Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভবদহে অপরিকল্পিত মৎস্য খামার

আগাম পানিবদ্ধতার শঙ্কা

অভয়নগর (যশোর) থেকে নজরুল ইসলাম মল্লিক | প্রকাশের সময় : ২৭ মে, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

অসংখ্য মৎস্য খামার গড়ে ওঠার কারণে আগাম পানিবদ্ধতার শঙ্কা দেখা দিয়েছে ভবদহ এলাকায়। যশোর অভয়নগরের ভবদহ এলাকায় নদী-নালা ও খাল দখল করে মৎস্য খামার করার ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার কয়েকজন সুবিধাভোগী গোটা এলাকাবাসীকে জিম্মি করে ফেলেছে।
অভিযোগে জানা যায়, ভবদহের শ্রীহরি নদীর ভাটিতে পলি জমে নদীর নাব্যতা হারানোর ফলে প্রতিবছর ব্যাপক এলাকা পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জোয়ার চলাকালীন নদীতে পানি রেড়ে যায়। জোয়ার শেষে পলি ফেলে পানি নেমে যায়। ফলে পলি জমে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যায়। এ ছাড়া নদী-নালা ও খালের স্বাভাবিক পানিপ্রবাহে রয়েছে প্রভাবশালীদের কালো থাবা। এসব অবৈধ দখলদাররা নদী-নালা ও খালে গড়ে তুলছে মৎস্য খামার। এর বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন এলাকাবাসী।
প্রতিবছর লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে নদী খনন করে যে সামান্য নাব্যতা ফিরে পায় তা ম্লান হচ্ছে অপরিকল্পিত মৎস্য খামারের কারণে। শ্রীহরি নদীর উজানে ও ভাটিতে একাধিক স্থানে নদীর জমি দখল করে স্থাপনা ও মৎস্য খামার গড়ে ওঠেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডুমুরিয়া এলাকায় হরি নদী দখল করে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। অভয়নগরের টেকার ঘাটে নদী দখল করে গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া অসংখ্য স্থানে রয়েছে মাছের খামার। এক বিল থেকে অন্য বিলে পানি নিস্কাশনের যে সমস্ত খাল রয়েছে তার অধিকাংশ দখল করে মাছের খামার গড়ে উঠেছে। উঁচু বিল থেকে নিচু বিলে পানি প্রবাহের যে সব দাঁড়িয়া রয়েছে তা দখল হয়ে গেছে। ফলে একটু বৃষ্টি হলে সৃষ্টি হচ্ছে আগাম জলাবদ্ধতা।
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রেমবাগ ও সুন্দলী ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি বিলের পানি নিষ্কাশনের খাল ও পানি প্রবাহের দাঁড়িয়া দখল করে ডুমুরতলা এলাকায় কয়েকটি মাছের খামার গড়ে উঠেছে। উপজেলার সরখোলা গ্রামের জনৈক এক ব্যক্তি পানি প্রবাহের দাঁড়িয়া দখল করে মৎস্য খামার করে সম্পূর্ণ পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। নওয়াপাড়া-মশিয়াহাটি সড়কের ডুমুরতলা এলাকায় অবস্থিত তিনটি কালভার্ট অপরিকল্পিত মাছের খামার করার কারণে অচল হয়ে গেছে। খাল ও দাঁড়িয়া দখল করার কারণে কালভার্ট দিয়ে পানি প্রবাহিত হয় না। স্থানীয় একজন খামারী কালভার্টের মুখ বালির বস্তা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে ধোপাদি গ্রামের বিল গান্ধীমারা সারা বছর জলামগ্ন থাকে। বিপাকে পড়েছে ওই বিলের চাষিরা। তারা কোন ফসল ফলাতে পারছেন না ওই সব সুবিধাভোগী মৎস্য চাষিদের কারণে। আবার মাছের খামারে ধান চাষ করার চুক্তি থাকলেও তা মানছেন না মৎস্য খামারীরা।
ধোপাদি গ্রামের ইজাহার আলী বিশ্বাস ও আলেক সরদার জানান, পানি প্রবাহের দাঁড়িয়া দখল করে মাছের ঘের করার কারণে তাদের বিলের পানি নিষ্কাশন হয় না। তারা বিলে ধান চাষ করতে পারেন না। অনেক ঘের মালিক আছে যারা জমির হারির টাকা সময় মতো দেয় না। এতে জমির মালিকের সাথে তাদের ঝগড়া-বিবাদ হয়। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রণজিত কুমার বাওয়ালী জানান, অজ্ঞাত কারণে ভবদহ এলাকায় জোঁয়ারাধার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য খামার গড়ে ওঠার কারণে বিলের পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। বিল গান্ধীমারায় সারা বছর পানি জমে থাকে। চাষিরা ফসল ফলাতে পারছেন না। তিনি ওই সব অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে পানি প্রবাহের গতি সচল করার জন্য প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ