Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মালয়েশিয়ায় বৈধতা লাভের আশায় বাংলাদেশিরা

পুত্রাজয়ায় সচিব পর্যায়ে বৈঠক আজ

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৯ মে, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় বৈধতা লাভের জন্য হাজার হাজার অবৈধ বাংলাদেশি কর্মী প্রহর গুণছে। দীর্ঘদিন জনশক্তি রফতানি বন্ধ থাকায় জীবন-জীবিকার তাগিদে এসব অবৈধ কর্মী মালয়েশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে পালিয়ে পালিয়ে কাজ করছে। আসন্ন ঈদের পর মালয় ইমিগ্রেশন পুলিশ অবৈধ অভিবাসীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে। এতে অবৈধ কর্মীরা চরম উৎকণ্ঠায় রয়েছে। দেশটির বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পেও বিপুলসংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশি চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। আইনি সহায়তার অভাবে এসব কর্মী দেশে ফিরতে পারছে না।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সংকট উত্তরণে আগামী ২৯-৩০ মে মালয়েশিয়ার পুত্রাজয়ায় দুই দেশের সচিব পর্যায়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছেন, আসন্ন জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের পর মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির দুয়ার খুলবে। স¤প্রতি দেশটির ইমিগ্রেশনের প্রধানের হুঁশিয়ারিতে অবৈধ প্রবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইমিগ্রেশন প্রধান বলেছেন, ঈদের পর বিদেশি কর্মীদের ভিসার বিষয়ে ব্যাপক তল্লাশি করা হবে। এতে যাদের ভিসা নেই তারা গ্রেফতার হবেন এবং শাস্তির আওতায় আসবেন। এতে করে বাংলাদেশি অবৈধ কর্মীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কুয়ালালামপুর থেকে ভেস্ট-মার্কেটিং এসডিএন-বিএইচডি’র পরিচালক রুহুল আমিন এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, বিগত দু’বছরে মালয়েশিয়ার সরকারের সাধারণ ক্ষমার আওতায় বিপুলসংখ্যাক অবৈধ বাংলাদেশি কর্মী বৈধতা লাভের সুযোগ পেয়েছে। মাইজি কোম্পানী ও এক শ্রেণীর দালালের খপ্পরে পড়ে কয়েক লাখ অবৈধ কর্মী জনপ্রতি ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার রিংগিট দিয়েও এখনো বৈধতা লাভের সুযোগ পায়নি। মালয় পুলিশি অভিযানের খবরে এসব অবৈধ কর্মীরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই অবৈধ কর্মীদের অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছে। তবে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে ঝুঁকি নিয়ে তাদের কাজে যেতেই হচ্ছে।
উল্লেখ্য, জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ শুরু হলে এক পর্যায়ে দশ সিন্ডিকেট এবং অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ড. মাহাথির মোহাম্মদ সরকার তা স্থগিত করেন। তারা ঘোষণা দেন সমগ্র প্রক্রিয়াটি মূল্যায়ন করে একক এবং কর্মী নিয়োগের মানসম্মত প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হবে।
জানা গেছে, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে জনপ্রতি সাড়ে তিন লাখ টাকা থেকে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে দশ সিন্ডিকেট চক্র। অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ, কর্মীদের বিভ্রান্ত করা, কাজ ও বেতন সম্পর্কে ভুল ধারণা দেয়া, মধ্য পর্যায়ে দালালি ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী মালয়েশিয়া মানব পাচারজনিত হুমকির মুখে রয়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য দেশটির সরকার লেবার সোর্স কান্ট্রির সহযোগিতা চেয়েছে।
মালয়েশিয়ার মানব সম্পদমন্ত্রী কুলেসগারান ইতিপূর্বে বলেছেন, সহজ শর্তে কোম্পানি কর্মী প্রতিস্থাপনের সুযোগ পাবে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন এ সুযোগ দিলে অনেক অবৈধ কর্মী বৈধ হতে পারবেন।
এদিকে, আগামী ২৯ ও ৩০ মে-এর সচিব পর্যায়ের বৈঠককে ঘিরে সুন্দর এক আগামীর প্রত্যাশা করছেন অবৈধ কর্মীরা। বৈঠকে সহজে নিজ দেশে ফিরে যাওয়া বা বৈধ হবার সুযোগ মিলবে এমনটাই আশা তাদের। বিগত দুটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় মালয়েশিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীদের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।
উল্লেখ্য, কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়া সরকারের দেয়া সুযোগ ইতোমধ্যে অনেকেই কাজে লাগিয়েছেন। প্রায় দেড় লাখের মতো অবৈধ কর্মী এই সুযোগ নিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে এখনও অবৈধ অবস্থায় দেশটিতে রয়েছেন। প্রতারিত হওয়া এবং সরল বিশ্বাসে অর্থ দিয়ে নাম লেখানোর পরও অনেকেই বৈধ হতে পারেনি। উল্লেখ্য, হাইকমিশন সে দেশের সরকারকে বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে বিবেচনার জন্য অনুরোধ করেছে।
অতিস¤প্রতি প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমেদ মালয়েশিয়া সফরকালে সে দেশের মানবসম্পদ মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং দেশটির ক্ষমতাসীন জোটের নেতা ও সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এখন উভয় দেশের বৈঠকে কতটা সুবিধা আদায় হয় সবাই সেদিকে নজর রেখেছে। এছাড়া বাংলাদেশি কর্মীদের সঙ্গে মধ্যস্বত্বভোগী চক্র বিরাট প্রতারণা করেছে বলে বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছে। হাইকমিশন ওই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দেশটির পুলিশ বিভাগকে অনুরোধ করেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন প্রতারককে গ্রেফতারও করছে দেশটির অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মালয়েশিয়া

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ