Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ভারতের নির্যাতিত বিপন্ন মুসলমানদের পাশে দাঁড়ান

রূহুল আমীন খান | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘ইন্নামাল মুমিণূনা ইখ্ওয়াহ-ফআস্লিহু বাইনা আখ্ওয়াই কুম’ মুসলমানরা পরস্পরে ভাই ভাই। তোমরা তোমাদের ভাইদের পরস্পরের মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপন করে দাও’। বিশ্বনবী (সা.) বলেন, মুসলমানরা পরস্পরে ভাই। সে তার প্রতি জুলুম করবে না এবং তাকে শত্রুর নিকট সমর্পণ করবে না। যে মুসলিম অপর মুসলিম ভাইয়ের বিপদ-দূর করার চেষ্টা করে আল্লাহতায়ালা তার বিপদ দূর করে দেন। যে মুসলিম অপর কোন মুসলিম ভাইয়ের একটি কষ্ট দূর করে দেন আল্লাহপাক কিয়ামতের কষ্টসমূহের তার একটি কষ্ট দূর করে দেবেন। (বুখারী ও মুসলিম প্রিয় নবী (সা.) আরো বলেন, দুনিয়ার মুসলমান মিলে একজন মানুষের মত। যদি তার চক্ষু যন্ত্রণা প্রাপ্ত হয় তবে তার সর্বশরীর যন্ত্রণা প্রাপ্ত হয়। এরূপ যদি তার মাথা আক্রান্ত হয় তবে তার সর্বশরীর যন্ত্রণায় অধীর হয়। অর্থাৎ দুনিয়ার প্রায় দুই শত কোটি মুসলমান কেবলমাত্র একটি জাতি, মিল্লাত বা উম্মাহ নয়। সবমিলে একটি দেহ। এই দেহের কোন একটি অঙ্গ যদি আঘাত প্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ দুনিয়ার কোথাও একটি মুসলমানও যদি আক্রান্ত হয়, আঘাত প্রাপ্ত হয় তবে দুনিয়ার প্রতিটি মুসলমানেই সে যন্ত্রণা অনুভব করবে এবং সেই যন্ত্রণা, সেই কষ্ট দূর করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। যতক্ষণে না সেই যন্ত্রণা দুরীভূত হয় সে চেষ্টা চালিয়ে যাবে। অব্যাহত রাখবে। এই হলো মুসলমানের সংজ্ঞা বা পরিচয় প্রশ্ন হল সেই পরিচয় আমরা কি দিতে পারছি।’ যেখানে আমাদের ভাইয়েরা লাঞ্ছিত হচ্ছে, অপমানিত হচ্ছে, মার খাচ্ছে, খুন হচ্ছে, প্রাণ হারাচ্ছে, আমাদের মা বোনরা নরপিচাশদের হাতে নিগৃত হচ্ছে, আব্রু ইজ্জত হারাছে, ধর্ষণ, গণধরনের শিকার হচ্ছে। তা প্রতিহত করার জন্য উম্মাহ হিসাবে আমরা কি সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করছি? এ সমস্যা ও প্রশ্ন দীর্ঘদিনের হলেও সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে যা ঘটছে তাতে আবার নতুন করে এ জিজ্ঞাসা তীব্র আকারে সম্মুখে এসেছে। বিশেষ করে গত ২৬ জুলাই দৈনিক ইনকিলাবের প্রথম পৃষ্ঠায় ‘ভারত তো মানুষের দেশ’ শীর্ষক যে মন্তব্য প্রতিবেদন কি প্রকাশিত হয়েছে তা পাঠকের আতঙ্কিত হয়েছি। ব্যথাহত হয়েছি, প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছি। এ নিবন্ধে ওই প্রতিবেদন থেকে প্রথমে কিছু উদ্ধৃতি পেশ করব। যাতে যারা সেদিনকার পত্রিকা পাঠ করেননি তা অবহিত করতে পারেন, কর্তব্য নির্ধারণ করতে পারেন এবং যার যে অবস্থান থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারেন।

তাবরেজ আনসারী নামের ২৪ বছরের এক মুসলিম যুবক, ভারতের বনাখন্ডের জামশেদপুরের খার সাওয়ান্দ সারাই বেলাতে তার নিবাস। ‘স্থানীয়রা রোববার চোর সাব্যস্ত করে ওই যুবককে। তাকে বেদম মারপিট করা হয়। এরপর তাকে রোববার সকালে ভর্তি করা হয় সদর হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে স্থানান্তর করা হয় জামসেদপুরের টাটা মেইন হাসপাতালে। তার পরিবারের দাবি, তার ওপর যে হামলা হয়েছে তা সাম্প্রদায়িক। তাকে জয় শ্রী রাম এবং ‘জয় হনুমান’ স্লোগান দিতে বাধ্য করা হয়েছে। পরিবার আরো বলেছে, কিছু মানুষ তাবরেজকে প্রচন্ড মারপিট করে। পরে তাকে তুলে দেয় পুলিশে। চুরির সন্দেহে তার সঙ্গে এমন আচরণ করা হলেও সে সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার। তাকে মরপিট করা হয়েছে সে একজন মুসলিম বলে।“বারবার তাবরেজকে ‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘জয় হনুমান’ স্লোগান দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তাকে হাসপাতালে দেখতে যেতে চাইলেও আমাদের (আত্মীয়দের) অনুমতি দেয়া হয়নি।

“ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনি কাতর কণ্ঠে বলতে থাকেন, আমার মা মারা গেছেন। তার নামে শপথ করে বলছি, আমি এমন কাজ করিনি।” দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার বরাতে লেখা হয়েছে- “ভারতের গত নির্বাচনের বহু আগ থেকে যে সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা কিছু নেতা সৃষ্টি করেছিলেন নির্বাচনের পরেও তা যথারীতি চলছে।....এসব নেতার ইঙ্গিত আছে বলেই পরিস্থিতি নির্বাচন চলে যাওয়ার এত পরেও শান্ত না হয়ে দিন দিন বরং আরও উত্তপ্ত হচ্ছে।’ স্যোশাল মিডিয়ায় দেখবেন, কোনো মুসলিম বাড়িতে বজরং দল কিংবা আর এস এস নামধারী যুবকরা প্রবেশ করে বাড়ির নারী-পুরুষ-শিশুকে নির্মমভাবে পেটাচ্ছে। ঘরের দরজা এঁটে দিনে-দুপুরে শ্লীলতাহানি করছে। ঠিক গুজরাতের নৃশংসতার মতো, সেখানে হাজার হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছিল। মুসলিম এমপিকে তাঁর বাসায় গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছিল।

সাম্প্রদায়িক গুন্ডারা প্রকাশ্যে রাজপথে মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করে। নিজেদের লোক দিয়েই ভিডিও ধারণ করেছিল। আজকের প্রধানমন্ত্রী মোদি তখন গুজরাতের দায়িত্বে ছিলেন। যে পুলিশ কর্মকর্তা গুজরাতের ঘটনার জন্য দায়ীদের চিহিৃত করে রিপোর্ট দিয়েছিলেন তিনি এখন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি।”

“একটি মাইক্রোবাস থামিয়ে নিরীহ একজন দাড়ি-টুপিওয়ালা লোককে সাম্প্রদায়িক যুবকরা চর-থাপ্পর মারছে। বলছে, বল, জয় শ্রীরাম। লোকটি প্রাণের ভয়ে ভয়ে ‘শ্রী রাম’ বললেও কিল, চড় ও গালি থামছে না। অপর এক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে সত্তর বছরের এক বৃদ্ধকে এমনভাবে সাম্প্রদায়িক যুবকরা মারধোর করছে যেমনটি মানুষ সন্ত্রাসী চোরকেও করে না। একপর্যায়ে রক্তাক্ত ও আহত এ বৃদ্ধকে শূকরের মাংস খেতে বাধ্য করা হয়।’ “ত্রিপুরায় সবচেয়ে ধনী মুসলমানের বাড়িটিকে শত শত সাম্প্রদায়িক লোক লুটপাট করে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। প্রতিদিন বহু বাড়িঘর ও দোকান হয় জ্বালিয়ে দেয় হচ্ছে, নয়তো ভেঙে তছনছ করে দেয়া হচ্ছে।

দু’তিনজন শ্রমিক শ্রেণীর লোককে বিজেপির কর্মী, আরএসএস এবং বজরাঙ্গী ইত্যাদি নামধারী কিছু যুবক আচ্ছারকম জুতাপেটা, কিলঘুষি, লাথি এমন কি লাঠিপেটা করছে। তাদের অপরাধ- এসব হতদরিদ্র ভুখা নাঙ্গা শ্রমিকরা নাকি গরুর গোশত খেয়েছে।’

‘অনলাইনে প্রায়ই দেখা যায়, তারাবির নামাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, আজানের মাইক খুলে দেয়া হচ্ছে, মুসলমানদের মসজিদ থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেয়া হচ্ছে।

....একটি মসজিদ ভেঙে চুরমার করে ফেলা হেচ্ছ।...শত শত নামধারী উগ্রহিন্দুবাদী যুবকরা হাঁকডাক করছে মসজিদটিকে গুঁড়িয়ে দেবে বলে। ঈদের নামাজ চলাকালে তীর-ধনুকের হামলা আর বুকে তীরবিদ্ধ যুবক, মুসল্লিদের রক্তমাথা ঈদুল ফিতর দেখেননি এমন ফেইবুক বোধ হয় নেই।’ “এখানো প্রায়ই প্রত্যন্ত গ্রাম ও মহল্লা থেকে অসংখ্য কিশোরী তরুণী কণ্ঠের আর্তনাদ ভয়েস রেকর্ডে শোনা যায়, যারা দুনিয়ার মানুষকে ডেকে বলে, আমরা সংখ্যালঘু ও খুবই বিপন্ন ঘরের মেয়ে। প্রতিরাতেই উগ্রসাম্প্রদায়িক গুন্ডারা আমাদের ঘরে আসে। নিয়মিত আমাদের ওপর অত্যাচার চালায়। দুনিয়ায় কি এমন কোনো মানুষ নেই যারা আমাদের নিজের মেয়ে, মা, বোন মনে করে এসবের কোনো প্রতিকার করতে পারেন? অনলাইনে ভারতের সরকারের কিংবা সরকারি দলের কিছু দায়িত্বশীলকে প্রায়ই ভিডিও ক্লিপ বানিয়ে ছাড়তে দেখা যায়, এদেশ হিন্দুর দেশ, মুসলমান এখানে থাকতে পারবে না। ওদের আমরা ধ্বংস করব। তাড়িয়ে দেব ইত্যাদি।’

উদ্ধৃতি দেবার মত আরো অনেক আছে। মুসলমানদের ওপর অকথ্য জুলুম নির্যাতন, মারধোর হত্যা, মুসলমান মা, বোন, কন্যাদের ইজ্জত হুরমাত লুণ্ঠন। তাদের বাড়িঘর ধ্বংসকরণ, লুণ্ঠন, আযান, নামাজে বাধা প্রদান, মসজিদ ধ্বংস করা। মুসলমান যুবক, বৃদ্ধকে, জয় রাম, ‘জয় হনুমান’ স্লোগান দিতে বাধ্য করা, শূকরের মাংস খাইয়ে দেয়া ইত্যাদি দেখে-শুনেও প্রায় দুশ’ কোটি মুসলমানদের সংস্থা ওআইসি, কিছু বলবে না? প্রতিবাদ করবে না? সোচ্চার হবে না? মোদি সরকারের ওপর এই উগ্রসাম্প্রদায়িকতা বন্ধ করার জন্য কি কোনো চাপ সৃষ্টি করবে না?

আমরা সংগঠন হিসাবে ওআইসির প্রতি দাবি জানাই, এই নিষ্ঠুর নির্মম পৈশাচিকতা থেকে ভারতীয় মুসলমানদের রক্ষা করার জন্য, তাদের স্বাধীনভাবে, নিরাপদে ধর্মকর্ম পালনের জন্য, তাদের জানমাল ইজ্জত-আব্রু হেফাজতের জন্য অচিরেই যেন ভারত সরকার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে তজ্জন্য প্রস্তাব গ্রহণ করুন। মোদি সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করুন। এ দাবি আমরা, জাতিসংঘ, বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার প্রতিও জানাই। স্বতন্ত্রভাবে প্রতিটি মুসলিম দেশ ও রাষ্ট্র নেতাদের প্রতিও জোর আবেদন জানাই আমরা আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় সংগঠনের কাছেও এ আবেদন পেশ করছি। আমাদের দেশে এমন বহু ধর্মীয় নেতা, সংগঠন, এমন খ্যাতিমান পীর-মাশায়েখ রয়েছেন যাদের কোটি কোটি ভক্ত অনুসারী রয়েছেন, লাখ লাখ মসজিদের ইমাম সাহেববান আছেন তাদের প্রত্যেকের কাছে আবেদন জানাই, এই সব বিপন্ন মুসলমানদের রক্ষার জন্য আপনারাও প্রতিবাদ জানান। ভারত সরকারের কাছে দাবি জানান।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী বিপন্ন রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষার জন্য অনুপম নজির স্থাপন করে সমগ্র বিশ্বে যেমন প্রশংসিত হয়েছেন ভারতীয় মজলুম মুসলমানদের রক্ষার জন্য যেমনটা সম্ভব তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। আমরা ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র সে বন্ধুত্ব রক্ষা করা এক কথা, আর বিপন্ন মুসলমানদের অধিকার রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া আর এক কথা। এ দাবি মানবতার দাবি মানবাধিকারের দাবি। আমরা আমাদের দেশের অন্যান্য ধর্মের সংগঠন ও নেতৃবৃন্দের কাছেও আবেদন জানাচ্ছি, আপনারাও বিপন্ন মানবতার পক্ষে কথা বলুন। মানবতার ডাকে সাড়া দিন।

‘আমরা ভারতের বন্ধু রাষ্ট্র’। আমাদের কথা ভারতের বিরুদ্ধে নয়, ভারতের মুসলমানদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন তাদের ধর্মীয় অধিকার মানবাধিকার দলন, হরণের বিরুদ্ধে। আমরা এ নিবন্ধের শুরুতেই বিশ্বনবী (সা.)-এর হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়েছি। তাঁর বাণী : গোটা দুনিয়ার মুসলমান মিলে একটি মানুষ, একটি দেহ। প্রতিটি মুসলমানই আমাদের দেহেরই এক একটি অঙ্গ। আমরা যদি সত্যিকার মুসলমান হয়ে থাকি তবে দুনিয়ার যেকোনো দেশে, যেকোনো প্রান্তে একটি মুসলমানও যদি দুর্দশার শিকার হয়, তবে তার ব্যথা আমাদের প্রত্যেককেই অনুভব করতে হবে এবং তা নিরসনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে। শুধু আমাদের দেশের মুসলমাদেরই এটা দায়িত্ব নয়, পৃথিবীর প্রায় দুশ’ কোটি মুসলমানেরই এটা দায়িত্ব ও কর্তব্য। মুসলমানদের ইতিহাস তো এই। ইছায়ী অষ্টম শতকের প্রারম্ভে তৎকালীন ভারতের সিন্ধু প্রদেশে রাজা দাহিরের দ্বারা কয়েকজন মুসলমান নারী মজলুম হলে, তাদের উদ্ধার করার জন্য সুদূর ইরাক থেকে মুহাম্মদ বিন কাসিম ছুটে এসেছিলেন মুজাহিদদের নিয়ে। হয়েছিল রাজা দাহিরের পতন, সিন্ধুতে উড্ডীন হয়েছিল ইসলামী ঝান্ডা। আমরা তো মুসলমান ভাইদের জন্য মুসলমান ভাইদের ভালোবাসা, ত্যাগ, দায়িত্ব ও কর্তব্যের নজির দেখেছি মদীনার মুহাজির ও আনসারদের বেলায়।

প্রিয়নবী (সা.)-এর আহ্বানে তাঁরা মায়ের পেটের ভাইয়ের মত হয়ে গিয়েছিলেন। যে আনসারের দোতলা বাড়ী ছিল তার একতলা মুহাজির মুসলমান ভাইকে দিয়ে দিয়েছিলেন। সম্পদ, খেজুর বাগান সব ভাগ করে দিয়ে দিয়েছিলেন। এমন কি যে আসনার ভাইয়ের দু’জন স্ত্রী ছিল কিন্তু মুহাজির ভাইয়ের স্ত্রী ছিল না এবং বিবাহ করার সামর্থও ছিল না তখন আসনার ভাই তার এক স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ইদ্দত অন্তে মুহাজির ভাইকে বিবাহ করিয়ে দিয়েছিলেন। [ইসলামী ভ্রাতৃত্বের, ত্যাগের, মহানুভবতার এমন উদাহরণ আছে হাজার হাজার ইয়ারমুকের যুদ্ধ ক্ষেত্রে মারাত্মকভাবে আহত ও মুমূর্ষু এক মুসলিম মুজাহিদ পানি পানি বলে আর্তনাদ করছিলেন। আওয়াজ শুনে তারাই চাচাতো ভাই এক স্বেচ্ছাসেবক এগিযে এলেন পানি নিয়ে পেয়ালা ধরলের তার ঠোঁটের কাছে ঠিক সে সময় অদূরে আরেক আহত সৈনিকের কণ্ঠস্বর শোনা গেল, পানি! একটু পানি!! পানোদ্যত ১ম সৈনিক চুমুক আর দিলেন না। বললেন, যাও ওকে আগে পান করিয়ে এসো। স্বেচ্ছাসেবক দৌড়ে গেলেন তার কাছে, ধরলেন মুখের কাছে পানির পেয়ালা, পান করতে যাবেন তিনি, এমন সময় তৃতীয় এক মুমূর্ষু সৈনিকের করুণ আকুতি ভেসে এলো, পানি! একটু পানি! দ্বিতীয় সৈনিকও প্রথম সৈনিকের মত পানি পান না করেই বললেন, ওকে আগে পান করিয়ে আমার কাছে আস। দৌড়ে গেলেন পানির পেয়ালা নিয়ে তার কাছে। ধরলেন ঠোঁটের কাছে কিন্তু পান করছেন না। স্বেচ্ছাসেবক গভীরভাবে তাকিয়ে দেখলেন, তার আর পানি পানের ক্ষমতা নেই, ইতোমধ্যে ইন্তেকাল করেছেন, ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। দৌড়ে এলেন দ্বিতীয়জনের কাছে, দেখলেন তিনিও ইন্তেকাল করেছেন, হায় হায় করে তিনি দৌড়ে এলেন তাঁর চাচাতো ভাই প্রথম মুমূর্ষু মুজাহিদের কাছে, দেখলেন পানি পানের প্রয়োজন তাঁরও আর নেই। ইন্তেকাল করেছেন তিনি। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। স্বেচ্ছাসেবকের হাতের পানি ভর্তি পেয়ালা হাতেই থেকে গেল। এই হচ্ছে সব মুসলমান মিলে যে একটি দেহ- তার উদাহরণ। আজকে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের এই দুদিনে এই ইসলামী মূল্যবোধকে, আদর্শকে, কর্তব্যবোধকে নতুন করে জাগ্রত করতে হবে, আমরা দেশের প্রতিটি মুসলমানের প্রতি আবেদন জানাই আসুন। আমরা মুসলমান হিসাবে এসময়ের দায়িত্ব পালন করি। রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে মানবতার ডাকে সাড়া দিই। মুসলমান হিসাবে। আশু কর্তব্য পালন করি।



 

Show all comments
  • habib ২৯ জুন, ২০১৯, ৯:৪৭ এএম says : 1
    OIC Muslims country should take urgent punitive action over India to stop killing Muslim minority in India.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন