Inqilab Logo

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভারতে উপর্যুপরি হামলায় উদ্বিগ্ন অভিবাসী আফ্রিকানরা

প্রকাশের সময় : ৩১ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : গত সপ্তাহে দক্ষিণ দিল্লিতে কঙ্গোর নাগরিক ম্যাসোন্ডা কেটান্ডা অলিভিয়ার (২৯)-কে তিন ব্যক্তি পিটিয়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনা ভারতীয়দের মনোভাবের ব্যাপক পরিবর্তনের পরিচয় বহনের পাশাপাশি ভারতে গভীরভাবে শিকড় গেড়ে থাকা বর্ণ সমস্যার ব্যাপারেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। ছেলের ভারত সফরের ব্যয় বহন করতে ম্যাসোন্ডার পিতা সবকিছু বিক্রি করে দেন। এখন অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স (এআইআইএমএস)-এর হিমঘরে রাখা ছেলের লাশ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি ঋণ করে টাকা যোগাড় করেছেন।
জানা যায়, ২০ মে রাতে ম্যাসোন্ডা বসন্তকুঞ্জের কাছে একটি অটোরিকশা ডাক দেন। তাকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তি বলে তারা সেটি ভাড়া নিয়েছিল। তারা তাকে মারধর করে। এক পর্যায়ে একটি পাথর দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলে সে নিহত হয়। কয়েক মাস আগে বেঙ্গালুরুতে একজন তানজানীয় মহিলাকে উলঙ্গ করে মারধরের পর এ ঘটনা সংঘটিত হলো। যে দেশে সাদা চামড়ার লোকদের কালো চামড়ার লোকদের উপর স্থান দেয়া হয় সে ভারতে আফ্রিকান অভিবাসীদের উপর উপর্যুপরি হামলার ঘটনা ভয়ঙ্করই বটে!
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এ সপ্তাহে বলেন, তিনি তার জুনিয়র মন্ত্রিসভা সহকর্মী জেনারেল (অব.) ভি কে সিংকে রাজধানীতে আফ্রিকার দেশগুলোর মিশন প্রধানদের সাথে সাক্ষাৎ ও তাদের নাগরিকদের রক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য সরকারের অঙ্গীকার বিষয়ে আশ্বস্ত করতে বলেছেন।
অলিভিয়ারের জ্ঞাতি ভাই মাইকেল বলেন, অলিভিয়ার ২০১২ সালে ভারতে এসেছিল এবং একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ফরাসি ভাষা শিক্ষা দিত। সে অত্যন্ত গরিব ঘরের ছেলে। তাই তার ভারতে আসার খরচ যোগাতে তার পিতা নিজের জমি বিক্রি করেন। তার মৃত্যু তার পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। তার লাশ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার মতো অর্থও তার পরিবারের নেই। তাই ভারতে আসার বিমান টিকিট কিনতে তার পিতা ঋণ নিয়েছেন। ৩০ মে তিনি দিল্লি পৌঁছবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মাইলে থাকেন দক্ষিণ দিল্লির কেন্দ্রস্থল ছাতারপুরের রাজপুর খুর্দ গ্রামে। সেখানে ২৬ মে রাতে এক ডজনেরও বেশি আফ্রিকান নারী ও পুরুষের উপর জনতা কয়েক দফা হামলা চালায়।
হামলার শিকাররা জানান, তারা কয়েক বছর ধরে এ এলাকায় বাস করছেন। এটা বর্ণবাদী হামলা। হামলাকারীদের লক্ষ্য ছিল শুধু আফ্রিকানরা। তারা চিৎকার করছিল, আফ্রিকানরা আমাদের দেশ ছাড়।
তবে পুলিশ একে শুধুমাত্র মারামারির ঘটনা বলে আখ্যায়িত করে। তারা জানায়, তদন্ত করে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন গভীর রাতে তাদের উচ্চস্বরে গান বাজানো এবং প্রকাশ্যে মদ পানের বিরুদ্ধে আপত্তি জানায়। রাত সাড়ে দশটার দিকে তাদের হামলা শুরু হয় এবং ১১টা পর্যন্ত চলে।
আক্রান্তরা জানায়, হামলাকারীদের প্রথম লক্ষ্য ছিল ওই এলাকায় বন্ধুদের সাথে অবস্থানকারী ২৭ বছর বয়স্ক নাইজেরীয় নাগরিক লিউচি। সে বাড়ির দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় জনতা তাকে থামায়। লিউচি বলেন, আমি কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে ১৫-২০ লোকের একটি দল আমাকে মারতে শুরু করে। একজন পাথর দিয়ে আমার মুখে আঘাত করে। আমার মুখ থেকে রক্ত পড়তে থাকে। প্রাণ বাঁচাতে আমি দৌড় দেই। লিউচিকে এআইআইএমএসে নিয়ে মুখে ৫টি সেলাই দেয়া হয়।
পরবর্তী লক্ষ্য ছিলেন এক নাইজেরীয় দম্পতি। তারা তাদের চারমাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন। দক্ষিণ দিল্লির ফতেপুরী এলাকার একটি চার্চে কর্মরত কেনেথ ইগবাইনোসা বলেন, হঠাৎ হিন্দিতে একটি চিৎকার শুনলাম। একদল কোত্থেকে এলো জানি না। তারা আমার গাড়িতে আঘাত করতে লাগল। তারা ব্যাট, লাঠি ও তীক্ষèমুখ কাঠের দ- দিয়ে গাড়ির কাঁচ ভেঙে ফেলে। তারা গাড়ির মধ্যে আমাদের আঘাত করার চেষ্টা করে। জীবন বাঁচাতে গাড়ির গতি বাড়িয়ে আমরা পালিয়ে আসি। তারা আমাদের হত্যা করতে চেয়েছিল।
এ হামলায় তার স্ত্রী ও ছেলে সামান্য আহত হয়েছিল। কেনেথ বলেন, রাজধানীতে আফ্রিকানরা প্রায়ই বর্ণবাদী হামলার শিকার হয় এবং আফ্রিকানদের অপরাধী বলে গণ্য করা হয়।
পরবর্তীতে ক্যামেরুনের ভাই-বোন আক্রান্ত হন। শামিলা নামের তার এক বোন জানান, তারা লাঠি ও লোহার রড নিয়ে আমাদের উপর হামলা করে। কেউ আমাদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। তারা আমাদের কালো বলে সম্বোধন করছিল। তারা হুঁশিয়ার করে দেয় যে, আমরা যদি দেশে ফিরে না যাই তাহলে তারা আবার হামলা করবে।
একই এলাকায় বসবাসকারী ভিকি নামে কঙ্গোর এক মহিলা বলেন, তিনি তার ভাইয়ের সাথে অটোকিশায় বাসায় ফিরছিলেন। অসুখে ভোগার পর তার ভাই সবে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন। এ সময় একদল যুবক তাদের আক্রমণ করে। তারা দলে ১৫ জনেরও বেশি লোক ছিল। তারা আমাকে অটো থেকে বের করে আনে। আমার ভাইয়ের কোনো ক্ষতি না করার জন্য তাদের অনুরোধ করলেও শোনেনি। আমি দৌড়াতে শুরু করলে তারা আমাকে ধাওয়া করে ও রড দিয়ে আঘাত করে। আমি মাটিতে পড়ে গেলে তারা আমাকে লাথি মারতে থাকে। তারা আমাকে লাঞ্ছিত করে। তারা আমাকে দেশে ফিরে যেতে বলে। নইলে পরিণতি খারাপ হবে বলে হুমকি দেয়। আমি কাছের সব বাড়িতে যাই। মহিলাদের কাছে হাত জোড় করে বলি, আমাকে সাহায্য করুন। কেউ এগিয়ে আসেননি। তারা দরজা বন্ধ করে ঘটনা দেখতে থাকেন। এমনকি কেউ কেউ আমাকে উপহাস করেন।
পুলিশ এসে পৌঁছানোর পর হামলা বন্ধ হয়। আহত দু’ ভাই-বোনকে হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। তারা এ ঘটনায় বর্ণবাদী মানসিকতার কথা উড়িয়ে দেন। এদিকে এসব হামলার পর আফ্রিকার অভিবাসীরা ৩১ মে যন্তর মন্তরে এক গণবিক্ষোভ প্রদর্শনের কথা জানিয়েছে।
নয়াদিল্লি (দক্ষিণ)-এর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার নূপুর প্রসাদ বলেন, আক্রান্তরা চিহ্নিত করার পর আমরা এ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৫ জন যুবককে আটক করেছি। থানায় অজ্ঞাত যুবকদের আসামি করে ৩টি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত চলছে এবং অপরাধীদের যত দ্রুত সম্ভব গ্রেফতার করা হবে। সূত্র ইন্ডিয়া টুডে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারতে উপর্যুপরি হামলায় উদ্বিগ্ন অভিবাসী আফ্রিকানরা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ