইন্টার্ণ ডাক্তারদের কর্মবিরতি শুরুর আহ্বান জানান। উইমেন্স মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন ডাক্তাররা আজ সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের সব মেডিকেলের সব ডাক্তারদের কর্মবিরতি, একই দিনে সিলেট বিভাগের সব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে বিকাল ৪টা-৬টা পর্যন্ত প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রাখা, সকাল ১১টায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন এবং প্রতিবাদ সমাবেশে যোগদান, বিএমএ সভাপতি ও সম্পাদক, সিভিল সার্জন, ডেপুটি ডিরেক্টর (স্বাস্থ্য), বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্বারকলিপি প্রদানের কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করেন তারা। বিএমএ সিলেট প্রেসিডেন্ট ডাক্তার রুকন উদ্দিন মানববন্ধন চলাকালে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ডা. নিজাম আহমদ চৌধুরী, ডা. হিমাংশু শেখর দাস, ডা. মাহবুব, ডা. দ্বীপ, ডা. সজীব, ডা. জাবের, ডা. ইশফাক জামান সজীব, ডা. জাবেদ আহমদ, ডা. রিপন, ডা. তিতাশ কুমার, ডা. সোলেমান বাবু, ডা. আফজাল, ডা. সুনান্ত, ডা. সাব্বির আহমদ, ডা. হরশিত বিশ্বাস, ডা. প্রবাল, ডা. হৃদয়। এছাড়া উপস্থিতি ছিলেন, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নর্থইস্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পার্কভিউ হাসপাতাল, রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজের ইর্ন্টান প্রতিনিধি। সোমবার দুপুরেও সংবাদ সম্মেলন করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তারের দাবি জানান ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।এই সংবাদ সম্মেলনের পর রাতে মামলা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এব্যাপারে মামলার বাদি ফেরদৌস হাসান বলেন, চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে মামলা দায়েরের দাবি জানানো হয়েছিল, দাবীটি যৌক্তিক বিবেচনায় কর্তৃপক্ষ মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেয়ায়, মামলা দায়ের করা হয়। এখন পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। এদিকে, একাধিক সূত্র জানিয়েছে এমনিতেই নানাভাবে বির্তকিত সারোয়ার চৌধুরী। গ্রামের বাড়ী সিলেট বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই এলাকায়। দীর্ঘ ৭ বছর মধ্যপ্রাচ্যের কাতারের কর্মরত ছিল। ২০১৩ সালে দেশে ফিরে সরকার দলীয় সংগঠন ছাত্রলীগের ছায়ায় ভিড়েন। গ্রুপিং রাজনীতির শক্তি বলে
দক্ষিণ সুরমা এলাকার বাসিন্দা না হয়েও ওই উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির পদ সে বাগিয়ে নেয়। ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হলেও, অস্থানীয়-অছাত্র বির্তকিত সারোয়ার চৌধুরীর পদবী ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেয়নি তৎকালীন ছাত্রলীগ। কিন্তু ছাত্রলীগের কথিত সাবেক নেতা ্ও গ্রুপবাজদের স্বার্থদৃষ্টির ফলে, ছাত্রলীগের পদ লাভ করল্ওে, ঐতিহ্যের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সেই পদ বহনের ক্ষমতা যে নেই, তা-ই প্রমান করেছেন প্রকাশ্যে ধর্ষণ্ও লাশ ফেলে দেয়ার হুমকি প্রদানের মাধ্যমে। স্থানীয় ছাত্রলীগের একাধিক নেতা বলেন, শিক্ষিত সমাজে স্বাভাবিকভাবে নিজকে উপস্থাপনের ক্ষমতা যে মানুষের নেই সে কিভাবে পদবী জুটিয়ে নিয়েছিল। সারোয়ার বিদেশ ফেরত, তার গতিবিধি সন্দেহজনক, মাদক ব্যবসা, হত্যা ঘটনার সাথে তার সর্ম্পৃক্ততা রয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তার বড় ভাই দিলোয়ার বিএনপি রাজনীতির সাথে যুক্ত। তাদের ভাষায় সারোয়ারদের টেনে না ধরলে ছাত্র রাজনীতির পদবীর ইমেজ বলতে কিছু অবশিষ্ট থাকবে না বলে তাদের আশংকা।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৯ মে) বিকালে ১০-১৫ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী পেটের পীড়ায় ভোগা একজনকে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। রোগীর সঙ্গে একজন থেকে বাকিদের বাইরে যেতে বলেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে চিকিৎসকের ওপর চড়াও হন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এসময় দক্ষিণ সুরমা উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সারোয়ার হোসেন চিকিৎসক নাজিফা আনজুম নিশাতকে ছুরি প্রদর্শন করে হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন ওই চিকিৎসক। নিশাত নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে বিষয়টি উল্লেখ্য করে পোস্ট দিলে এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ