Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বৃষ্টি ও যানজটের ভোগান্তিতে নগরবাসী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ জুন, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

বৃষ্টি ও যানজটের ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। গত শুক্রবার সন্ধ্যা ও ভোররাতের বৃষ্টিতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে যায়। শহরের প্রধান সড়কগুলোসহ পাড়ামহল্লার অলিগলির রাস্তাঘাটে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে ছুটির দিনেও রাজধানী জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজটের। দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আর মাত্র তিনদিন বাকি। গত শুক্রবার থেকেই ঈদের টানা নয় দিনের ছুটি শুরু হয়ে গেছে। যে কারণে গতকাল শনিবারও ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের তোড়জোড় ছিল অনেকটাই চোখে পড়ার মতো। সকাল থেকেই ঢাকা শহরে প্রধান প্রধান সড়কগুলোসহ অলিগলির রাস্তাগুলোতেও সৃষ্টি হয় তিব্র যানজটের। গতকাল সরকারি ছুটির দিন থাকলেও বেসরকারি অফিস ও গার্মেন্টসগামী মানুষের সাথে যোগ হয় ঘরে ফেরা ও ঈদের কেনাকাটা করতে বের হওয়া মানুষের শ্রোত। এতে গতকাল সকাল থেকেই মানুষ রাস্তায় নেমে পড়ে চরম দুর্ভোগে। যানজটো কারণে গাড়ি রাস্তায় আটকে যাওয়ায় একদিকে রাস্তায় যানজট অন্যদিকে পরিবহন সঙ্কটে পড়ে নগরবাসী। মাঝে মধ্যে দুয়েকটি পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত ভাড়া গোনতে হয় যাত্রিদের। মাত্র দেড়-দুই কিলোমিটার পথ যেতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে রাস্তায়। আবার অনেকেই পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।

শুক্রবারের বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে রাস্তায় পানি জমে থাকায় গাড়ির ইঞ্জিনে পানি ঢুকে অচল হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। রাজধানীর কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, টাউন হল, আসাদ গেট, ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার, গুলশান, বনানী, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর, নয়াপল্টন, কাকরাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে পানিবদ্ধতা। বৃষ্টির কারণে বিশেষ করে ঢাকা শহরের ফুটপাতের ক্রেতা বিক্রেতারা পড়ে দুর্ভোগে। আর কয়েকদিন পরেই ঈদ। তাই বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বড় বড় মার্কেট, বিপণিবিতান, ফ্যাশন হাউস ও শপিংমলগুলোতে ক্রেতার ভিড় থাকলেও ফুটপাত তেমন একটা জমেনি।

রাজধানীর বিপনী বিতান, মার্কেট ও ফুটপাতে এখন চলছে ঈদ কেনাকাটা। যে কারণে বিপনী বিতান ও মাকেট কেন্দ্রীক এলাকাতে সকাল থেকেই সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজটের। আর ফুটপাতসহ রাস্তার বেশিরভাগ অংশ এখন হকারদের দখলে। এতে রাস্তায় গাড়িতো দুরের কাথা পায়েও হাটা যাচ্ছে না। রাজধানীতে প্রবেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পথ যাত্রবাড়ী-সায়েদাবাদে যেমন চরম দুর্ভোগ নিত্যদিনের ঘটনা তেমনি গতকাল নগরের অন্যান্য সড়কগুলোতেও তীব্র যানজটে পড়ে হাজার হাজার যানবাহন। এছাড়া পশ্চিমে গাবতলী, উত্তরে এয়ারপোর্ট রোড দিয়ে ঢাকায় প্রবেশের সময় তীব্র যানজটে পড়ে হাজার হাজার যানবাহন। মহাখালী, মগবাজার, মালিবাগ এলাকায়ও একই অবস্থা।

ঈদের প্রায় শেষ মুহূর্তের এই দিনটিতে কর্মজীবী মানুষের ঈদ কেনাকাটার জন্য নির্ধারিত থাকে। দুপুরের পর অনেকেই পরিবার পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে পছন্দের পণ্যের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন। আবার কেউ বের হন ইফতারের পর। ফলে নগরীর বিপনী বিতান এলাকাগুলোতে দেখা যায় ভয়াবহ যানজট।

রিকশা, সিএনজি, মোটর সাইকেল ও বাসের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে বের হন অনেকেই। এতেই সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। ঘর থেকে বের হওয়ার পর থেকেই এই যানজট মোকাবেলা করতে হয় সাধারণ মানুষকে। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরেও ট্রাফিক সিগনালগুলো অতিক্রম করা যায় না। এ নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন অনেকেই। যানজট নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন ট্রাফিক সিগনালগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশও দেখা গেছে।

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বড় বড় মার্কেট সংলগ্ন সড়কে তীব্র যানজট লক্ষ করা গেছে। ফলে ছুটির দিন ছাড়া যেমন যানজট, ছুটির দিনেও তেমন যানজট। এদিনেও মার্কেট করতে এসে নগরবাসীকে বেগ পেতে হয়েছে। আবার শুক্রবারের বৃষ্টিতে কোথাও কোথাও পানি জমে থাকার কারণে সড়কগুলোতে কাদা-মাটি মিশে একাকার অবস্থা হয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগ বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।

শনিবার পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি, নয়াপল্টনের পলওয়েল সুপার মার্কেট, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, গুলিস্তান সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, বঙ্গবাজার, পোড়া মার্কেট, বায়তুল মোকাররম, নিউ বঙ্গবাজার, মালিবাগ ও মৌচাকের টুইন টাওয়ার, হোসাফ শপিং সেন্টার, রাপা প্লাজা, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, রাজধানী সুপার মার্কেট, যমুনা ফিউচার পার্ক, ফার্মগেট, মিরপুর, ধানমন্ডি, বারিধারা, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডির সীমান্ত স্কয়ার, নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, হকার্স মার্কেট ও চাঁদনী চক মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়। রাজধানীর পান্থপথের বসুন্ধরা সিটিতে কেনাকাটা করতে আসা মিরপুরের বাসিন্দা আলাউল আমিন শিপন জানান, পছন্দের পোশাক পেয়েছি। এতে ভালো লাগছে। তবে রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম এতেই নতুন পোশাকের আনন্দ মাটি।

শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট সংলগ্ন সড়কেও যানজট দেখা গেছে। পাঞ্জাবির জন্য বিখ্যাত এ মার্কেটটিতে ভিড় বাড়ছে ক্রেতাদের। দূর-দুরান্ত থেকেও ক্রেতারা এসেছেন পাঞ্জাবি কিনতে। তাদের সঙ্গে থাকা গাড়ি পার্ক করতে বেগ পেতে দেখা গেছে। মার্কেটটির কোথাও পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় এ ভোগান্তি। ক্রেতারা সবাই ব্যক্তিগত গাড়ি সড়ক এবং ফুটপাতেই রেখে কেনাকাটা করছেন। এমন চিত্র অধিকাংশ মার্কেটেরই। সব স্থলে তীব্র জানজট লক্ষ্য করা গেছে। মার্কেটে পার্কিং না থাকাও শনিবারের ছুটির দিনে নগরে জানজট তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ।

সচিবালয় থেকে মতিঝিল, এবং সচিবালয় হয়ে পুরান ঢাকা এলাকায় যেতে চাইলে রাস্তা যেন আর ফুরাতে চায় না। একই চিত্র মীরপুর ১ নম্বর, মালিবাগ, মগবাজার, শাহজাহানপুর, কাকরাইল, নজিমউদ্দিন রোড, সদরঘাট, চকবাজার, নিউমার্কেট, শাহবাগ, কাঁটাবন, মিটফোর্ড এলাকার। যেখানে রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে নয়াবাজার মোড় পর্যন্ত হেঁটে যেতে সময় লাগে দুই থেকে তিন মিনিট সেখানে গাড়িতে যেতে সময় লাগে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট।

এ বিষয়ে মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, তারা যাত্রীদের সেবার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন। কমিউনিটি পুলিশ ও পাবলিক ওয়ার পুলিশের সঙ্গে কাজ করবে। পুলিশের বক্তব্য হচ্ছে, পুরান ঢাকা ঘনবসতিপূর্ন ও নানা ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে ঠাসা এলাকা। রাস্তার পাশেই তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ক্রেতারা মালামাল কিনে গাড়িতে লোড করেন রাস্তার পাশেই। পুরান ঢাকায় যানজটের এটাও গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বৃষ্টি

৫ অক্টোবর, ২০২২
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ