Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া

ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবীদের মানবিক সহায়তার দাবী

কক্সবাজার ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৯, ৭:১৩ পিএম

মৎস্য ভান্ডার রক্ষায় বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিনের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞায় মৎস্য ব্যবসায়ীদের মাঝে দেখা দিয়েছে বিরোপ প্রতিক্রিয়া। দাবী উঠেছে
নিষেদ্ধাজ্ঞার সময়ে মৎসজীবীদের মানবিক সহায়তা দেয়ার।

বঙ্গোপসাগরে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। ইলিশের জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সফলতাকে অনুসরণ করে মৎস্যসহ মূল্যবান প্রাণিজ সম্পদের ভান্ডারের সুরক্ষায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তবে এর সুুুুফল কুফল দুইটা নিয়েই ভাবছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি চিংড়ি, কাঁকড়ার মতো ক্রাস্টেশান আহরণও রয়েছে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায়। ঈদকে সামনে রেখে সমুদ্রে মৎস্য আহরণ নিষেধাজ্ঞার ফলে মাঝি-মাল্লারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান মৎস্যজীবীরা।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিচালিত গবেষণা থেকে জানাগেছে, মে মাসের শেষের দিক থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে বিচরণরত মাছসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণির প্রজননকাল। একারণেই সাগরের মৎস্যসহ বিভিন্ন মূল্যবান প্রাণিজ সম্পদ রক্ষার পাশাপাশি তা বৃদ্ধিতে দীর্ঘসময় মাছ আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সরকার।

এরই আলোকে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের পাশাপাশি নদীর মোহনাও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। যার কারনে সাগরে মাছ ধরারত সকল ফিশিং ট্রলার কক্সবাজারের উপকূলে ফিরে এসেছে।

এদিকে রমজানের পাশাপাশি ঈদকে সামনে রেখে সমুদ্রে মৎস্য আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞার ফলে ক্ষতির সম্মূখীন হচ্ছেন মৎস্যজীবীরা। এনিয়ে কক্সবাজার সহ গোটা বঙ্গোপসাগর উপকূলে দেখাদিয়েছে বিরোপ প্রতিক্রিয়া।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, আগে সমুদ্রে বিভিন্ন প্রকার বড়বড় মাছ পাওয়া যেত। যা এখন পাওয়া যায়না। এসব মাছের প্রজনন সময় শুরু হয়েছে। তাই ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন ঘাটে গিয়ে মৎস্য অফিসের কর্মকর্তারা সচেতনতামূলক অভিযান চালাবেন বলেও জানান তিনি।

নৌ-বাহিনী এবং কোস্টগার্ড সদস্যদের সহায়তায় মাঝ সাগরেও অভিযান পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি পরিচালনা করা হবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। যার মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞাকালে বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণে যাওয়া ট্রলারগুলো জব্দ করা ছাড়াও মাঝি-মাল্লাদের প্রেরণ করা হবে
কারাগারে।
জানাগেছে, অদূর ভবিষ্যতে বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণের উপর নিষেধাজ্ঞার মেয়াদকাল ৬ মাস পর্যন্ত গড়াতে পারে। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণের পেশায় নিয়োজিত মাঝি-মাল্লারা বছরে ৬ মাস মাছ ধরতে পারবেন। এতে করে মাছের বাজারে বড় ধরণের ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছ।

মৎস্য সম্পদের ভান্ডার রক্ষায় সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও বিপরীত অবস্থানে রয়েছেন মাছ ব্যবসার সাথে সম্পৃক্তরা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এতে করে দেশের সামুদ্রিক সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশের ট্রলার সাগরে যেতে না পারলেও মৎস্য সম্পদ রক্ষা করা যাবে না। কারণ, পাশ্ববর্তি রাষ্ট্র মিয়ানমার, ভারত, থাইল্যান্ড এবং শ্রীলংকার ট্রলারগুলো বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে এদেশের মৎস্য সম্পদ লুট করে নিয়ে যাবে। যা সরকারের পক্ষে রোধ করা সম্ভব হবে না। এ কারণে এই নিষেধাজ্ঞা শুধু বাংলাদেশের মৎস্য ব্যবসায়ীসহ এর সাথে সম্পৃক্ত মাঝি-মাল্লা থেকে শুরু করে অন্যদের ক্ষতির কারণ হবে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস.এম. খালেকুজ্জামান বলেন, ইলিশের জাটকা নিধনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর যেভাবে সফলতা এসেছে। এই ৬৫ দিনের অভিযানেও সেভাবেই সফলতা আসবে। প্রয়োজনে নৌ-বাহিনী এবং কোস্টগার্ডের সহায়তায় মাঝ সাগরে অভিযান পরিচালনা করে সফলতা নিশ্চিত করা হবে।

নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানিয়ে দিতে জেলাব্যাপী ব্যাপক প্রচার চালাচ্ছে জেলা মৎস্য অফিস। গত দুই দিন ধরে চালানো হচ্ছে মাইকিং। পাশাপাশি বিলি করা হচ্ছে গেজেটের ফটোস্ট্যাট কপি। যাতে মাঝি-মাল্লাসহ বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণে নিয়োজিতরা নিষেধাজ্ঞার খবর জানতে পারেন।
নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে গত ১২ মে জরুরী বৈঠক করে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা ছাড়াও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় যে কোন ভাবে বঙ্গোপসাগরে মৎস্যসহ প্রাণিজ সম্পদ রক্ষায় সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকরে পদক্ষেপ গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদসহ আরো কয়েকজন নেতা বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুটি দিকই রয়েছে। সাধারণত এই সময়ে সাগরে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সম্ভাবনা থাকে। যাতে মাছ আহরণরত ট্রলারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কিন্তু এই পেশার সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জেলার ১০ লাখ মানুষ সম্পৃক্ত। দীর্ঘদিন মাছ আহরণ বন্ধ থাকলে তাঁদের বিকল্প পেশা বেছে নিতে হবে। হঠাৎ করে যা সম্ভব নয়। ইতঃপূর্বে বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণ করা অবস্থায় শ্রীলঙ্কা, ভারত, মিয়ানমার এবং থাইল্যান্ডের ট্রলার জব্দ করা হয়েছিলো। ফলে দেশগুলোর মাছ ব্যবসায়ীরা যে আমাদের মৎস্য ভান্ডারপ হানা দেবে না তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এটি প্রতিরোধ করা না গেলে এই নিষেধাজ্ঞায় কোন সুফল বয়ে আসবেনা।

সাগরে মূল্যবান মৎস্য সম্পদ ভান্ডারের সুরক্ষায় সরকারের সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ফলপ্রসু। তবে জেলায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ মৎস্য সেক্টরে জড়িত রয়েছে। দুই মাসের অধিক সময় ধরে বেকার হয়ে পড়া জেলেদের জন্য রেশনিং সহ সহায়তার দাবী জানান জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির এই নেতারা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যজীবী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ