Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আনন্দে মাতোয়ারা দেশ

ধনী-গরিব সবার ঘরে ঈদ উৎসব

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে খুশি। এগুলো ঈদের ভাবার্থ। মূল শাব্দিক অর্থ হলো বারবার ফিরে আসা। সাম্য আর শান্তির বার্তা নিয়ে প্রতি বছর মুসলমানদের ঘরে হাজির হয় ঈদ। সত্যিই এবার বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঈদুল ফিতর ফিরে এসেছিল আনন্দের বার্তা নিয়ে। এক মাস সিয়াম সাধনার পর ধনী-গরিব সবাই এক সারিতে নামাজ পড়েছেন; অতঃপর ভেদাভেদ ভুলে উদযাপন করেছেন ঈদ। ‘আজ ভুলে যা তোর দোস্ত-দুশমন, হাত মেলাও হাতে/ তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরি’- কাজী নজরুল ইসলামের এই অমিয় বাণীতে একাকার হয়ে যান দেশের মুসলিম সম্প্রদায়।

ঈদের দিন কোথাও বৃষ্টি, কোথাও রোদের মধ্যেই আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে পড়েছিল গোটা দেশ। সকালে ঈদের নামাজের পর মুসলমানদের ঘরে ঘরে ঈদের আনন্দ যেন ধরে না। ঈদের দিন বিকেলে দেশের বিনোদন স্পটগুলো ছিল লোকে লোকারণ্য। শুধু কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ঈদের দিন প্রায় দুই লাখ আবালবৃদ্ধবনিতা সাগরের সূর্যাস্ত উপভোগ করেছে। রাজধানী ঢাকার মিরপুর চিড়িয়াখানা, হাতিরঝিল, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, চট্টগ্রামের ফয়’স লেক, রাজশাহীর পদ্মাপাড়, রাঙ্গামাটিসহ পার্বত্য তিন জেলা, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, দিনাজপুরের ভিন্নজগৎ, নরসিংদীর ড্রিম হলিডে, রংপুরের অন্যজগৎ, গাজীপুরের কালিয়াকৈর বিভিন্ন পিকনিক স্পট ও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, খুলনার সুন্দরবন, ঢাকার দোহারের মৈনটঘাট, শেরপুরে গজনী, নেত্রকোনার বিরিশিরি, বৃহত্তর সিলেটের দর্শনীয় স্থানগুলোসহ সারাদেশের শত শত বিনোদন স্পট ছিল মানুষের পদচারণায় মুখরিত।
এক মাস সিয়াম সাধনার পর শাওয়ালের বাঁকা চাঁদ আকাশে উঁকি দিতেই শহর-বন্দর-গ্রাম-গঞ্জে যেন বেজে ওঠে ঈদ উৎসবের সাইরেন। ছুঁয়ে দেয় দেশের কোটি কোটি মুসলমানের হৃদয়। এক রশিতে আটকে যায় মুসলিম ধর্মাবলম্বী আমির-ফকির, ধনী-গরিব সবার অন্তর। এক সারিতে নামাজ আদায়ের পর সবাই মেতে ওঠেন মহামিলনের আনন্দে। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে রাজধানী ঢাকা থেকে কর্মজীবী মানুষের গ্রামে ফেরার দৃশ্য ছিল চোখে দেখার মতো। বাসে ট্রেনে, স্টিমারে ঠাসা মানুষ ঈদ করার জন্য বাড়ি ফিরেছেন। সন্তানসম্ভবা নারী গ্রামে ঈদ উদযাপন করতে যাওয়ার পথে বাসেই সন্তান প্রসব করেছেন। ঈদকে কেন্দ্র করে বাস-ট্রেন-স্টিমারে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। তবুও ঘরে ফিরে মানুষ মহা উৎসবে মেতে উঠেছে। শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহমদের অনুরোধে ১৯৩১ সালে কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন- ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/ তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ’। বাংলাদেশের মুসলমানদের নিয়ে কবির এ যেন সার্থক উপলব্ধি।

চাঁদ দেখা ইস্যুতে আগের রাতে ঈদের ঘোষণা নিয়ে বিলম্ব হওয়ায় ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ গান রেডিও-টেলিভিশনে প্রচারে বিলম্ব হয়। এই গান শুনতে না পাওয়ায় মানুষ আকুতি-যন্ত্রণায় ছটফট করেন। একে অপরকে ফোন করে খোঁজখবর নেন। গভীর রাতে ঈদের ঘোষণা দেয়ায় কাজী নজরুলের ওই গান বেজে ওঠে; অতঃপর ঘরে ঘরে শুরু হয় ঈদ আনন্দের ঢেউয়ের খেলা।
এ দেশের মানুষ ইসলামী ঐতিহ্য ধারণ করেন। ৯২ ভাগ মুসলমানের এই দেশ ইসলামী সাহিত্যে সমৃদ্ধ। মূলত সাহিত্য জাতির সংস্কৃতি ধারণ করে। কলমের কালিতে উঠে আসে সময়ের মানুষের যাপিত জীবনের নানা অনুষঙ্গ। বাদ পড়েনি ঈদ। দেশের এমন কোনো মুসলিম লেখক-কবি পাওয়া যাবে না, যিনি ঈদ নিয়ে কবিতা-গান লেখেননি। এমনকি অন্য ধর্মের কবিরাও লিখেছেনে ঈদ নিয়ে কবিতা-গল্প। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, প্রাচীন এবং মধ্যযুগীয় সাহিত্যে ঈদের কোনো চাঁদ দেখা যায়নি। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বাংলা সাহিত্যে প্রথম ঈদের চাঁদ দেখা যায়। কবি সৈয়দ এমদাদ আলী ১৯০৩ সালে লেখেন ঈদের প্রথম কবিতা। ‘নবনূর’ ঈদ সংখ্যায় তার ‘ঈদ’ নামের কবিতাটি ছাপা হয়। কবির ভাষায়- ‘কুহেলি তিমির সরায়ে দূরে/ অরুণ তরুণ উঠিয়ে ধীরে/ রাঙিয়া প্রতিটি তরুণ শিরে/ আজ কি হর্ষ ভরে/ আজি প্রভাতের মৃদুল বায়/ রঙে নাচিয়া যেনো কয়ে যায়/ মুসলিম জাহান আজ একতায়/---’। ‘ঈদ আবাহন’ নামে কবি কায়কোবাদ লিখেছেন- ‘আজি এই ঈদের দিনে হয়ে সব এক মনঃপ্রাণ/ জাগায়ে মোমেন সবে গাহ আজি মিলনের গান’। কবি গোলাম মোস্তাফা লিখেছেন- ‘আজ নতুন ঈদের চাঁদ উঠেছে/ নীল আকাশের গায়/ তোরা দেখবি কারা ভাই বোনেরা আয়রে ছুটে আয়।’ কবি সুফিয়া কামাল ‘ঈদের চাঁদ’ কবিতায় লিখেছেন ‘চাঁদ উঠিয়াছে, ঈদের চাঁদ কি উঠেছে শুধায় সবে/ লাখো জনতার আঁখি থির আজি সুদূর সুনীল নভে/ এই ওঠে, ওই উদিল গগনে/ সুন্দর শিশু চাঁদ/ আমিন। আমিন, রাব্বুল আলামিন/ করে সবে মোনাজাত।’ কবি ফররুখ আহমদ ‘আজ ঈদগাহে নেমেছে নতুন দিন/ চিত্তের ধনে সকলে বিত্তবান/ বড় ছোট নাই, ভেদাভেদ নাই কোন/ সকলে সমান-সকলে মহীয়ান।’ এমন শত শত কবিতা লিখেছেন বাংলা ভাষার কবিরা ঈদ নিয়ে।

মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব ঈদ নিয়ে বাংলা ভাষাভাষী কবি-সাহিত্যিকরা এত বিপুলসংখ্যক কবিতা-গান রচনা করেছেন যে, অন্য কোনো ভাষাভাষী কবি-সাহিত্যিক তাদের ধর্মীয় উৎসব নিয়ে এত বেশি লেখালেখি করেছেন বলে জানা যায় না। ঈদকে হৃদয়ে ধারণ করেই কবি-সাহিত্যিকরা তাদের রচনা সমৃদ্ধ করেছেন। কবি কাজী নজরুল ইসলাম তো ঈদ-রমজান নিয়ে কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে এক অনন্য আলোক দ্যুতি ছড়িয়েছেন। মুসলিম সাহিত্যে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টির অন্যতম কারিগর কাজী নজরুল ইসলামী বিষয়কে সাহিত্যিক রূপদানে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাই কৃষকদের ঈদ নিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘জীবন যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিদ/ মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে এসেছে কি আজ ঈদ?’ সার্থক কাজী নজরুল! তিনি প্রায় শত বছর আগে যেন বাংলাদেশের কৃষকদের জীবনচিত্র এঁেক গেছেন। ধানের দাম না পাওয়া কৃষকদের এবারের ঈদ নিয়ে নজরুল যেন প্রায় শত বছর আগে রচনা করে গেছেন। তবে ধানের ন্যায্যমূল্য না পেলেও কৃষকরা নিজেদের মতো করে ঈদ উদযাপন করেছেন। এক মাস রোজার মাধ্যমে সংযম ও ত্যাগের মহান শিক্ষা নিয়ে লাখ লাখ কৃষক সীমিত খরচের মধ্যমেই ঈদ উৎসব পালন করেছেন।

ঈদ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব, তা এবারও দেখা গেছে। যেখানে যে অবস্থায় রয়েছেন সেখানে সেভাবেই ঈদ উদযাপন করেছেন। বাধাবিপত্তি, প্রতিবদ্ধকতা এমনকি কারাগারে যারা রয়েছেন তারাও ঈদের নামাজ আদায় করেন এক সারিতে দাঁড়িয়ে; ঈদের দিন গলাগলি করেছেন, মিষ্টি-ফিরনি-পোলাও খেয়েছেন।
ঈদের আগে বাধাবিপত্তি-ভোগান্তি উপেক্ষা করে মানুষ ঘরে ফিরেছেন; ঈদের দিন সকালে জামাতে নামাজ আদায়ের পর বিকেলে ছেলেমেয়ে নিয়ে ছুটেছেন বিনোদন স্পটে। কেউ গেছেন আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বেড়াতে। ঈদ মানে যে আনন্দ তা দেখা গেছে দেশের নানান আঙ্গিকে গড়ে ওঠা বিনোদন স্পটগুলোর লোক সমাগমের দৃশ্য দেখে। ঈদের দিন এবং ঈদের পরের দুই দিন বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে নেমেছিল মানুষের ঢল। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সমুদ্র সৈকতগুলোর অন্যতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও দেশের অন্যতম পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে দেখা যায় দেশি ও বিদেশি পর্যটকদের ভিড়। সাধারণ মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে দেশের শত শত বিনোদন কেন্দ্র। দিনাজপুরের ভিন্ন জগৎ, চট্টগ্রামের ফয়’স লেক, রাজশাহী শহরের তীরে পদ্মাপাড়, নরসিংদীর ড্রিম হলিডে, মৌলভীবাজারের মাধবকুন্ড, ঢাকার হাতিরঝিল, নন্দনপার্ক, মিরপুর চিড়িয়াখানা, শিশুমেলা, নাটোরের বাগাতিপাড়ার ইউএনও পার্ক, রাঙ্গামাটিসহ পার্বত্য তিন জেলা, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, গাজীপুরের কালিয়াকৈর বিভিন্ন পিকনিক স্পট, ঢাকার দোহারের মৈনটঘাট, সাভারের বিভিন্ন জাতীয় স্মৃতিসৌধে ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। এ ছাড়া রংপুরের বিভিন্ন বিনোদন স্পট, নীলফামারীর ডালিয়ার তিস্তা ব্রিজ, লালমনিরহাটের দহগ্রাম আঙ্গরপোতা, মৌলভীবাজারের বড়লেখা, কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দর, চাঁদপুরের কচুয়ার এশা প্রিতুল পার্ক, বরিশালের গৌরনদীর শাহী পার্ক, ঢাকার বোটানিক্যাল গার্ডেন, টাঙ্গাইলের যমুনা রিসোর্ট, বঙ্গবন্ধু সেতুর পাড়, শেরপুরের গজনী অবকাশ কেন্দ্র, নেত্রকোনার বিরিশিরি, সোমেশ্বর নদীতীর, ডিঙ্গাপোতা হাওরসহ বিভিন্ন জেলার বিনোদন স্পটগুলো বিনোদনপ্রেমীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে।
রাজধানী ঢাকার সাধারণ মানুষ আর মধ্যবিত্তের বিনোদন কেন্দ্র বলতে এখন হাতিরঝিলই প্রধান হয়ে উঠেছে। ঈদ উপলক্ষে সব মানুষের স্রোত তাই সেখানেই। ঈদের দিন সকাল থেকেই সেখানে ভিড় জমায় নানা বয়সের হাজারো মানুষ। ঈদের পরের দুই দিনও একই দৃশ্য। যেদিকে চোখ যায় মানুষ আর মানুষ। ঈদ উপলক্ষে বিনোদনপ্রেমীদের জন্য নতুন সাজে প্রস্তুত করা হয় হাতিরঝিল চক্রাকার বাস, ওয়াটার বাস। নামানো হয়েছে আবার নতুন বোটও। খোলামেলা আর বিস্তৃত পরিচ্ছন্ন বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে এ কেন্দ্রটি বেশি আকর্ষণ করে ঈদমুখর মানুষকে। এবারও ঈদ উপলক্ষে হাতিরঝিলে চলছে ঈদ প্যাকেজ। ৬০ টাকাতেই ওয়াটার বাসে ঘোরা যাচ্ছে গোটা ঝিল। ঈদের দিন বিকেলে দেখা যায় বিভিন্ন বয়সী মানুষ বোটে ঘুরছেন। কেউ বসে গল্প করছেন, কেউ ছবি তুলছেন। সন্ধ্যায় নানা রঙের বাতি দর্শনার্থীদের মন রাঙিয়ে দেয়।

এ দিকে ঈদের দিন থেকেই দর্শণার্থীদের ভিড় জমতে থাকে রাজধানীর মিরপুরের চিড়িয়াখানায়। ঈদের পরের দুই দিনও দেখা গেছে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সকাল থেকেই পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছুটে আসেন নানা বয়সী মানুষ। মেতে ওঠেন আনন্দ আড্ডা আর খুনসুটিতে। ঈদের দ্বিতীয় দিনে চিড়িয়াখানায় প্রায় এক লাখ দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। ঈদের দিনে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৭০ হাজার। অতিরিক্ত মানুষের চাপে চিড়িয়াখানার প্রধান সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। মানুষের ভিড়ে ফুটপাথ দিয়েও হাঁটাচলার সুযোগ নেই। প্রবেশমূল্য ধরা হয়েছে মাথাপিছু ৩০ টাকা। এ হিসেবে ঈদ ও পরদিন মিলে প্রায় অর্ধকোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। চিড়িয়াখানার কিউরেটর এস এম নজরুল ইসলাম জানান, চিড়িয়াখানায় তিল ধারণের জায়গা নেই। প্রতিটি খাঁচার সামনেই উপচে পড়া মানুষের ভিড়। শহরের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকলেও মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে যানবাহনের যানজট লেগে যায়। শুক্রবার জুমার দিন চিড়িয়াখানা মসজিদে পাঁচ হাজারেরও বেশি মুসল্লি নামাজ আদায় করেন।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের অন্যতম কক্সবাজারে ঈদের আগের দিন মঙ্গলবার থেকে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। ঈদকে কেন্দ্র করে মুখরিত হয়ে ওঠে সাগরের পর্যটন স্পটগুলো। নানা বিড়ম্বনা সত্তে¡ও সমুদ্র সৈকতে গিয়ে তাদের মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। সমুদ্রের ঢেউ আর হিমেল বাতাস শত বিড়ম্বনাকে ধুয়ে মুছে সতেজ করে দিয়েছে মানুষের মন। হৈ-হুল্লোড় আর সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে নেচে-গেয়ে দিনরাত আনন্দ-ফুর্তি করে ঈদ আনন্দে মেতে ওঠে ভ্রমণপিপাসুরা। কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, ঈদ উপলক্ষে হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউসসহ কটেজগুলোত কোনো রুম খালি নেই। কারণ এবারে ঈদের ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি যোগ হওয়ায় প্রচুর পর্যটক এসেছে। সমুদ্র সৈকত ছাড়াও জেলার পর্যটন স্পট ডুলাহাজারায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, পাহাড়ি ঝরনা হিমছড়ি, পাথুরে বিচ ইনানী ও রামুর বৌদ্ধপল্লীতেও মানুষের ভিড় জমেছে। মানুষের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে কলাতলী, সি-ইন পয়েন্ট, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, হিমছড়ি, ইনানী ও লাবণী পয়েন্টের সৈকতে ২৪ ঘণ্টা পুলিশ পাহারা থাকছে।

ঈদ উপলক্ষে অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের বেলাভূমি কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত অবলোকন করতে দলবেঁধে আসছেন নানা বয়সী পর্যটক। সমুদ্র সৈকতসহ দর্শনীয় স্পটগুলোতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ঝিনুকের দোকান, খাবার হোটেল, রাখাইন মার্কেট ও শুঁটকি পল্লীতে চলছে বেচাকেনার ধুম। সৈকতের জিরো পয়েন্ট, আন্ধারমানিক মোহনা সংলগ্ন লেম্বুর বন, ঝাউবাগান, গঙ্গামতির লেক, কাউয়ার চরের লাল কাঁকড়ার বিচরণ স্থল, মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির, রাখাইন মহিলা মার্কেট সর্বত্র দর্শনার্থীদের ভিড়। কুয়াকাটা টুরিস্ট পুলিশের ওসি মো. খলিলুর রহমান বলেন, ঈদ উপলক্ষে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমনকে কেন্দ্র করে নিñিদ্র নিরাপত্তায় দর্শনীয় স্পটগুলোতে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। সৈকতে টহল দেয়া হচ্ছে।
ঈদ উপলক্ষে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক ঝরনা ও দ্বিতীয় বৃহত্তম ইকোপার্ক বড়লেখার মাধবকুন্ডে ১০ হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। প্রতিদিন পর্যটকরা ভিড় করছেন মাধবকুন্ড বিনোদন কেন্দ্রে। জলপ্রপাতের পানিতে নানা বয়সী মানুষ সাঁতার কেটছেন। হইচই করেছেন।
চট্টগ্রাম নগরীর ফয়’স লেক ও চিড়িয়াখানায় সবচেয়ে বেশি মানুষ ভিড় করছেন। ফয়’স লেকে পাহাড় আর লেকের যুগল সান্নিধ্যের নৈসর্গিক পরিবেশে শিশুদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রকম রাইড। ঈদ উপলক্ষে আগত মানুষ সি-ওয়ার্ল্ডে স্বচ্ছ নীল পানিতে অবগাহন করছেন। লেকের পাশেই চিড়িয়াখানা। সৈকতেও ভিড় করছেন শত শত নারী-পুরুষ। এছাড়া কাজীর দেউড়ি শিশু পার্ক, কর্ণফুলী শিশু পার্ক, স্বাধীনতা পার্ক ও কর্ণফুলী সেতু এলাকার বিনোদনকেন্দ্র এখন জমজমাট।

ঈদের দিন বিকাল থেকে রোদ-বৃষ্টির মাঝেই রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে বিনোদনপ্রেমী মানুষের ঢল নেমেছে। প্রতিদিন মানুষ ভিড় বাড়ছে। ঈদের দুই দিন পর গতকাল শুক্রবার সকালেও নদীর পাড়ে বিনোদনপ্রেমী মানুষের স্রোত দেখা গেছে। শহর ঘেঁষে বয়ে চলা পদ্মা বিস্তীর্ণ পদ্মাপাড়ে সময় কাটান সাধারণ মানুষ। ঘুরে বেড়ান নৌকায়। নগরীর আই ও টি-বাঁধ, বড়কুঠি, শিমলা পার্ক, পদ্মা গার্ডেনসহ পদ্মাপাড়ের বিভিন্ন বিনোদন ঈদ উপলক্ষে স্পট মানুষের কোলাহলে মুখরিত।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ পর্যটন নগরী ঈদের দিন থেকে প্রতিদিন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন, পানামসিটি, বাংলার তাজমহল, পিরামিড, রয়েল রিসোর্ট পার্ক, জ্যোতি বসুর বাড়ি, কাইকারটেক ব্রিজ, বৈদ্যেরবাজার মেঘনা নদীর ঘাটে পর্যটকদের ভিড় জমে উঠেছে। সোনারগাঁয়ে চলছে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের ঈদ আনন্দ মেলা। নাগরদোলা, বায়স্কোপ ও ইতিহাস-ঐতিহ্য, লোক সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছে। এ ছাড়া বাংলার তাজমহল ও পিরামিডেও উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে।
সারা দেশের অন্য বিনোদন স্পটগুলোতেও দেখা যায় অভিন্ন চিত্র।

ঈদের দিনে মুসলমানদের ঘরে ঘরে এই আনন্দ দেখে নাম না জানা এক কবি লিখেছেন ‘রাগ অনুরাগ যতই থাকুক, হৃদয় যত পাষাণ/ ভাইয়ের সাথে ভাই মিলবে, ভুলে অভিমান/ দ্বীন-দুঃখিনীর মুখে আজ ফুটছে সুখের হাসি/ তাইতো মনে আনন্দ আজ এলো ঈদের খুশি/ ---/ ঈদ মুসলমানের বড়ই খুশির, পবিত্র উৎসব/ আবাল-বৃদ্ধ বাদশা-ফকির, সবার মুখেই রব’। সত্যিই ঈদ আনন্দের বারতা দিয়েই এসেছিল।



 

Show all comments
  • Mirza Anik Hasan ৮ জুন, ২০১৯, ১:০২ এএম says : 0
    ঈদের এই খুশির আমেজে সবার দিনগুলো কাটুক প্রিয়জনদের সাথে ভালোবাসায় ঈদ মোবারক
    Total Reply(0) Reply
  • Salim Surujmiah ৮ জুন, ২০১৯, ১:০২ এএম says : 0
    সবাইকে ঈদ মোবারক
    Total Reply(0) Reply
  • Sujit Debsarma ৮ জুন, ২০১৯, ১:০৩ এএম says : 0
    ঈদ-উল-ফিতরের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Mina Monowara ৮ জুন, ২০১৯, ১:০৩ এএম says : 0
    ঈদ মোবারক। ঈদ বয়ে আনুক সুখ, শান্তি ও ভাতৃত্ব।
    Total Reply(0) Reply
  • Swapan Kumar Ray ৮ জুন, ২০১৯, ১:০৪ এএম says : 0
    খুশির ঈদের দিন / কেমন করে ভুলি / দূরের থেকে হলেও তোমায় / করছি কোলাকুলি।
    Total Reply(0) Reply
  • Swapan Kumar Ray ৮ জুন, ২০১৯, ১:০৬ এএম says : 0
    Eid Mubarak
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঈদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ