Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য

ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

আজ ১৭ মে বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্র নায়ক শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। ১৯৮১ সালের এই দিনে প্রায় ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে দেশে ফিরে আসেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার সময় বিদেশে অবস্থানের কারণে তার দুইকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রাণে বেঁচে যান। জাতির ইতিহাসের এ বিষাদময় ঘটনার সময় স্বামী পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার কর্মসূত্রে স্বামী ও বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে জার্মানিতে অবস্থান করছিলেন শেখ হাসিনা। পরে দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষে ভারত হয়ে আজকের এ দিনে মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। দেশে ফেরার আগেই ১৯৮১ সালের ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রæয়ারি অনুষ্ঠিত দলের জাতীয় কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনে নানামুখী উদ্যোগ নেন তিনি। এরপর মুজিবকন্যার একের পর এক ইতিহাস সৃিষ্ট। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ জাতিকে উপহার দিয়েছেন পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তি ও স্বাধীনতার সাধ। আর তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে শুরু করে জাতির বুকে চেপে বসা সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে জনমত গঠন এবং মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই কাজ করতে গিয়ে বারবার বুলেট ও গ্রেনেডের মুখে পড়তে হয়েছে জাতির পিতার কন্যাকে। বারবার স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক অপশক্তি তাঁর ওপর বুলেট ও গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তাঁকে শেষ করে দিতে চেয়েছে। ২১ বার হত্যা চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ’র বিশেষ রহমত থাকায় তিনি বেঁচে আছেন।
দেশে ফিরে শেখ হাসিনা আমাদের মাথা তুলে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। তিনি দেশে ফিরে না এলে তার তেমন কোনো ক্ষতি ছিল না। দেশে না ফিরলে তার ব্যক্তি জীবন ও সন্তানদের জীবন মোটামুটি সচ্ছলভাবে চলে যেত। দেশে ফিরে এসে তিনি নিজে জীবনের ঝুকি নিয়ে চলেছেন।
মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, আল্লাহ তায়ালা বঙ্গবন্ধুকে পাঠিয়েছিলেন আমাদের গোলামি জিঞ্জির ভাঙার জন্য, আর শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন কোনো এক বিশাল অর্জনের জন্য। সেসব অর্জন ইতোমধ্যে দৃশমান হয়েছে। ১৯৮১ সালে ১৭ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার কারণেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। শেখ হাসিনা আসার কারণেই বঙ্গবন্ধুর খুনিদের শাস্তি হয়েছে। তিনি ফিরে এসে দেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কারণেই আজ দেশ উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রার পথে আছে। তিনি দেশে ফিরে না আসলে বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলো চালু হতো না। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হতো না। গ্রামের মানুষ শহরে সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতো। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার থেমে যেত। উল্টো মুক্তিযোদ্ধাদের ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়তো। শেখ হাসিনা না থাকলে দল হিসেবে এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী হিসেবে আওয়ামী লীগ ভংগুর থেকে যেত। শেখ হাসিনা না থাকলে দুস্থ অসহায় মানুষের জন্য দুস্থ ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা মহিলাদের জন্য ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও মূল্যায়ন, বয়স্কদের জন্য শান্তি নিবাস, আশ্রয়হীনদের জন্য আশ্রয়ণ, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়ন হতো না; শেখ হাসিনা না থাকলে কৃষি, শিল্প, যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হতো না। উচ্চ আয় টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন সম্ভব হতো না; বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সম্ভব হতো না; স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ এ মাত্রায় পৌঁছত না; ডিজিটাল বাংলাদেশ হতো না; সমুদ্র বিজয় ও বøু-ইকোনমির স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যেত; ছিটমহলের মানুষ আজও মানবেতর জীবনযাপন করত; উত্তরবঙ্গে মঙ্গা চিরস্থায়ী হয়ে যেত; বন্যায় নদীভাঙ্গন চিরায়ত রূপ নিত। গত ১০ বছরে দেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বের বিস্ময় হয়ে উঠেছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে এরই মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার মানদন্ড পূরণ করেছে বাংলাদেশ। দেশ থেকে দূর হয় মঙ্গা ও লোডশেডিং শব্দ দুটি। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ঘরে ঘরে চিকিৎসা সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হয়।
অকুতোভয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের মডেল হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক মানদন্ডে এবং উন্নয়নের সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। দেশের দারিদ্র্যের শৃঙ্খল ভেঙে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন সচ্ছলতার দিকে। এই মুহূর্তে তিনি যা কিছু স্পর্শ করছেন, তা-ই তাঁর হাতের ছোঁয়ায় সোনা হয়ে যাচ্ছে।
গণহত্যার শিকার মিয়ানমারের ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে শেখ হাসিনা বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করেছেন এক মানবতাবাদী দেশ হিসেবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি গোটা বিশ্বকে জাগিয়ে তুলেছেন। বর্তমানে বিশ্বনেতাদের আলোচনার অন্যতম বিষয় হচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু। বাংলাদেশ, যা বাংলাদেশের ভৌগোলিক ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে থাকবে। শেখ হাসিনার আমলেই বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে নির্মিত হচ্ছে দেশের বৃহত্তম পদ্মা সেতু। তিনি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা আদায়ে ভূমিকা রেখেছেন।
বাংলার মানুষের বক্তব্য, শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবতার নেত্রী সাধারণ মানুষের মাঝে আস্থা করে নিয়েছেন। বিশ্বে এখন তিনি মাদার অব হিউম্যানিটি বা ‘মানবতার মা’। তিনি আজ তৃতীয় বিশ্বের একজন বিচক্ষণ বিশ্বনেতা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন। মানবিকতা, অসা¤প্রদায়িকতা, উদার, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও বিজ্ঞানমনস্ক জীবনদৃষ্টি তাঁকে করে তুলেছে এক আধুনিক, অগ্রসর রাষ্ট্রনায়ক।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য অপরিহার্য। আগামী ২০২০-২০২১ সালকে মুজিব বর্ষ ঘোষণা করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হবে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে এ দুটি কর্ম কি সুষ্ঠুভাবে পালিত হতো? অতএব শেখ হাসিনা ও তার দলের অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য।
লেখক: সভাপতি, আওয়ামী যুবলীগ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেখ হাসিনা


আরও
আরও পড়ুন