Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধারণা বদলে দেবে যে ভেন্যু

স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সে পিচের সমাহার

প্রকাশের সময় : ২৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী, কক্সবাজার থেকে : এটা কি ক্যারিবিয়ান কোন দ্বীপের ক্রিকেট স্টেডিয়াম? সফর পিপাসু পর্যটকরা শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স দেখে এ প্রশ্ন করতেই পারেন। পেছনে ঝাউ বন, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। পর্যটকদের সবচেয়ে জনসমাগম হয় যেখানে, সেই লাবনি পয়েন্ট স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের খুব কাছে। বঙ্গোপসাগরের গর্জনেও শান্তশিষ্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সটি। আমাদের দেশে স্টেডিয়াম নির্মাণে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) যেখানে গুরুত্ব দিয়েছে বহুমুখী ব্যবহার এবং বিশাল দর্শক উপস্থিতি, সেখানে কক্সবাজারের শেখ কামাল স্টেডিয়াম নির্মাণে গুরুত্ব পেয়েছে শোভা এবং সৌন্দর্য। একটি দ্বিতল প্যাভিলিয়ন, সেখানে ১৬শ’ দর্শক বসার ব্যবস্থা, দু’টি ড্রেসিংরুম, আর ৩৬ জন সাংবাদিকের ম্যাচ কভারের সুবিধা। এটাই যথেষ্ট। সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট কিংবা কুইন্সটাউনের সঙ্গে অনায়াসে তুলনায় আনা যেতে পারে এই স্টেডিয়ামকে।
২০১৩ সালের এপ্রিলে লাবনী পয়েন্টে গলফ কোর্সের জন্য বরাদ্দকৃত জায়গা থেকে ৪৫ একর ক্রিকেট স্টেডিয়ামের জন্য বিসিবিকে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বরাদ্দ দেয়ার পর খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত টি-২০ বিশ্বকাপের বিকল্প ভেন্যু হিসেবে আইসিসিকে আকৃষ্ট করতে ভরা বৃষ্টিতে কাজে হাত দিয়ে মাত্র ৪ মাসের মধ্যে মাঠ, স্টেডিয়ামের প্যাভিলিয়ন এমনকি একাডেমী মাঠ সব কিছু তৈরি করে ফেলেছে বিসিবি নিজস্ব অর্থায়নে। তড়িঘড়ি করে স্টেডিয়াম নির্মাণের কারণে টি-২০ বিশ্বকাপের বিকল্প ভেন্যুর স্বীকৃতি দেয়নি আইসিসি। তবে ২৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের আকর্ষণকে সারা বিশ্বে ক্রিকেটের মধ্য দিয়ে ছড়িয়ে দেয়ার কাজটি ঠিকই করতে পেরেছে বিসিবি। এ জন্য বাহাবা পেতেই পারে বিসিবি।
২০১৪ সালে ক্রিকেটের জন্য খুলেছে স্টেডিয়ামটি, ত্রিদেশীয় নারী টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে হয়েছে আন্তর্জাতিক ভেন্যুর যাত্রা। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট জাতীয় লীগের উপর্যুপরি ২টি আসরের ম্যাচ ছাড়াও গত নভেম্বরে এখানে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২ ম্যাচের টি-২০ সিরিজ হয়েছে আয়োজন। নভেম্বরে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল এখানে ১ সপ্তাহ নিবিড় অনুশীলন করেছে। এবার পালা বড় পরিসরের আসরে ভেন্যুটির পরিচিতি পর্ব। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আজ স্কটল্যান্ড-নামিবিয়ার ম্যাচ দিয়ে আর একটি ধাপে স্টেডিয়ামকে চিনবে বিশ্ব। একক ভেন্যু হিসেবে সংখ্যার দিক থেকে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ পাচ্ছে কক্সবাজার। মূল স্টেডিয়াম এবং একাডেমী মাঠ মিলিয়ে সংখ্যাটি ১৭!
বাংলাদেশের কোন ক্রিকেট স্টেডিয়াম কিংবা কমপ্লেক্স এতো বড় আয়তনের নয়। লাবনি পয়েন্ট দিয়ে স্টেডিয়ামের মূল প্রবেশ মুখেই একাডেমী মাঠ, উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে সেখানে শেখ কামাল স্টেডিয়াম। ২টি মাঠের জন্য পৃথক প্লেয়ার্স লাউঞ্জ। চাইলে স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সে আরো একটি ক্রিকেট মাঠ তৈরি করা যাবে অনায়াসে। তারপরও অনেক জায়গা পড়ে থাকবে ফাঁকা। ভবিষ্যতে ডরমেটরী এবং পরিকল্পিত ক্রিকেট একাডেমী হিসেবে এটিকে তৈরি করতে বিসিবি এবং এনএসসি’র জন্য এই ভেন্যুই হতে পারে আদর্শ প্রকল্প।
একটি ভেন্যুতে বড়জোর ৬টি সেন্টার উইকেট এবং সাত-আটটি প্র্যাকটিস পিচ থাকলেই তা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য যথেষ্ট। অথচ সেখানে কক্সবাজার স্টেডিয়াম কমপ্লেক্স এবং একাডেমী মাঠ মিলিয়ে ৩৬টি পিচ বিদ্যমান! দু’টি মাঠে ৭ এবং ৫টি সেন্টার উইকেটের পাশে ২৪টি প্র্যাকটিস পিচ! যার মধ্যে প্র্যাকটিস গ্রাউন্ডেই ১২টি পিচ! হোম অব ক্রিকেট মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম, ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম এবং চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম মিলেও যে এতো পিচ নেই!
তবে স্টেডিয়ামটি তড়িঘড়ি করে তৈরি করতে যেয়ে একটু ভুল করে ফেলেছে বিসিবি। একাডেমী মাঠের চেয়ে উচ্চতার দিক থেকে মূল মাঠটি অপেক্ষাকৃত নীচু! সহকারী কিউরেটর মুস্তাফিজুরের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২ মাঠের উচ্চতার ব্যবধান ১৭ ইঞ্চি! মাঠের উচ্চতা কম হওয়ায় পানির স্তর মূল মাঠের খুব কাছাকাছি। রাতে পিচ কাভার দিয়ে ঢেকে রেখে সকালে পীচ কভার খুললেই পীচের উপরের স্তরে স্যাঁতস্যাঁতে চিত্র ভেসে ওঠে। সকালে পেস বোলারদের বল সুইং পায় সে কারণেই একটু বেশি। বলের মুভমেন্টও সকালে থাকে যথেষ্ট। কিন্তু একাডেমী মাঠে এ ধরনের কোন সমস্যা চোখে পড়েনি মুস্তাফিজুরের। এ কারণেই এই স্টেডিয়ামের চেয়ে পাশের একাডেমী মাঠে খেলা হয় বেশি। আগামী ৩১ জানুয়ারী প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড অজানা, শেখ কামাল স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের মাঠটিও তাই ফেলতে পারে মেহেদী হাসান মিরাজদের ধাঁধায়। তবে সহকারী কিউরেটর মুস্তাফিজ এই মাঠে প্রচুর রান উঠবে বলে আশাবাদীÑ ‘অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের জন্য এই মাঠকে প্রস্তুত করতে অনেক সময় পেয়েছি। যতোটা সম্ভব পরিচর্যা করতে পেরেছি। আশা করছি এখানে প্রত্যাশিত স্কোর হবে।’
স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের মাঠটি বর্তমানে যে উচ্চতায় দাঁড়িয়ে, তার চেয়ে ৪ ফুট উঁচু করলে আর ভাবতে হবে না বিসিবিকে। প্রয়োজন পড়বে না ভু-গর্ভস্থ ড্রেনেজ স্থাপন। কারণ, মাঠের উপরের তো বটেই মাঠের নীচেও বালুতে ভর্তি। প্রকৃতি প্রদত্ত ওয়াটার ফিল্টারের এমন নিশ্চয়তা আছে বলেই প্রয়োজন পড়বে না এখানে ভু-গর্ভস্থ ড্রেনেজ সিস্টেম!
পাশাপাশি ২টি মাঠ বলে এক মাঠের বল যাতে অন্য মাঠে প্রবেশ না করে, সে জন্য ২০ ফুট উঁচু গ্রীল নেট দিয়ে বেস্টনী দিয়েছে এনএসসি। তবে দুর্বল পাইপ দিয়ে বেস্টনী দেয়ায় ওই পাইপগুলো বাঁকা হয়ে গেছে! দৃষ্টি নন্দন স্টেডিয়ামে বাধ্য হয়ে লোহার পাইপগুলোর পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে দেয়া হয়েছে বেস্টনি! দৃষ্টি নন্দন স্টেডিয়ামে এটাই আপাতত: দৃষ্টিকটূ। টিকিটহীন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ শুধু এই স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সে থাকা ২টি মাঠের জন্যই কেবল প্রযোজ্য। একাডেমী মাঠে নেই কোন গ্যালারি, তাই সেখানে ৩শ’ দর্শকের বসার জন্য সামিয়ানা টানিয়ে ৩শ’ চেয়ার হচ্ছে বসানো! বিয়ে-বাড়ি, বিয়ে-বাড়ি আমেজই তাই এই একাডেমী মাঠকে ঘিরে।





















 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধারণা বদলে দেবে যে ভেন্যু

২৯ জানুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ