Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উচ্ছেদের চক্রান্তের প্রতিবাদে জয়নালকে গ্রেফতার দাবি, রাজপথ প্রকম্পিত করার হুশিয়ারী

নারায়ণগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০১৯, ৭:৪৮ পিএম

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১০ নং ওয়ার্ডের সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলে অবস্থিত বেসরকারী করণকৃত নিউ লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলটিতে এক যুগে ৭২ কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া মিলটির শতকোটি টাকা মূল্যের সম্পদ লুটপাটের পাশাপাশি ৭০০ কোটি টাকা মূল্যের মিলটি মাত্র ৩৫ কোটি টাকায় বিক্রির পায়তারা চলছে। শেয়ার হস্তান্তর না করায় মিলটির আন্দোলনরত ৫৩ জন শেয়ারহোল্ডার পরিবারকে উচ্ছেদের চেষ্টা করছে প্রভাবশালী নিট কনসার্ন গ্রুপের ক্যাডার বাহিনী। অবৈধভাবে মিলটির পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান বনে গেছে নিট কনসার্ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জয়নাল আবেদীন মোল্লা। অথচ হাইকোর্টের নির্দেশে মিলটির চেয়ারম্যান রয়েছেন জেলা প্রশাসক। আন্দোলনরত শেয়ারহোল্ডারদের উচ্ছেদের চেষ্টা করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দেয়ার পাশাপাশি অবৈধ চেয়ারম্যান দাবিদার জয়নাল আবেদীন মোল্লাকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে।
বুধবার ১২ জুন দুপুরে আন্দোলনরত শেয়ারহোল্ডারদের আবারো উচ্ছেদের চক্রান্তের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ দাবি ও হুশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়।
নিউ লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিল শেয়ারহোল্ডার স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জাতীয় শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহাম্মেদ পলাশ, ৭৪ শ্রমিক সংগঠনের নেতা এস এম হুমায়ন কবির। আরো বক্তব্য রাখেন নিউ লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিল শেয়ারহোল্ডার স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির সাবেক আহবায়ক মোহাম্মদ হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা বিজয় চন্দ্র সরকার, মোহাম্মদ আইয়ুব আলী, অনিল চক্রবর্তী, নিধু কমল দে, রবি দাস, তামলেক মিয়া, আরমান মিয়া প্রমুখ।
নিউ লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিল শেয়ারহোল্ডার স্বার্থরক্ষা সংগ্রাম কমিটির সাবেক আহবায়ক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, নিউ লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলটি একটি ঐতিহ্যবাহী লাভজনক প্রতিষ্ঠান ছিল। ২০০১ সালে ২১ মার্চ ৫১০ জন শেয়ার হোল্ডারদের মালিক বানিয়ে মিলটি হস্তান্তর করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। ২০০১ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মিলটিতে প্রতি মাসে ৫০ লাখ টাকা আয় হিসেবে ১২ বছরে কমপক্ষে ৭২ কোটি টাকা লোপাট করা হয়েছে। আমরা হিসাব চাইতে গেলে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন প্রধানের নেতৃত্বাধীন পরিচালনা পর্ষদ তাদের ক্যাডার বাহিনী দিয়ে আমাদের হুমকী ধমকী দিতো। এরপর মিলটির একজন বিনিয়োগকারী নিয়োগের কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে ৩৮২ জনের শেয়ার হাতিয়ে নিয়ে নিট কনসার্ন গ্রুপের কাছে হস্তান্তর করে। মিলটির মেশিনারীজ লুটপাটের মাধ্যমেও কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশে জেলা প্রশাসক বর্তমানে চেয়ারম্যান হিসেবে থাকলেও পেশীশক্তির মাধ্যমে নিট কনসার্ন গ্রুপের মালিক জয়নাল আবেদীন মোল্লা নিজেকে চেয়ারম্যান দাবি করে আমাদের উচ্ছেদের নোটিশ ও হুমকী দিচ্ছে। আমাদেরকে ১৫ জুনের মধ্যে উচ্ছেদ করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে তাদের ক্যাডার বাহিনী।
শেয়ারহোল্ডাররা তাদের বক্তব্যে বলেন, বর্তমানে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে নিরীহ শেয়ারহোল্ডারদের হয়রানি করা হচ্ছে। মসজিদের মাইকে উচ্ছেদের হুমকী দিচ্ছে। আমরা জীবন দিলেও শেয়ার হস্তান্তর করবো না।
জাতীয় শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির শ্রমিক উন্নয়ন ও কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কাউসার আহাম্মেদ পলাশ বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে মিলটির চেয়ারম্যান ডিসি অথচ শতকোটি টাকা লুটপাটের পরে এখন আবার রাতের আধারে চেয়ারম্যান দাবি করছে নিট কনসার্ন গ্রুপের মালিক জয়নাল আবেদীন মোল্লা। পেছনের দরজা দিয়ে রাতের আধারের কোন এজিএম শ্রমিকরা মানবে না। তারা ডাকাতের মতো ১৫ জুন শেয়ারহোল্ডারদের উচ্ছেদ করার হুমকী দিচ্ছে। আমরা পরিস্কার ভাষায় বলতে চাই ডাকাতের মতো শ্রমিকদের উচ্ছেদের হুমকী দিবেন সেটা বরদাশত করা হবেনা। শেয়ারহোল্ডারদের উচ্ছেদ করার মতো হুমকী দেন এত বড় সাহস তাকে কে দিল। যদি একজন শেয়ারহোল্ডারের গায়ে একটা আচরও পড়ে তাহলে রাজপথে আগুন জ্বলবে। শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষে শ্রমিকলীগসহ ৭৪টি শ্রমিক সংগঠন সকলেই আন্দোলনে নামবে। তখন যেকোন পরিস্থিতির দায় দায়িত্ব জয়নাল আবেদীন মোল্লাকেই নিতে হবে। আমরা অবিলম্বে জয়নাল আবেদীন মোল্লার গ্রেফতার দাবি করছে। তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, পালিত কুকুর বেড়াল দিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবেনা। আপনারা শেয়ারহোল্ডারদের উপর নির্যাতন করবেন আর আমরা লেবেনচুষ খাবো সেটা ভাববেন না আমরা দাতভাঙ্গা জবাব দিব। শেয়ারহোল্ডারদের পক্ষে লাখো শ্রমিক রাজপথ প্রকম্পিত করবে।
উল্লেখ্য শেয়ারহোল্ডারের রিট পিটিশন অনুযায়ী ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারী হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের জাস্টিস মোঃ রেজাউল হাসান নির্বাচন দেয়ার আদেশ দেন। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত নিরপেক্ষ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসককে নিউ লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান পদে ও শেয়ারহোল্ডারদের সরাসরি ভোটে পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক পদে নির্বাচনের নির্দেশ দিয়েছেন। যে কারণে হাইকোর্টের আদেশে অদ্যাবধি মিলটির চেয়ারম্যান পদে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক।
তবে গত ১৬ মে মিলটির প্রবেশ ফটক সংলগ্ন দেয়ালে একটি নোটিশ সাটানো হয়েছে যাতে চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করা হয় নিট কনসার্ন গ্রুপের জয়নাল আবেদীন মোল্লাকে। ওই নোটিশে আমাদেরকে ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম দেয়া হয়। কিন্তু আমরা কেউই নোটিশে কোন ধরনের কর্নপাত না করায় গত ১৯ মে মাইকিং করা হয় ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাদেরকে শেয়ার জমা দিতে হবে। সর্বশেষ পবিত্র ঈদুল ফিতরের কয়েক দিন আগে মাইকিং করে ১৫ জুনের পরে শেয়ারহোল্ডারদেরকে উচ্ছেদের হুমকী দেয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নারায়ণগঞ্জ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ