Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

দক্ষিনাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যাবস্থা উন্নয়নে ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে সেতু ও মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৯, ১১:১৪ এএম

আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে বরিশালÑখুলনা এবং বরিশালÑপটুয়াখালীÑকুয়াকাটা মহাসড়কে দুটি সেতু সহ আরো প্রায় ৫শতাধিক কোটি টাকায় দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক সহ জেলা সংযোগ সড়কের মান উন্নয়ন কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। পায়রা ও বেকুঠিয়া সেতু নির্মান সহ এসব সড়কসমুহের উন্নয়ন সম্পন্ন হলে দক্ষিনাঞ্চলের সড়ক পরিবহনে নতুন দিগন্তের উন্মোচন ঘটবে। তবে বরিশালÑফরিদপুর জাতীয় মহাসড়কটি ৪লেনে উন্নীতকরন প্রকল্পটি এখনো যথেষ্ঠ অন্ধকারে। প্রকল্পটির জন্য এখনো দাতা যোগাড় হয়নি। অথচ বরিশাল সহ সমগ্র দক্ষিনাঞ্চল এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরের জন্য এ মহাসড়কটি চার লেনে উন্নতি করনের কোন বিকল্প নেই। এমনকি ‘বরিশাল বাইপাস সড়ক প্রকল্প’টি নিয়েও তেমন কোন অগ্রগতি নেই। জনগুরুত্বপূর্ণ এসব সড়ক প্রকল্প নিয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহল মহল।

কুয়েত উন্নয়ন তহবিলে বরিশালÑপটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর প্রায় দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ৪লেনের সেতুটির নির্মানকাজ প্রায় ৫০ভাগ স¤পন্ন হয়েছে। ২০২০-এর ডিসেম্বরের মধ্যে লেবুখালীতে ‘পায়রা সেতু’টি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার লক্ষ রয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের। পায়রা সেতু নির্মিত হলে কুয়াকাটা ছাড়াও পটুয়াখালী এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর সহ কুয়াকাটার সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ নির্বিঘœ হবে। রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বেশীরভাগ এলাকা থেকে কুয়াকাটা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে পৌছতে আর কোন ফেরি থাকবে না।

অপরদিকে চীনা অনুদানে বরিশাল-ঝালকাঠী-পিরোজপুর-বাগেরহাট-মোংলা-খুলনা মহাসড়কের বেকুঠিয়াতে কঁচা নদীর ওপর প্রায় ৯শ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশÑচীন ৮ম মৈত্রী সেতু’র নির্মান কাজও এগিয়ে চলেছে। ১ হাজার ৪৯৫ মিটার দীর্ঘ এসেতুটি নির্মিত হলে তা শুধু বরিশাল-ঝালকাঠীই নয় চট্টগ্রাম-লক্ষ্মীপুর ও ভোলার সাথেও বরিশাল ও খুলনা বিভাগ এবং বেনাপোল সহ ভোমড়া স্থল বন্দরের সড়ক যোগাযোগকে সহজতর করবে। চীনা অনুদানে বেকুঠিয়াতে ‘৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুটির নির্মান কাজ ২০২১-এর জুন থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে।

বরিশাল মহানগরী থেকে লাহারহাট হয়ে ভোলা এবং লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার দীর্ঘ জাতীয় মহাসড়কটি ৩০ফুট প্রসস্ত করে আরো অধিক ভার বহনক্ষম পর্যায় উন্নীত করনে ৩১২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেক-এর অনুমোদন লাভ করেছে গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। আগামী অর্থ বছরে এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কাজ শুরু হয়ে তা ২০২১-এর জুনের মধ্যে শেষ হবে।

প্রায় ১২১ কোটি টাকার দেশীয় তহবিলে ফরিদপুরÑবরিশালÑপটুয়াখালী জাতীয় মহাসড়কের বরিশাল অংশের ৬০কিলোমিটার মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে সম্প্রতি। সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয় ইতোমধ্যে পটুয়াখালীÑবরিশালÑফরিদপুর জাতীয় মহাসড়কের লেবুখালী থেকে বরিশাল মহানগরী হয়ে ভুরঘাটা পর্যন্ত ৬০কিলোমিটার মহাসড়ক ১৮ফুট থেকে ২৪ফুট প্রসস্ততায় উন্নীতকরনের পাশাপাশি মহাসড়কটির ওভার-লে কাজ সম্পন্ন করেছে। ঐ মহাসড়কের বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু ও মেজর জলিল সেতুর ১২কিলোমিটার সংযোগ সড়কে ‘ডিবিএসটি’ করে তা আরো টেকসই করা হয়েছে। এছাড়াও দুটি কালভার্টের নির্মান কাজও শেষ হয়েছে অতি সম্প্রতি। এসব খাতে দেশীয় তহবিল থেকে ব্যায় হয়েছে প্রায় ১২১কোটি টাকা।

অপরদিকে ‘আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথ প্রসস্ততায় উন্নীতকরন প্রকল্প’এর আওতায় বরিশাল-ঝালকাঠীÑপিরোজপুরÑখুলনা মহাসড়কের বিভিন্ন অংশের উন্নয়ন কাজও এগিয়ে চলছে। একই সাথে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থেকে মঠবাড়িয়া হয়ে বরগুনার পাথরঘাটা পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কটিকে ১৮ফুট প্রসস্ততায় উন্নীত করার পাশাপাশি তার বহন ক্ষমতাও বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এসব খাতে ব্যয়ে হচ্ছে প্রায় দুশ কোটি টাকা।

বরিশাল মহানগরীর রূপাতলী মিনিবাস টার্মিনাল থেকে ঝালকাঠী জেলা সীমান্ত পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার অংশের প্রসস্ততা বৃদ্ধি সহ মান উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে ২৬কোটি টাকা। বরিশাল সীমান্ত থেকে ঝালকাঠী শহরের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার মহাসড়ক উন্নয়ন ও প্রসস্ততা ২৪ ফুটে উন্নীতকরনে ব্যয় হচ্ছে আরো ২৬ কোটি টাকা। ঝালকাঠী জিরো পয়েন্ট থেকে রাজাপুর হয়ে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া পর্যন্ত ১৮কিলোমিটার অংশ মহাসড়কটির উন্নয়নে ব্যয় হচ্ছে ৫৭কোটি টাকা।

অপরদিকে ভান্ডারিয়া থেকে চরখালী ফেরি ঘাট হয়ে পিরোজপুর শহরের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার মহাসড়ক উন্নয়নেও প্রায় ৬৮কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। ভান্ডারিয়া থেকে মঠবাড়িয়া হয়ে বরগুনার পাথরঘাটা পর্যন্ত প্রায় ৩০কিলোমিটার মহাসড়ক ১৮ ফুটে প্রসস্ত করার পাশাপাশি বহন ক্ষমতা উন্নয়নে প্রায় ৫৮কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সড়ক অধিদপ্তর। এসব সড়কসমুহের উন্নয়ন শেষ হলে সাগর পাড়ের পাথরঘাটা থেকে বরিশালÑমাওয়া হয়ে রাজধানী ঢাকা পৌছতে সময় লাগবে ১২ থেকে ১৪ঘন্টা। তবে পদ্মা সেতু নির্মিত হলে এসময় আরো অন্তত দু ঘন্টা হ্রাস পাবে। আগামী ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে এসব সড়ক-মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হবে বলে বরিশাল সড়ক জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সহ সংশ্লিষ্ট সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীগন জানিয়েছেন।

এদিকে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল-গোপালগঞ্জ-খুলনা মহাসড়কের আগৈলঝাড়া বাইপাস সহ এর সংযোগ সড়কের প্রসস্ত এবং মান উন্নয়নের কাজও শেষ করেছে বরিশাল সড়ক বিভাগ। এরফলে বরিশাল থেকে কোন ধরনের ফেরি পারাপার ছাড়াই খুলনা বিভাগীয় সদর সহ সন্নিহিত এলাকা এবং গোপালগঞ্জের সাথে দক্ষিনাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ আরো সহজতর হয়েছে।

দক্ষিণাঞ্চলের দুটি জনগুরুত্বপূর্ণ সেতু সহ এসব মহাসড়কের মান উন্নয়ন এবং প্রসস্তকরনের ফলে একসময়ে নদ-নদীবহুল দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন আসবে। যোগাযোগ ব্যাবস্থা হবে দ্রুততর ও টেকশই। এমনকি বরিশালÑভোলা-লক্ষ্মীপুর মহাসড়কটির উন্নয়নের পাশাপাশি ভোলাÑলক্ষ্মীপুর ও ভোলাÑবরিশালের মধ্যবর্তি ফেরি সার্ভিসের উন্নয়ন সম্ভব হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর যানবাহনের চাপ বহুলাংশে হ্রাস পাবে বলেও আশা করছেন ওয়াকিবাহল মহল। ভোলা ও বরিশালের মধ্যবর্তি তেতুলিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মানের সম্ভাব্যতা সমিক্ষা ও নকশা প্রনয়ন করছে সেতু কতৃপক্ষ। দাতা পাওয়া গেলে যত দ্রুত সম্ভব এখানে সেতু নির্মানের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে এ সেতু নির্মানের ঘোষনাও দিয়েছেন। এরফলে চট্টগ্রাম বন্দর সহ ঐ অঞ্চলের সাথে বরিশাল ও খুলনা বিভাগ এবং বেনাপোল ও ভোমড়া স্থল বন্দরের সড়কপথে দুরত্ব অর্ধেকেরও বেশী হ্রাস পাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ