Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বোয়ালমারীতে চেয়ারম্যান মেম্বারের যোগসাজশে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা আত্মসাৎ

ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০১৯, ২:৪৮ পিএম

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাতাভোগীদের না জানিয়ে ব্যাংক থেকে ভাতার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছে তারা।

উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৮-১৯ খ্রি. উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নে ৩০ জন প্রতিবন্ধীকে সরকার প্রদত্ত প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর আওতায় আনা হয়। সরকারি নীতমালা অনুযায়ী উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে প্রত্যেক প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর নিকট ভাতার বই হস্তান্তর করার কথা থাকলেও উপজেলা সমাজসেবা অফিসার প্রকাশ কুমার বিশ্বাস সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান এসএম ফারুক হোসেনের কাছে গত ২৯ মে ২০১৯ খ্রি. সবকটি বই হস্তান্তর করেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে চেয়ারম্যান এসএম ফারুক হোসেন, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার অপু সরকার, সদস্য মো. কামরুল ইসলাম ও বোয়ালমারী সোনালী ব্যাংক শাখার দুই কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুল আলম ও মো. নজরুল ইসলামের যোগসাজশে ভাতাভোগী প্রতিবন্ধীদের না জানিয়ে ভূয়া লোক সাজিয়ে গত ৯ জুন ২০১৯ খ্রি. ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আত্মসাৎ করেন।

৪নং ওয়ার্ডের ঘোষপুর গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধী মো. মিরাজ হোসেনের স্ত্রী ফরিদা বেগম জানান, কামরুল মেম্বার প্রতিবন্ধী ভাতার বই করে দেয়ার কথা বলে দুই বছর আগে ২ হাজার টাকা নেয়। এখন পর্যন্ত ভাতার বই বা টাকা কোনটাই পাইনি।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মো. কামরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধীদের তালিকা জমা দেয়া হয়েছিল। শুনেছি ভাতার বই চেয়ারম্যানের নিকট সমাজসেবা অফিস হস্তান্তর করেছে। ভাতা গ্রহিতা বই বা টাকা পেয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই। ভাতার বই করে দেয়ার কথা বলে টাকা নেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
৯নং ওয়ার্ডের লংকারচর গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী দীপক গোলদার (২০) এর মা উন্নতি গোলদার জানান, বছরখানেক আগে প্রতিবন্ধী ভাতার বই করে দেয়ার কথা বলে অফিস খরচ বাবদ দুই ধাপে সাড়ে ৪ হাজার টাকা নেয় সংশ্লিষ্ট মহিলা ইউপি সদস্য অপু সরকার। গত ৯ জুন তিনি দীপককে সাথে নিয়ে বোয়ালমারী সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে দীপকের টিপসই নিয়ে ভাতার ৪ হাজার ২শ টাকা উত্তোলন করে আমার ছেলের হাতে মাত্র ১শ টাকা দিয়ে শ্বাশুড়ির সাথে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।
টাকা নেয়ার ব্যাপারে ৩ নং সংরক্ষিত (৭, ৮, ৯) ওয়ার্ডের মহিলা ইউপি সদস্য অপু সরকার বলেন, ভাতার বই করার জন্য কারও কাছ থেকে কোন টাকা নেয়া হয়নি। ভাতাভোগী দীপককে ৬শ টাকা দেয়া হয়েছে। বাকী ৩ হাজার ৫শ টাকা অফিস খরচ বাবদ ইউপি চেয়ারম্যান এসএম ফারুক হোসেন নিয়েছেন।
গোহাইলবাড়ী গ্রামের তারক কুন্ডুর ছেলে বাকপ্রতিবন্ধী কৌশিক কুমার কুন্ডুর (১৫) নামে প্রতিবন্ধী তালিকাভুক্ত এবং ভাতার টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হলেও তার পিতা জানান, ছেলের প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ৬ মাস পূর্বে ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট জমা দিয়েছিলাম। এখন পর্যন্ত ভাতার বই বা টাকা কোন কিছ্ইু পায়নি। এছাড়া গোহাইলবাড়ী গ্রামের আব্দুর রহিম (১৭), নৃপেন চন্দ্র বিশ্বাস (৬৫) সহ একাধিক প্রতিবন্ধীর নামে প্রতিবন্ধী ভাতার বই তালিকাভুক্ত ও প্রথম কিস্তির (জুলাই ২০১৮ থেকে ডিসেম্বর ২০১৮) ৪ হাজার ২শ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হলেও ভাতাভোগীরা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। ৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো. ইউনুস মিয়া বলেন, আমার ওয়ার্ডের সাতটি প্রতিবন্ধী ভাতার বই চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন আটকিয়ে রেখেছে। আমি ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে আনতে গেলেও আমাকে বইগুলো দেয়া হয়নি।

এ বিষয়ে বোয়ালমারী সোনালী ব্যাংক শাখা ব্যবস্থাপক মো. খায়রুল হাসান বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা বিতরণের জন্য দুই কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুল আলম ও মো. নজরুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তাদেরকে বারবার দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যাতে কোন অনিয়ম না হয়। কোন অনিয়ম করে থাকলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুল আলমকে টাকা বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি সাক্ষাতে কথা বলা ও চা খাওয়ার অনুরোধ জানান।
প্রতিবন্ধী ভাতার বই বিতরণে অনিয়ম প্রসঙ্গে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার প্রকাশ কুমার বিশ্বাস বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতার সুবিধাভোগীরা যাতে ঈদুল ফিতরের আগে তাদের ভাতা উত্তোলন করতে পারে সে জন্য ঘোষপুর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম ফারুক হোসেনের নিকট গত ২৯ মে ৩০ জন ভাতাভোগীর বই হস্তান্তর করি। ভাতাভোগীরা বই বা টাকা না পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা আ’লীগের অর্থবিষয়ক সম্পাদক ও ঘোষপুর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম ফারুক হোসেন মোবাইলে (০১৭১১-১১৪২৫৩) বলেন, উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে বইগুলো গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সদস্যদের পৌঁছে দেয়া হয়েছে সুবিধা ভোগীদের দেয়ার জন্য। ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই। আমার বিরুদ্ধে আনা ইউপি সদস্যদের অভিযোগ সঠিক নয়।



 

Show all comments
  • মোঃ রাসেল আহমেদ ১৯ জুন, ২০১৯, ৮:২২ পিএম says : 0
    দুর্নীতি কোথায় না হচ্ছে? রাজসভা থেকে রাখাল সভা সবখানেই দুর্নীতি!!
    Total Reply(0) Reply
  • md shahidul islam ২৫ জুন, ২০১৯, ৭:৪৬ এএম says : 0
    Ami vlo to jogot vlo.amar desh k agea near jonno sot vabeamra sobai akjoge kaj kori.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টাকা আত্মসাৎ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ