Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গণতন্ত্র রক্ষায় সর্বদলীয় ঐক্য দরকার

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

দেশের বেশিরভাগ খাতে চলছে চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি। তন্মধ্যে আইনশৃঙ্খলা, পরিবেশ দূষণ, ঢাকা বসবাসের অনুপযোগী, খাদ্যে ভেজাল, পণ্য-মূল্য বৃদ্ধি, দুর্ঘটনা, এডিপি, পরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নির্মাণ ও কৃষি খাত, প্রশাসন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এসবের মধ্যে নানা দূষণ, ঢাকা বাসের অনুপযোগী ইত্যাদি ক্ষেত্রে একনাগাড়ে কয়েক বছর শীর্ষস্থান দখল করেছে এবং ভবিষ্যতেও করতে হবে! শিক্ষার মান কমতে কমতে এখন তলানিতে ঠেকেছে! মাদকের ব্যবহার, মানবাধিকার লঙ্ঘন, খুন, জখম, ধর্ষণ, অপহরণ, গুম দলীয়করণ, চাঁদাবাজি, দখলবাজী, দুর্নীতি, বেকারত্ব, অর্থপাচার ইত্যাদি রেকর্ড করেছে। এছাড়া এবার কৃষক তার ধানের ন্যায্যমূল্য না পেয়ে জমিতে আগুন দিয়ে ধান পুড়ে ফেলেছে, রাস্তায় ধান বিছিয়ে মানব-বন্ধন করেছে। কারণ, এক মন ধান বিক্রি করে একজন শ্রমিকের মজুরী হয়নি। অথচ নির্দিষ্ট তারিখ থেকে ও নির্ধারিত মূল্যে সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে সরকারিভাবে ধান-চাল ক্রয় করা হলে এসব হতো না। যা’হোক, দেশে এ নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে জবাবদিহিতা না থাকায়। আর প্রকৃত গণতন্ত্র না থাকলে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত হয় না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রথম শর্ত হচ্ছে অবাধ ভোটাধিকার ও বাক-স্বাধীনতা। আগে ছিল হোন্ডা-গুণ্ডার নির্বাচন, এখন চালু হয়েছে ভোটের আগের রাতে প্রশাসনের লোক দ্বারা সিল মেরে বাক্স ভর্তি করার নির্বাচন। ফলে মানুষ ভোটে অংশগ্রহণের উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। ভোটের দিন অপেক্ষা করতে হয় কখন একজন ভোটার আসবে। তেমনি প্রার্থীর সংখ্যাও ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ফলে সরকার দলীয় প্রার্থী ছাড়া তেমন প্রার্থী অংশগ্রহণ করছে না নির্বাচনে। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদের নির্বাচনে এসব বেশি হয়েছে। যা সরকারি জোটের অনেকেই বলেছেন বহুবার।

আর বাক-স্বাধীনতা নেই বললেই চলে। সে জন্য আইনও প্রণয়ন করা হয়েছে। সরকারের লোকজন প্রায়ই বলে থাকেন, তাদের আমলে সর্বাধিক মিডিয়া প্রকাশিত হয়েছে। হ্যাঁ, কথাটি সঠিক। কিন্তু সেগুলোর মালিক কারা? খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাদের অধিকাংশই আ’লীগের নেতা বা সমর্থক। তাই তারা সারাক্ষণই সরকারে গুণ-কীর্তন আর বিরোধী দলের নিন্দায় মশগুল। দেশের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তাদের নজরে পড়ে না! যেন প্রত্যেকটিই সরকারি মিডিয়া! অন্যদিকে, ভিন্নমতের বেশিরভাগ মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে নানা অজুহাতে। যে দু’চারটা চালু আছে, তাদেরকে বিজ্ঞাপন আর আইসিটি আইনের নিশানায় রাখা হয়েছে। ফলে তারা টিকে থাকার তাগিদেই সেলফ সেন্সরশিপে যেতে বাধ্য হয়েছে। স¤প্রতি এক টকশো’তে জাতীয় পার্টির এক এমপি বলেন, ‘সরকার ও প্রশাসন মিলে একাকার হয়ে এক মহাশক্তিতে পরিণত হয়েছে। যা থেকে মুক্তি পাওয়া সহজতর নয়।’ অপরদিকে, গত ৫ জুন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের ‘মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিবেদন ২০১৮’-এ বলা হয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে ওঠা সহিংসতা ও কারচুপির অভিযোগকে ‘বিশ্বাসযোগ্য’। পাশাপাশি দেশটির মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং বাক-স্বাধীনতা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। দেশটিতে গুম, বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়া এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার সংকোচন ঘটেছে। স্মরণীয় যে, ইতোপূর্বে অনুরূপ মন্তব্য করা হয়েছে আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিবেদনেও। এছাড়া, দেশি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র লঙ্ঘন নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বহুবার।

দেশের প্রকৃত বিরোধী দলগুলো এবং সুশীল সমাজের কেউ কেউ দেশের চলমান নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি এবং গণতন্ত্র উদ্ধারের কথা বলছেন। এমনকি তারা মধ্যবর্তী নির্বাচনও দাবি করেছে। জাতীয় ঐক্য ফন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন অতি সম্প্রতি বলেছেন, ‘আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই আন্দোলনের ফল আনতে হবে।’ অন্য দলের নেতারাও অনুরূপ কথা বলছেন। কিন্তু তারা এসব বলছেন পৃথক পৃথকভাবে। ফলে তা খুব জোরালো হচ্ছে না। তাই সরকার তাদের কথাবার্তার তেমন আমল দিচ্ছেন না। ফলে পরিস্থিতি দিন দিন ক্রমান্বয়ে খারাপ হচ্ছে। ফলে মানুষের মধ্যে চরম শঙ্কা বিরাজ করছে। এই অবস্থায় রোহিঙ্গা সংকট চলছে। ১০ লাখের অধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী আছে। মিয়ানমার তাদেরকে ফেরত নিচ্ছে না। ফলে এ নিয়ে বাংলাদেশ চরম সংকটে পড়েছে। সংকট নিরসনের জন্য চীন-রাশিয়া ‘দ্বিপাক্ষিক ব্যবস্থা’ আর জাতিসংঘ ‘আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা’র কথা বলছে। কিন্তু কোনটিই ফলদায়ক হচ্ছে না। ফলে এই দুই ফর্মুলার যাঁতাকলে পড়ে বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গারা মহা সংকটে নিপতিত। যা সহজে দূর হবে বলে মনে হয় না। অথচ রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের আর্থিক, পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম ক্ষতি হচ্ছে। এই অবস্থায় আশিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আগামী দুই বছরের মধ্যে মিয়ানমার ৫ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত নেবে।’ কিন্তু এটা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বাস নেই। দ্বিতীয়ত রোহিঙ্গা আছে ১০ লাখ কিন্তু মিয়ানমার দাবি করেছে ৫ লাখ। তাই এ সংকট থেকেই যাবে। এই অবস্থায় মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে উঁকি মারছে বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর ভারতীয় রাজ্যগুলোর মুসলমানরা। এ ব্যাপারে বিজেপি নেতাদের বক্তব্য স্মরণীয়। টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাথে এক সাক্ষাতকারে বিজেপির নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়া বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে কমপক্ষে দেড় কোটি অবৈধ অভিবাসী পশ্চিম বঙ্গে অবস্থান করছেন। তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়া হয়েছে। দেয়া হয়েছে রেশন কার্ডও। এসব অবৈধ অভিবাসী মমতার সরকারকে দেখভাল করছে। প্রকৃত অধিবাসীদের কাছ থেকে তাদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছেন। এ জন্য পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ক্ষুব্ধ। তারা তাদের সংস্কৃতিতে আগ্রাসনের বিষয়ে উদ্বিগ্ন।’ এছাড়া, সম্প্রতি শেষ হওয়া লোকসভার নির্বাচনকালে বিজেপি প্রধানসহ বহু নেতা বলেছেন, পশ্চিম বঙ্গের বহু মুসলমান বাংলাদেশি। তারা ভারতে অনুপ্রবেশকারী। আসামের মতো এই রাজ্যেও নাগরিক সনদ চালু করা হবে। তাতে যারা সনদ পাবে না তাদেরকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। উল্লেখ্য যে, ইতোপূর্বে আসামে ৪২ লাখ বাঙালি মুসলমানকে অনাগরিক ঘোষণা করা হয়েছে নাগরিকত্ব সনদ প্রদানের পর। বিজেপি তাদেরকে বাংলাদেশের মানুষ বলে দাবি করেছে। ত্রিপুরায়ও বাংলাদেশের মানুষ আছে বলে বিজেপি দাবি করেছে। এসব মিলে বিজেপির দাবি মতে, ভারতে ২ কোটির অধিক মুসলমান অবৈধভাবে বাস করছে। তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কথা প্রায়ই বলেন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ। এখন তিনি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। উপরন্তু তিনি বর্তমান মন্ত্রী পরিষদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা। এতে করে সংশ্লিষ্ট মুসলমানদের চরম শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। এই অবস্থায় পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় সেটাই দেখার বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশ আর কোনো শরণার্থীর ভার বহন করতে সক্ষম নয়। তাই এ ব্যাপারে এখন থেকেই কঠোর দৃষ্টি রাখা আবশ্যক। কিন্তু এই নবতর সংকট মোকাবেলা করার দায়িত্ব প্রধানত সরকারের।

কিন্তু ভারত যদি তাদের মুসলমানদের বাংলাদেশি বলে খেদিয়ে দিতে চায়, তাহলে বাংলাদেশ ছাড়া নিরাপদ আশ্রয়ের জায়গা তাদের নেই। তাই তারা জানমাল রক্ষার স্বার্থেই বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে। যার ভার বহন করার ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে ভারতের বিরুদ্ধে। কিন্তু বর্তমান সরকার তা করতে পারবেন বলে মনে হয় না। কারণ, তারা ভারতের সহায়তায় ক্ষমতায় এসেছে এবং ক্ষমতায় টিকে আছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস পাবে না। যাকে বলে গুরু মারা শিষ্য হয়ে ভবিষ্যৎ অন্ধকার করার ঝুঁকি নিবে না। দ্বিতীয়ত: এই বিষয়টির সাথে ‘মাদার অব হিউমিনিটি খ্যাতি’র সম্পর্ক আছে। তাই ভারতীয় মুসলমানদের প্রবেশ ঠেকানোর দায়িত্ব পালন করতে হবে এ দেশের জনগণকেই। যাকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে ও নেতৃত্ব দিতে হবে প্রকৃত বিরোধী দলকেই। সে সাথে দেশের গণতন্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা তো রয়েছে।

অর্থাৎ দেশ আজ অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে ভয়াবহ সংকটে নিপতিত। যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে প্রকৃত গণতন্ত্র। যা অবাধ নির্বাচন ছাড়া সম্ভব নয়। আর তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয়। যা শতভাগ প্রমাণিত। কিন্তু বর্তমান সরকার তত্ত¡াবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নেবে না। কারণ, তাতে ভোটের রেজাল্ট কী হবে তা তারা জানেন। এই পরিস্থিতিতে সরকারকে দাবি মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে, যা তীব্র গণআন্দোলন ছাড়া সম্ভব নয়। আর সে তীব্র আন্দোলনও সম্ভব নয় ডান, বাম ও জাতীয়তাবাদী তথা সব দিলে মিলে ‘সর্বদলীয় ঐক্য’ ছাড়া। আর সেটা করতে হবে নিজ নিজ রাজনীতির স্বকীয়তা বজায় রেখেই। যাকে বলে ‘রাজনীতি যার যার-গণতন্ত্র উদ্ধারে সর্বদলীয় ঐক্য দরকার সবার’ এই একটি ফর্মুলায়। অতঃপর আন্দোলন শুরু করতে হবে। তবে রাজনীতি যার যার হলেও সকলের কিছু কমন দাবির ব্যাপারে ঐকমত্য হতে হবে, নতুবা তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন সৃষ্টি হবে না। সে দাবিগুলোর প্রধান হচ্ছে, তত্ত¡াবধায়ক সরকার পুনঃ প্রবর্তন। তবে, এক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থাকলে তা নিরসন করে হালনাগাদ করা যেতে পারে। এছাড়া, সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ভারতের মতো পূর্ণ স্বাধীন ও শক্তিশালীকরণ এবং এতে নিয়োগের স্থায়ী বিধান প্রণয়ন, সংবিধান মোতাবেক স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ ও ন্যায়পাল নিয়োগ, প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি, নগর সরকার প্রবর্তন, ব্যাংক কমিশন গঠন, সব কালাকানুন বাতিল করা দরকার। এছাড়া, ছাত্র, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের জাতীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি বন্ধের আইন জারী ও বাস্তবায়ন, সরকারি প্রচার মাধ্যম সীমিত করে বিবিসি’র মতো একটি শক্তিশালী সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, সংসদীয় কমিটি ও সংসদকে সকল কাজের প্রাণকেন্দ্র করা। এসব অঙ্গীকার করলেই মানুষ বিরোধী দলের দাবিতে সম্পৃক্ত হবে। কারণ, এসব তাদের দীর্ঘদিনের মনের দাবী। এসব হলেই দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্থায়ী পথ সৃষ্টি হবে। যে পথ ধরে শান্তি ও সার্বিক উন্নতি প্রতিষ্ঠিত হবে।

সর্বদলীয় ঐক্যের প্রধান কে হবেন তা নিয়ে একটি প্রশ্ন উঠতে পারে। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে সর্বজন গ্রহণযোগ্য নেতার বড় অভাব রয়েছে দেশে। দেশের সর্ববৃহৎ দল-বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সাজানো একটি মামলার রায়ে কারাগারে বন্দি। আন্দোলন তীব্রতর না হলে অথবা গণতন্ত্র উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত তার মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এই অবস্থায় মন্দের ভালো খুঁজতে হবে। আর সেটা হতে পারে ড. কামাল হোসেন। তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিকদের মধ্যে সর্বাধিক বয়োজ্যেষ্ঠ, সৎ, প্রজ্ঞাবান এবং আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য। অবশ্য তার ব্যাপারে অনেকের মধ্যে কিছু প্রশ্ন আছে। যার অন্যতম হচ্ছে: রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতা, দৃঢ়চেতা-হীনতা ও সাহসিকতার অভাব। সর্বোপরি তিনি নিজস্ব মতামতের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের শরীক দলগুলোর সম্মিলিত মতামতের হতে পারেননি। ফলে তাকে নিয়ে সাধারণ মানুষ তো দূরে থাক, ফ্রন্টের অনেকের মধ্যেই সংশয়-সন্দেহ রয়েছে। তার এসব বিষয়ের কারণেই জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট গঠনের সুফল তেমন পাওয়া যায়নি। অবশ্য সরকারের লোকজন বলেছিলেন, ঐক্য ফ্রন্ট শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু সেটা হয়নি। ফ্রন্ট টিকে আছে এবং থাকবে। সংসদে যোগদান নিয়ে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তাও নিরসন হয়েছে। ফলে ফ্রন্ট শক্তিশালী হচ্ছে। আর তা হওয়াও দরকার। কারণ, এটি সময়ের দাবি। তাই এর শীর্ষ নেতা ড. কামালের সব নেতিবাচক দিক দূর করতে হবে। ফ্রন্টের সব দলের সম্মিলিত সুরেই গান গাইতে হবে তাকে। এর অর্থ এই নয় যে, তার স্বাধীন মতামতকে বিসর্জন দিতে হবে। না, তার নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় থাকবে, যখন তিনি তার নিজস্ব দলের কর্মে সংশ্লিষ্ট থাকবেন। আর যখন তিনি ফ্রন্টের কর্মে থাকবেন, তখন তাকে ফ্রন্টের ধ্বনিই প্রতিধ্বনি করতে হবে। সর্বোপরি ফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে তিনি কোন পদ গ্রহণ করবেন তার ঘোষণা দিতে হবে। তাহলেই তার প্রতি ফ্রন্টের সকলের দ্বিধা দ্ব›দ্ব দূর হয়ে তার হাত শক্তিশালী হবে। জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট অধিকতর শক্তিশালী হবে। এছাড়া, একইরূপ ধারণ করতে হবে ফ্রন্টের সব নেতাদেরও। মনে রাখতে হবে, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে ফ্রন্ট বড়, ফ্রন্টের চেয়ে দেশ বড়। তবেই ফ্রন্ট শক্তিশালী হবে। উপরন্তু সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটি দলকে শক্তিশালী করতে হবে। অপরদিকে, এই ফ্রন্টের ব্যাপারে ২০ দলীয় জোটের নেতাদের মতামত ঘোষণা করতে হবে প্রকাশ্যে। সমর্থন থাকলে ফ্রন্টের কর্মে সম্পৃক্ত হতে হবে। স্মরণীয় যে, জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক ফ্রন্ট। বিরোধী দলগুলোর মধ্যে এই ফ্রন্টের বাইরে আছে শুধুমাত্র বাম দলগুলো এবং আরও কিছু ছোট দল। তারা জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টে শরীক হলে এই ফ্রন্ট আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে। দ্বিতীয়ত স¤প্রসারিত জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টেরও শীর্ষ নেতা হতে পারেন ড. কামাল হোসেন। অথবা যৌথ নেতৃত্বেও পরিচালিত হতে পারে। তবে যার নেতৃত্বেই হোক, সব প্রকৃত বিরোধী দল মিলে ঐক্য গঠন করার পর মধ্যবর্তী জাতীয় নির্বাচনের পথ সৃষ্টি করতে হবে। আর সম্মিলিতভাবে নির্বাচন ও সরকার গঠন করা যেতে পারে কিংবা এককভাবেও করা যেতে পারে। তবে এককভাবে নির্বাচন করলে সম্মিলিত ঘোষণা থাকতে হবে যে, নির্বাচনে ফ্রন্টের যে দলই জয়ী হয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে, তাকেই ৬ মাসের মধ্যে ফ্রন্টের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের আইন প্রণয়ন ও তা কার্যকর করতে হবে। স্মরণীয় যে, সর্বদলীয় ঐক্য না গড়ে এককভাবে চলতে গেলে মহাপরাক্রমশীল সরকারের কাছে সকলকেই ডুবতে হবে দু’দিন আগে আর পরে। সেই সাথে ডুবতে হবে সমগ্র দেশবাসীকে। যা কোনো দেশপ্রেমিক মানুষের কাম্য নয়। তাই সর্বদলীয় ঐক্য এবং প্রবল আন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া বিকল্প নেই। সেটা যত তাড়াতাড়ি হয়, ততই কল্যাণ।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন