Inqilab Logo

রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গোলাপী এখনো জীবিত দাফন হলো কার?

রাজশাহী ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

রাজশাহীর বাঘার চকবাউসা গ্রামের ভ‚ট্টা ক্ষেত থেকে গত ১০ জুন সন্ধ্যায় মুখে মবিল মাখানো লাশটি কার? যার লাশ ভেবে দাফন করা হয়েছে সেই গোলাপী বেগমকে গতকাল বুধবার সকালে আড়ানী রেলস্টেশন থেকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে বাঘা থানার হেফাজতে নেয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে দাফন করা লাশটি কার ?

উল্লেখ্য, ১০ জুন সন্ধ্যায় বাঘা থানার পুলিশ চকবাউসা গ্রামের ভূট্টা ক্ষেত থেকে মুখে মবিল মাখানো অজ্ঞাত (৪৫) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরের দিন ১১ জুন ওই লাশ উপজেলার আড়ানী পৌরসভার পাঁচপাড়া গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধী মনির হোসেনের স্ত্রী গোলাপি বেগম বলে শনাক্ত করা হয়। যাথারীতি তাকে দাফনও করা হয়।

গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় আড়ানী রেল স্টেশন থেকে গোলাপি বেগমকে জীবিত উদ্ধার করে আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদে আনা হয়। সেখানে গোলাপি বেগমের মামা শাকিব হোসেন, শাশুড়ি মরিয়ম বেগম, ভাসুর মাজদার রহমান, জা সাজেদা বেগম এর উপস্থিতিতে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আসল গোলাপি বেগমকে সনাক্ত করা হয়। তার কাছে থেকে জাতীয় পরিচয় পত্র নামের সাথে মিল রয়েছে। পরে চেয়ারম্যান গোলাপি বেগমসহ উভয় পরিবারকে থানায় পাঠিয়ে দেন।

গোলাপি বেগম বলেন, ঈদের আগে বুধবার (২৯ মে) রুস্তমপুর হাটে ৪২ হাজার টাকায় একটি গরু বিক্রি করি। এ টাকা নেয়ার জন্য শশুর বাড়ির লোকজন চাপ দিতে থাকে। আমি নিরুপায় হয়ে পরের দিন বিদ্যুৎ বিল দেয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাজশাহীর এক আত্মীয় বাড়িতে যাই। আমি ৬ বছরের সন্তান মারুফ হোসেন ও পেটের ৫ মাসের সন্তানের কথা ভেবে বুধবার সকালে রাজশাহী থেকে মহানন্দা ট্রেনে আড়ানী স্টেশনে আসি। এ সময় স্থানীয় কিছু মানুষ আমাকে চিনতে পেরে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসে। সেখান থেকে থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন এলাকাবাসীর প্রশ্ন ওই অজ্ঞাত নারীর লাশটি কার?

গোলাপি বেগমের শশুর বিচ্ছাদ আলী বলেন, আমার ছেলে বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় গোলাপি নিজের ইচ্ছা মতো চলাফেরা করে। আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদের বিভিন্ন কথা শুনে দেয়। ফলে আমরা দেখেও না দেখার ভান করে চলি। এরমধ্যে আমার ছেলে ও নাতীকে রেখে চলে গিয়েছিল। ১২ দিন পর তাকে জীবিত পাওয়া গেছে। তবে চকবাউসা গ্রামের লালু প্রামানিকের ভুট্টা ক্ষেতে যে লাশ পাওয়া যায়, সেটা অন্য কারো।

আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রভাষক রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, গোলাপি বেগমসহ উভয় পক্ষ আমার কাছে আসলে, তাদেরকে থানায় প্রেরণ করেছি। তবে আত্মীয় স্বজনের কাছে জেনে এবং তার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে মনে হয়েছে, সে আসল গোলাপি।

বাঘা থানার ওসি জানান, উদ্ধারকৃত লাশটি ভূলভাবে তার আত্মীয়রা সনাক্ত করেন। ময়না তদন্ত শেষে তাদের পারিবারিক গোরস্থানে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দাফন করা হয়। এ বিষয়ে একটি মামলায়ও হয়েছে। তবে উদ্ধারকৃত লাশের মুখ পোড়া মবেল দেয়া ছিল। এছাড়া লাশের পাশে থেকে একটি কালো বোরকা, এক জোড়া সেন্ডেল, একটি গুলের কোটা পাওয়া যায়। লাশের গলা ওড়না দিয়ে পেঁচানো ছিল। এখন গোলাপি বেগম থানা হেফাজতে রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হবে। তবে এ বিষয়ে ধারনা করা হচ্ছে অন্য জায়গায় তাকে হত্যা করে চকবাউসা গ্রামের লালু প্রামানিকের ভূট্টা ক্ষেতে লাশ ফেলে রাখা হয়। প্রকৃত অজ্ঞাত নারীর লাশ সনাক্ত করা যায়নি। তবে আমাদের কাছে ছবি ও আলামত রয়েছে, সেগুলো দেখে দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ