Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সরকারের ঋণ গ্রহণ বেড়েছে

ব্যাংক খাত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

ঋণ খেলাপি ও ব্যাংক খাতের তারল্য সংকট বছরজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তা সত্তে¡ও এখাত থেকে ঋণ গ্রহণ বেড়ে গেছে সরকারের। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে ৫৬৬ কোটি টাকা বেড়েছে সরকারের মোট ঋণ। গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশের ব্যাংক খাত ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৮৮ হাজার ৮২৪ কোটি টাকা। গত ৩০ জুনে যার পরিমাণ ছিলো ৮৮ হাজার ২৫৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১০ মাসের ব্যবধানে উল্লেখিত খাত থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে ৫৬৬ কোটি টাকা।
৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ৭০ হাজার ১২৯ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছ সরকার। গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এই ঋণের পরিমাণ ছিলো ৬৪ হাজার ৬১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ১০ মাসের ব্যবধানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সরকারে ঋণ বেড়েছে ৫ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নেওয়া ঋণ পুরোটা পরিশোধ না করলেও বাংলাদেশ ব্যাংকে অতিরিক্ত রাখায় সার্বিক ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে সরকারের। আলোচ্য সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের বিপরীতে ৪ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করেছে সরকার। ২০১৮ সালের ৩০ জুলই পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে সরকারের ঋণ ছিণ ২৩ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকা। যা এবছরের এপ্রিল মাস শেষে ছিল ১৮ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে সরকার সবচেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে গভর্নমেন্ট সিকিউরিটিজ ও ট্রেজারি বিল খাতে। সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী এখাতে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। ১০ মাসের ব্যবধানে এর পরিমাণ ৩ হাজার ১১২ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
গত অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে সরকার ৫ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। যেখানে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরে সরকারের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৪২ হাজার ২৯ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে সরকারকে কোনো ঋণই নিতে হয়নি। বরং ওই অর্থবছরে আগের বাকি থাকা ১৮ হাজার ২৯ কোটি টাকা পরিশোধ করতে সক্ষম হয়েছিলো সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রকৃতপক্ষে সরকারের যে পরিমাণ ব্যয় বেড়ে গেছে সেই হারে আয় বাড়েনি। এতেই সা¤প্রতিক সময়ে সরকারের ব্যয় মেটাতে গিয়ে আর্থিক ব্যবস্থাপনা বেশ চাপে পড়েছে। যার ফলে ঋণ গ্রহণ বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সরকারের রাজস্ব আদায় কমে যাওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক অনুদানও কমে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে বড় বড় শিল্পগ্রুপ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা ফেরত দিচ্ছে না, এতে ব্যাংকের ঋণ আদায় কমে গেছে। সামগ্রিক খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ ব্যাংকই নগদ টাকার সঙ্কটে রয়েছে। এতে ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তহবিল কমে গেছে। বছরখানেক আগেও যেখানে উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল সোয়া লাখ কোটি টাকা, সেটি এখন কমে নেমেছে ৭৫ হাজার কোটি টাকায়। যার বেশির ভাগই সরকারি কোষাগারে ট্রেজারি বিল ও বন্ড আকারে রয়েছে।
অন্যদিকে প্রত্যাশা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না সরকারের। জাতীয় রাজস্ব বোডর্ (এনবিআর) সূত্রে জানা যায়, চলতি অথর্বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২৩ হাজার কোটি টাকা কম ছিল রাজস্ব আদায়। ডিসেম্বরের তথ্য আরও হতাশাজনক। জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ে ২৯ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে ছিল এনবিআর।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ