Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মজলিসের আদব ও শিষ্টাচার-২

উবায়দুর রহমান খান নদভী | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

গত আলোচনায় মজলিসের আদব ও শিষ্টাচারের আলোচনা করা হচ্ছিল। কয়েকটি আদব ও ভদ্রতার কথা আমরা উল্লেখ করেছিলাম। আজ আরো কয়েকটি আদব নিয়ে আলোচনা করতে চেষ্টা করব। চলাচলের রাস্তায় বসা মোটেই সমীচীন নয়। কারণ, এতে মানবিক মর্যাদা ক্ষুণœ ও অপাঙ্ক্তেয় হয়। তা ছাড়া রাস্তায় চলাচলকারীদের প্রতি উদ্দেশ্যপূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করাও বদ আখলাকি কাজ। কিন্তু কোনো প্রয়োজন যদি বাধ্য করে, তাহলে এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সা. কতিপয় নীতিমালা পালন করার উপদেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ দৃষ্টি অবনত রাখা, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাস্তা থেকে দূরে রাখা, সালামের জবাব দেয়া, নেককাজের হুকুম করা, বদির কাজ থেকে বিরত থাকা, পথভ্রান্তদের পথের দিশা প্রদান করা এবং বিপদে নিপতিতদের সাহায্য করা ইত্যাদি

মানুষের ওপর সোহবত ও সাহচর্যের প্রভাব পড়ে বেশি। এ জন্য নিজেদের সহগামী, সহযাত্রী ও সঙ্গী-সাথী নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হবে যে, সে যেন এমন লোক হয়, যার সাহচর্যে উপকৃত হওয়া যায়। প্রত্যেক মানুষ যার সাহচর্য কামনা করে এতে তার সহজাত যোগ্যতা এবং প্রকৃতি সম্পর্কে পরিচয় লাভ করা যায়। এ দিকনির্দেশনাকে রাসূলুল্লাহ সা. এভাবে বলেছেন, প্রাণশক্তি একটি সম্মিলিত সেনাবাহিনী, যাদের মাঝে পারস্পরিক পরিচয় ও সম্প্রীতি সৃষ্টি হয়। এদের মাঝে ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, কিন্তু অপরিচিতির একটা ছোঁয়াচ থাকে। এতে বিভেদ, মতপার্থক্য ও এখতেলাফ সৃষ্টি হয়। একটি বিখ্যাত উদাহরণ এই যে, যদি কারো চরিত্রের পরিচয় লাভ করতে চাও, তাহলে তার বন্ধুবান্ধবের চরিত্রের পরিচয় গ্রহণ করো।

এই বিশেষত্বটি রাসূলুল্লাহ সা. এভাবে প্রকাশ করেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর ধর্মের অনুসারী হয়। এ জন্য সকলেরই লক্ষ রাখা উচিত যে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে।’ তারপর তিনি বলেছেন, ‘উত্তম বন্ধু এবং অধম বন্ধুর উদাহরণ সুগন্ধি বিক্রেতা ও কামারের ভাটির মতো। সুগন্ধি বিক্রেতা থেকে তোমাদের অবশ্যই কিছুটা উপকার হবে। হয় তুমি তা ক্রয় করবে অথবা এর সুগন্ধি লাভে ধন্য হবে। কিন্তু কামারের ভাটি তোমাদের ঘর অথবা পরিচ্ছেদ জ্বালিয়ে দেবে অথবা এর দুর্গন্ধ তোমাদের মন-মস্তিষ্ককে বিগড়ে দেবে।

মজলিসে যে স্থানটি সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ সেখানে নিজে নিজে বসার চেষ্টা না করা উচিত। যদি অন্য কারো নিকট যাওয়া হয়, তবু তার অনুমতি ভিন্ন সেখানকার মর্যাদাপূর্ণ আসনে বসা উচিত নয়। রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘স্বীয় ভ্রাতার স্থানে তার অনুমতি ভিন্ন কেউ যেন না বসে।’

অধিকাংশ সময় এমনও হয় যে, মানুষ মজলিসে এই চেষ্টাও করে যে, সেই মর্যাদাপূর্ণ স্থানে নয়, তবে এর নিকটতম স্থানে বসার চেষ্টা করে। এর ফলে সভাপতির নিকটস্থ সঙ্কীর্ণ হয়ে যায় এবং সেখান থেকে লোকজনের সামান্য নড়াচড়া করা এবং অন্যের জন্য স্থান করার কথা বলা হলে খারাপ মনে করে। এ জন্য আল্লাহপাক এই শিষ্টাচারকে এভাবে শিক্ষা দিয়েছেন।

ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে মুমিনগণ, যখন তোমাদের বলা হবে, মজলিসে স্থান প্রশস্ত করে দাও, তখন তোমরা স্থান করে দিয়ো, আল্লাহ তোমাদের জন্য স্থান প্রশস্ত করে দেবেন এবং যখন বলা হয়, উঠে যাও, তোমরা উঠে যেয়ো। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদায় উন্নত করবেন, তোমরা যা করো আল্লাহ সে সম্পর্কে সবিশেষ অবগত।’



 

Show all comments
  • Sayem Ahmed ৩০ জুন, ২০১৯, ৩:১৮ এএম says : 0
    মজলিসে বা সভায় বসার পরে কেউ কোন প্রয়োজনে উঠে গেলে তার জায়গায় বসা উচিত নয়। আর যদি কেউ কারো আসনে বসে পড়ে তাহ’লে ঐ ব্যক্তি ফিরে আসলে তার জায়গা তাকে ছেড়ে দিতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِذَا قَامَ الرَّجُلُ مِنْ مَجْلِسٍ ثُمَّ رَجَعَ إِلَيْهِ فَهُوَ أَحَقُّ بِهِ. ‘কোন ব্যক্তি যখন নিজের আসন হ’তে উঠে গিয়ে (কোথাও গিয়ে পুনরায়) ফিরে আসে তাহ’লে সেই হবে তার পূর্বোক্ত আসনের অধিক হক্বদার’।
    Total Reply(0) Reply
  • জাবেদ ৩০ জুন, ২০১৯, ৩:১৮ এএম says : 0
    সভা-সমাবেশ, বৈঠকে বসার ইসলামী আদব বা শিষ্টাচার মেনে চলা যরূরী। এর মাধ্যমে ইহকালে যেমন সুফল পাওয়া যাবে, তেমনি পরকালীন জীবনে অশেষ ছওয়াব হাছিল করা যাবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলামী আদব বা শিষ্টাচার মেনে চলার তাওফীক দান করুন-আমীন!
    Total Reply(0) Reply
  • Sahriar Kibria ৩০ জুন, ২০১৯, ৩:১৮ এএম says : 0
    হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন মজলিসে বসে এবং তাতে যদি অনেক বেশি অপ্রয়োজনীয় ও বাজে কথা বলা হয়ে গিয়ে থাকে, তাহলে মজলিস থেকে উঠার আগে সে যেন বলে, “হে আল্লাহ! তুমি পাক-পবিত্র, প্রশংসা তোমার জন্য, আমি সাক্ষ্য দিই যে, তুমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাই এবং তোমার কাছে তওবা করি।” তাহলে ঐ মজলিসে যা কিছু হয়েছিল সব মাফ করে দেয়া হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • Mustafizur Rahman ৩০ জুন, ২০১৯, ৩:১৯ এএম says : 0
    জাবির ইবনে সামুরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা যখন নবী (সা)-এর খেদমতে হাযির হতাম তখন আমাদের প্রত্যেকে সেখানে বসে পড়েতো যেখানে মজলিসের লোকজনের বসা শেষ হয়েছে। ইমাম আবু দাঊদ ও ইমাম তিরমিযী হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। ইমাম তিরমিযী এটিকে হাসান হাদিস বলেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mirza Anik Hasan ৩০ জুন, ২০১৯, ৩:১৯ এএম says : 0
    ইবনে উমার (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেনঃ তোমাদের কোন ব্যক্তি যেন কাউকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সেখানে না বসে। বরং তোমরা জায়গা বিস্তৃত করে দাও এবং ছড়িয়ে বসো। ইবনে উমার (রা)-র জন্য কোন ব্যক্তি নিজের জায়গা ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলে তিনি তার ছেড়ে দেয়া জায়গায় বসতেন না।
    Total Reply(0) Reply
  • রিমন ৩০ জুন, ২০১৯, ৯:৩০ এএম says : 0
    ইসলাম একটি পুর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য এখানে দিক নির্দেশনা রয়েছে
    Total Reply(0) Reply
  • সাইফুল ইসলাম ৩০ জুন, ২০১৯, ৯:৩১ এএম says : 0
    আল্লাহ আমাদেরকে জীবনের সর্বক্ষেত্রে তার দেয়া বিধান ও রাসুল স. এর দেখানো পথে চলার তৌফিক দান করুক।
    Total Reply(0) Reply
  • মনিরুল ইসলাম ৩০ জুন, ২০১৯, ৯:৩২ এএম says : 0
    এই সুন্দর দিক নির্দেশনামুলক লেখাটির জন্য লেখক উবায়দুর রহমান খান নদভী সাহেবকে অসংখ্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • Nazrul Islam ৩০ জুন, ২০১৯, ৯:৩৫ এএম says : 0
    মজলিসে বা সভায় বসে হাসাহাসি ও খেল-তামাশা করা যাবে না। এতে একদিকে বৈঠকের শৃঙ্খলা বিনষ্ট হয়, অপরদিকে আলোচকের কথা শুনতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لاَ تُكْثِرُوا الضَّحِكَ فَإِنَّ كَثْرَةَ الضَّحِكِ تُمِيْتُ الْقَلْبَ ‘তোমরা অধিক হাসবে না। কারণ অধিক হাসি অন্তরের মৃত্যু ঘটায়’।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইসলাম

৩ মার্চ, ২০২৩
২ মার্চ, ২০২৩
১ মার্চ, ২০২৩
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন