Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সড়কে গতির নেশা বাড়ছে মৃত্যু

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক : সপ্তাহের ব্যবধানে ৪ দুর্ঘটনা আইনের সঠিক প্রয়োগ নেই

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল : | প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

 চালকদের বেপরোয়া গতির প্রতিযোগিতা আর ক্লান্তিহীন পরিবহন পরিচালনায় প্রতিনিয়ত সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। কোন বাস কোনটাকে পেছনে ফেলে আগে যাবে এ নিয়ে রাত দুপুরেও চলে প্রতিযোগিতা। শুধু গাড়িতে থাকা যাত্রীরাই নন, বাসগুলোর এ প্রতিযোগিতার কাছে অসহায় সড়কপথে চলাচলকারি ছোট যানবাহন ও পথচারিও। ফলে সড়কে পা ফেলার আগেই সাধারণ মানুষের মাঝে প্রাণ কিংবা অঙ্গহানির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ দেশের অধিকাংশ মহাসড়কেই যানবাহনের গতি পরিমাপক যন্ত্রের (স্পিড ডিটেক্টরের) কোনো ব্যবহার নেই। ফলে চালকরা এ সুযোগে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। রাস্তায় যানবাহনের বেপরোয়া গতির সর্বশেষ উদাহরণ গত বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে কুমিল্লাগামি একটি দ্রæতগতির প্রিন্স পরিবহনের যাত্রীবাহি বাস ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দির হাসানপুর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়কের পাশে দাঁড় করানো সড়ক ও জনপথ বিভাগের রোলারের ওপর গাড়িটি উঠিয়ে দেয় চালক। এ ঘটনায় বাসের ২০ যাত্রী গুরুতর আহত হয়। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়।

বাসে থাকা আব্দুল্লাহ আল-মামুন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, হঠাৎ করে বিকট শব্দে আমরা সবাই সিট থেকে পড়ে যাই। বাসটি মুর্হুতের মধ্যে ধুমরে মু”রে যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার বারপাড়া এলাকায় গত বুধবার ভোরে একটি লবণ বোঝাই ট্রাকের চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে ট্রাকটি মহাসড়কের মাঝপথে উল্টে পড়ে। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। উল্টো পথে যানবাহন চলাচল করার পরও দাউদকান্দির বারপাড়া থেকে আমিরাবাদ পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লবণগুলো সরিয়ে নিলে এবং রেকার দিয়ে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক অন্যত্র সরানোর পর সকাল নয়টা থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়।

এ ছাড়াও গত বৃহস্পতিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় সুজাতপুর এলাকায় বাসচাপায় পথচারি অজ্ঞাত যুবক (২২) নিহত হয়। গত শুক্রবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনার মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কাভার্ডভ্যান চাপায় অজিত কুমার দাস (৭০) নামে এক পথচারি নিহত হয়।

ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির এস.আই মো. রিপন আহমেদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, দুর্ঘটনার পরপর ঘাতক কাভার্ডভ্যানটি আটক করা হয়েছে। চালক পলাতক রয়েছে। সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ না থাকায় প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনা। সাধারণের মতে, সড়ক দুর্ঘটনারোধে সরকারের সুদৃষ্টির অভাব সে সঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি আর আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় এসব ঘটনা বেড়েই চলেছে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে কোনো মামলা হয় না। আবার মামলা হলেও নিষ্পত্তি হতে দীর্ঘ সময় লাগে। অন্যদিকে আইনের সঠিক বাস্তবায়ন না থাকায় অপরাধীরা অপরাধ সংঘটিতের ক্ষেত্রে কোনো শঙ্কাবোধও করেন না। এ কারণে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে এসব অপরাধ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় হাত-পা হারানো আহত ও নিহতদের পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তারা কেউ এখন পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় অপরাধীর শাস্তি পেতে দেখেননি।

হাইওয়ে পুলিশের দাউদকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আসলে অনেক কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। এর জন্য চালকদের অসচেতনতা যেমন দায়ি, তেমনি রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে পথচারিদের নিয়ম না মানাও দায়ি। এছাড়া রাস্তা নির্মাণজনিত ক্রটি, গাড়ির ফিটনেস না থাকা, রাস্তা ঘেঁষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি, অনেক জায়গায় জেব্রা ক্রসিং না থাকা ইত্যাদি কারণে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, আমরা নিজ উদ্যোগে চালকদের স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে আসছি, যা যথেষ্ঠ নয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিবছর তাঁদের জন্য ঝালাই প্রশিক্ষণের (রিফ্রেশন কোর্স) ব্যবস্থা করতে হবে।

বিআরটিএ কুমিল্লা সহকারি-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনারোধে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি। চালকদের সচেতন ও দক্ষ করে তুলতে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দেয়ার সময় তাদের প্রশিক্ষণও দিচ্ছি। অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দ্রæত গতির পাশাপাশি কম গতির যানবাহন চলাচল করাও দুর্ঘটনার আরেকটি কারন।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্য বলছে, দেশে ৫৩ শতাংশ দুর্ঘটনার কারণ অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো এবং ৩৭ শতাংশ চালকের বেপরোয়া মনোভাব। অর্থাৎ সড়কে দুর্ঘটনার জন্য ৯০ শতাংশই দায়ি চালক নিজেই।
বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা বলছে, চালকদের প্রশিক্ষিত না করে গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া, তাদের দক্ষতা যাচাই না করা এবং সেই সঙ্গে সড়ক আইনের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে অবহিত না করেই লাইসেন্স দেয়ায় মূলত: এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে। এছাড়া মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, নিয়ম না মানার প্রবণতাও বেশ। অপরাধের সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তারাও উপযুক্ত শাস্তি পাচ্ছে না। ফলে দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্ঘটনা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ