Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হজযাত্রায় ব্যাংকের চড়া সুদের দায় এজেন্সিগুলোর কাঁধে

প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আছেন অপেক্ষমাণ হজযাত্রীরা

প্রকাশের সময় : ৩ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামসুল ইসলাম : বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চড়া সুদের দায় নিয়ে হজযাত্রায় পা বাড়াতে হচ্ছে আল্লাহ’র মেহমানদের। এবারই প্রথম মুসলমানদের ধর্মীয় অনুশাসনের একটি ফরজ কাজ (হজ) সম্পন্ন করতে ব্যাংকের চড়া সুদের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে হজযাত্রীদের হজে যেতে হচ্ছে। এ নিয়ে হজযাত্রীদের মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি’র বহির্ভূত নির্দেশনা মানতে গিয়ে বেসরকারী হজ এজেন্সিগুলো হজ প্যাকেজের পুরো টাকা ব্যাংকে জমা দেখাতে গিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে চড়া সুদে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে। এসব সুদের দায় সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সিগুলোর কাঁধে বর্তাবে। হাব কর্তৃপক্ষ এ জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়কে দায়ী করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শুক্রবার সউদী আরবে রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী সউদী সফরকালে সউদী বাদশাহর সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের অপেক্ষমাণ প্রায় ৩৫ হাজার হজযাত্রীর জন্য অতিরিক্ত কোটা বরাদ্দের প্রস্তাব উত্থাপন করবেন কিনা তার জন্য হজযাত্রীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। হজযাত্রী কল্যাণ সংস্থা বাংলাদেশ-এর সভাপতি আলহাজ এইচ এম মুুজিবুল হক শুক্কুর গতকাল ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ইতিপূর্বে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ১০ হাজার হজযাত্রী’র অতিরিক্ত কোটা বরাদ্দ চেয়ে সউদী হজমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। সউদী সরকার এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। সউদী-বাংলাদেশ দ্বি-পাক্ষিক হজ চুক্তি অনুযায়ী এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ১ হাজার ৭শ’ ৫৮জন হজযাত্রী হজ পালনে সউদী যাওয়ার সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে সরকারী ব্যবস্থাপনায় ১০ হাজার বাকি সব বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় হজে যাবে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবার কথা। আগামী ৭ জুনের মধ্যে সকল হজযাত্রীর প্যাকেজের পুরো টাকা ৩ লাখ ৪ হাজার ৯০৩ টাকা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের একাউন্টে জমা দেখিয়ে চূড়ান্ত নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। তার পরেই হজযাত্রীরা পিলগ্রিম আইডি পাবেন।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিয়োগকৃত আইটি ফার্ম বিজনেস অটোমেশন লিমিটেডের ইন্ধনে ধর্ম মন্ত্রণালয় হজের পুরো টাকা আইটি থেকে ভাউচার বের করে ব্যাংকে টাকা জমাদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যা জাতীয় হজনীতি’র পরিপন্থী বলে হাব কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছেন। হাব সভাপতি মোঃ ইব্রাহিম বাহার বলেছেন, প্রাক-নিবন্ধনের পর পিলগ্রিম আইডি পেতে চূড়ান্ত নিবন্ধনের জন্য জাতীয় হজনীতির ৩.৮-এর ধারা অনুসরণ করা হলে কোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে চড়া সুদে ঋণ (অনৈতিক ঋণ) নিয়ে হজের পুরো টাকা ব্যাংকে জমা দেখানোর প্রয়োজন হতো না। হাব সভাপতি বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয় গত ১৫ মে এক চিঠিতে পিলগ্রিম আইডি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বেসরকারী হজযাত্রীদের হজ প্যাকেজের অবশিষ্ট অর্থ জমা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট অর্থ জমা প্রদানের ক্ষেত্রে মুয়াল্লেম ফি জমা প্রদানের একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে যা ২০১৬-এর হজ প্যাকেজের ৩.৮ ধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ভাউচার-এর মাধ্যমে হজ এজেন্সিকে হজযাত্রীর অবশিষ্ট অর্থ ব্যাংকে জমা করা এবং এ অর্থ ব্যাংকে সংরক্ষণ করার বিষয়ে জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতিতে বলা হয়নি। পক্ষান্তরে হজ প্যাকেজে হজ এজেন্সি’র নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে অবশিষ্ট অর্থ জমাপূর্বক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের যথাযথ কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষরিত ও হাব কর্তৃপক্ষ প্রতিস্বাক্ষরিত ব্যাংক স্টেটমেন্ট (জমা বিবরণী) হজ অফিসে জমাদান নিশ্চিত করার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। হাব সভাপতি গত ৩০ মে এক চিঠিতে হজ প্যাকেজে বর্ণিত ৩.৮ ধারা মতে হজযাত্রীদের অবশিষ্ট অর্থ গ্রহণের বিষয়ে উল্লেখিত ধারা প্রতিপালন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে এবং লীড এজেন্সি’র একাউন্টে সকল অর্থ জমাকরণ সংক্রান্ত বিষয়টি স্পষ্টি করতঃ স্ব স্ব হজ এজেন্সির একাউন্টে অর্থ জমা করার নির্দেশ দেয়ার জন্য ধর্মমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন হজ এজেন্সির মালিক ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশের হজযাত্রীগণ হজের টাকা বিদেশে কর্মরত আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে যোগাড় করেন। কেউ জমির ফসলাদি ও জমিজমা বিক্রি করে মাহে রমজানে হজের টাকা পরিশোধ করেন। এ জন্য অনেকেই এখনো হজের পুরো টাকা পরিশোধ করেতে পারেননি। হাব সভাপতি ইব্রাহিম বাহার বলেন, আইটি ফার্ম বিজনেস অটোমেশনের ইন্ধনে সরকার ভাউচারের মাধ্যমে হজের অবশিষ্ট টাকা জমা নিচ্ছে। এতে পুরো টাকা ব্যাংকে জমা দিতে বেশি সমস্যা হচ্ছে। কারণ, হজ এজেন্সিগুলো হজযাত্রীদের টাকা হাতে পেয়ে মক্কা-মদিনায় বাড়ী ভাড়ার টাকা অগ্রিম পাঠিয়ে দিয়েছে। অনেক ক্যাটারিং সার্ভিসের টাকাও অগ্রিম পাঠানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে হজযাত্রীদের পুরো প্যাকেজের টাকা ব্যাংকে জমাকরণের সবচেয়ে বেশি জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক হজযাত্রী বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি সুবাদে বিমানের টিকিট ফ্রি নিয়ে হজে গিয়ে থাকেন, তাদের হজের পুরো টাকা জমাকরণেও জটিলতা দেখা দিয়েছে। এছাড়া অনেক সরকারী চাকরিজীবী হজযাত্রীরা হজের আংশিক টাকা জমা দিয়ে প্রাক-নিবন্ধন করেছেন। তারা এখনো পেনশনের টাকা হাতে পাননি। এ জন্য এসব হজযাত্রীর পুরো টাকা জমা না দিতে পেরে সরকারের চাপের মুখে অনেক হজ এজেন্সি বাধ্য হয়েই ব্যাংক থেকে অনৈতিক ঋণ নিয়ে হজের টাকা ব্যাংকে জমা দেখাচ্ছে। এতে হজ এজেন্সিগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং ব্যাংকগুলো আর্থিক ফায়দা লুটছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হজযাত্রায় ব্যাংকের চড়া সুদের দায় এজেন্সিগুলোর কাঁধে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ