Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

নাজুক বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় চরম দুর্ভোগে বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ

ওজোপাডিকো দীর্ঘদিনেও গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেনি

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৯, ৪:৫৩ পিএম

বর্ষার দুঃসহ গরমের সাথে লাগামহীন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ বরিশাল মহানগরবাসী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকার মানুষ। চিকিৎসা সেবা থেকে জরুরী পানি সরবরাহ পর্যন্ত বিপর্যস্ত। শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের অবস্থাও নাজুক। আষাঢ়ের এসময়েও দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ ৩৪-৩৫ডিগ্রী সেলসিয়াসে। চলতি মৌসুমে বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ৩৬.৮ডিগ্রীতেও উঠে গিয়েছিল। এখনো বরিশাল বিভাগীয় সদরে আকাশে মেঘ জমলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বজ্রপাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয় মহানগরীর বিদ্যুৎ সরবরাহ। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের গ্রাম-গঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার চেয়ে শহরগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরণ ব্যবস্থা ক্রমশই নাজুক আকার ধারণ করছে বলেও হতাশ গ্রাহকগন।

অভিযোগ রয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলা ও ছয়টি উপজেলা সদরে ‘ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি-ওজোপপাডিকো’ বিদ্যৎ বিতরন ও সরবারহের দায়িত্ব থাকলেও গ্রাহক পর্যায়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়ার ক্ষেত্রে এ কোম্পানী সাফল্যের কাছেও পৌছতে পারেনি। ২০০২ সারের ৪নভেম্বর ওজোপাডিকো গঠন সহ ২০০৫-এর ১ এপ্রিলে কোম্পানিটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গত প্রায় ১৪ বছরেও গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেনি পিডিবি’র অধিভূক্ত এ কোম্পানীটি। তবে এসময়কালে কোম্পানিটির কর্মকর্তাÑকর্মচারীদের বেতন ভাতা তিনগুন এবং বিদ্যুতের দরও প্রায় আড়াইগুন বেড়েছে। কিন্তু গ্রাহকের ঘরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়ার ক্ষেত্রে এ কোম্পানিটির সফলতা তলানিতে।

খোদ বরিশাল মহানগরীর বিদ্যুৎ বিতরন ব্যাবস্থাও এখন সা¤প্রতিককালের নাজুক পর্যায়ে। তবে ওজোপাডিকো’র মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবী, তিন দশকেরও পুরনো সঞ্চালন, সরবারহ ও বিতরন লাইন সহ ওভারলোডেড ট্রান্সফর্মার সহ জরাজীর্ণ বিদ্যুৎ সরঞ্জাম দিয়ে এনগরীর বিতরন ব্যবস্থা চলছে সম্পূর্ণ যোড়াতালী দিয়ে। নগরীর যে প্রায় ২৫টি ফিডারে রূপাতলী, কাশীপুর ও পলাশপুর ৩৩/১১কেভী সাব-স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবারহ করা হচ্ছে, সেগুলোর পূণর্বাশন ও আধুনিকায়নও জরুরী। ২টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রূপাতলী থেকে কাশীপুর ও পলাশপুর সাব-স্টেশনমুখি ৩৩কেভী লইন পূণর্বাশন কাজ শুরু হলেও মাঝপথে থেমে আছে। অপরদিকে নগরীর বিতরন লাইন সহ ১১/.০৪ ট্রান্সফর্মার সহ সংযূক্ত সরঞ্জামাদীও দীর্ঘদিনের পুরনো। তবে গত এক দশকে এনগরীতে অন্তত ৫শ ১১/.০৪ ট্রন্সফর্মার পরিবর্তন করা হলেও সেগুলোর প্রয়াজনীয় রক্ষনাবেক্ষন হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এনগরীতে বিদ্যুতের দূর্বল ও ভঙ্গুর বিতরন ব্যাবস্থার জন্য নিয়মিত মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন-এর অভাবকে দায়ী করেন ওয়াকিবাহাল মহল। আর বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে ঘনবসতিপূর্ণ এনগরীতে ৩৩কেভী ও ১১কেভী লাইন ব্যবস্থাপনার জন্য স্থান সংক’লান না হবার কথা বলা হয়ে থাকে। তবে খোজ নিয়ে জানা গেছে, এনগরীর ১১কেভী ফিডারগুলোতে গড়ে ৪০টি করে ট্রন্সফর্মার থাকলেও তার নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষন সহ ১১কেভী সরবারহ ও .০৪কেভী বিতরন লাইনগুলোও নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষন হচ্ছেনা। ট্রান্সফর্মারগুলোর তেল পরিবর্তন সহ লুপ, জাম্পার সমুহও নিয়মিত পর্যবেক্ষন ও রক্ষানাবেক্ষনের অভাব রয়েছে।

গত দুদিন ধরে এনগরীর সার্কিট হাউজ ফিডার, আলেকান্দা ফিডার ও হাতেম অআলী কলেজ ফিডারে একাধীকবার গোলযোগের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হাতেম আলী কলেজ ফিডারটি ৮বার ট্রিপ করেছে। এছাড়াও ঐদিনন দুপুরে প্রয় দু ঘন্টা ৩টি ফিডার বন্ধ করে মেরামত কাজ করা হয়েছে। শণিবার রূপাতলীÑপলাশপুর ৩৩কেভী লাইনটি বন্ধ থাকায় বিকল্প ব্যবস্থায় কাশীপুর সাব-স্টেশন থেকে পলাশপুর সাব-স্টেশনে বিদ্যুৎ নিতে গিয়ে দুটি সাব-স্টেশনের প্রায় ১৪টি ফিডারে দিনের বেশীরভাগ সময়ই লোডসেডিং করতে হয়। এছাড়াও দপদপিয়া ৩৩কেভী সাব-স্টেশনটিও শণিবার দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। অথচ সারা দেশের মত এনগরীতেও কোন বিদ্যুৎ ঘাটতি নেই।

এনগরীতে বেশীরভাগ সময়ই কোন পূর্ব ঘোষনা ছাড়াই একেকটি ৩৩কেভী সাব-স্টেশন ঘন্টার পর ঘন্টা বন্ধ রেখে কাজ করা হচ্ছে। ফলে এনগরীর মানুষ বিদ্যুতের সাথে পানি ও জরুরী চিকিৎসা পরিসেবা নিয়েও চরম দূর্ভোগের মধ্যেই আছেন। ওয়াকিবাহাল মহলের মতে, বরিশাল মহানগরীর বিদ্যুৎ বিতরন ও সরবারহ ব্যাবস্থা নির্বিঘœ করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন ওজোপাডিকো’র মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলী থেকে শুরু করে কর্মচারীদের দায়িত্ব-কর্তব্যের প্রতি আন্তরিক হওয়া। গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জনেরও কোন বিকল্প নেই। পাশাপাশি যে দুটি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ মান সম্মতভাবে তা শেষ করারও কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন মহলটি।
এসব বিষয়ে ওজোপাডিকো’র ভারপ্রাপ্ত পরিচালক-কারিগরি ও প্রধান প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি সব কিছু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন সহ দিক নির্দেশনা প্রদান এবং মূল্যায়নের কথা জানান। খুব শিঘ্রই বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিতরন ও সরবারহ ব্যাবস্থায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তনের কথাও জানান তিনি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ