Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাজনীতিকদের প্রশ্রয়ে বেপরোয়া নয়ন গং

সন্দেহভাজন একজন আটক ষ বিচারহীনতা রিফাত হত্যার মূল কারণ : কাজী রিয়াজুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ জুন, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকান্ডে জড়িতরা স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে দীর্ঘদিন ধরে অপরাধ করে আসছে বলে অভিযোগে উঠেছে। স্থানীয় নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও পারিবারিক আত্মীয়তা থাকায় তারা অপরাধ করলেও বারবার পার পেয়ে যেত। তারাই আবার নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নিকে বিতর্কিত করতে ফেসবুকসহ বিভিন্নভাবে নানা কথা প্রচার করে যাচ্ছে। যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। গতকালও বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হত্যার প্রতিবাদ ও জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারসহ শাস্তির আওতায় আনার দাবি মানববন্ধন হয়েছে।

এদিকে, হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে সাইমুন (২২) নামে এক যুবককে শুক্রবার পটুয়াখালী থেকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। রিফাত হত্যার মূল কারণ হিসেবে দেশে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে দায়ী করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক। একইভাবে সংসদে আলোচিত হত্যা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ও সরকারি দলের সাংসদ কামরুল ইসলাম। তবে রিফাত হত্যা মামলার সব আসামিদের দু’দিনের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছেন বরগুনার পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন।

অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয়ভাবে চিহ্নিত সন্ত্রাসী হিসেবে স্বীকৃত নয়ন গংকে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।

এরমধ্যে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে ও জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সুনাম দেবনাথের সাথে নয়নের গভীর সখ্যতা রয়েছে। এছাড়া অন্য আসামী রিফাত ফরাজী ও তার ভাই রিশান ফরাজী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে। এই সুবাদে দুই পক্ষের সাথেই নয়নের সম্পর্ক ভালো। সম্প্রতি রিফাত জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় ঘটা করে জন্মদিন পালন করে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ছেলে সুনাম দেবনাথ মাদক ব্যবসায়ী হওয়ায় নয়নের সাথে তার সখ্যতা রয়েছে। এর আগে স্থানীয় ছাত্রলীগ সুমনের বিরুদ্ধে মাদকসহ বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলনও করেছে। একইভাবে মামলার অন্য দুই আসামী রিফাত ফরাসী ও রিশান ফরাজী বরগুনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে হওয়ার কারণে তারাও কোন কিছুকে পরোয়া করতো না। এছাড়া নয়ন পুলিশের সোর্স হিসেবেও কাজ করতো বলেও স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। যদিও সবাই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নয়ন গংদের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই বলে গণমাধ্যমে দাবি করেছেন।

স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অস্ত্র, মাদক, চুরি আর মারামারির ঘটনায় বরগুনায় সদর থানায় নয়নের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা দায়ের হয়েছিল। এর মধ্যে ২০১৭ সালেই অস্ত্র-মাদকসহ ৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, ওই তিনটি মামলার পর দীর্ঘ দুই বছরে আর কোনো মামলা দায়ের হয়নি। স্থানীয়দের ভাষ্য, দুটি পক্ষ থেকে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া এবং নয়ন পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করায় বারবার অপরাধ করেও পার পেয়ে গেছে। স্থানীয়রা আরও বলেন, রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় না থাকলে এত বড় অঘটন ঘটানো সম্ভব নয়। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত নেতাদের সুনজর না থাকলে একাধিক মামলার আসামি কখনো প্রকাশ্যে আসতে পারে না।

বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, নয়ন সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে কলেজ রোডের একাধিক বাসিন্দা মৌখিক অভিযোগ করেছিল। কিন্তু নিজ দলীয় নেতাদের রাজনৈতিক রোষাণলে পড়ার সম্ভাবনা থাকায় আমি কোন প্রতিবাদ করতে পারিনি। তা ছাড়া নয়ন পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করত বলে শুনেছি। একদিকে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া ও অন্যদিকে পুলিশের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় বারবার অপরাধ করার পরেও কেউ তাকে দাবাতে পারেনি। তবে তিনি সুস্পষ্টভাবে কোন নেতাকর্মীর নামোল্লেখ করেননি।

বরগুনা নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন কামাল বলেন, মামলার আসামীরা এলাকায় চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তারা বিভিন্ন সময় ধরা পড়ার পরেও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় আইনের ফাঁক গলে বাইরে বেরিয়ে আবারও একই কাজ করে বেড়াত। অপরাধ করে বার বার ছাড়া পেয়ে তারা ক্রমান্বয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল।

এদিকে, হত্যার ঘটনার পর থেকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবির পাশাপাশি রিফাত ফরাজী ও তার ভাই রিশান ফরাজীর শাস্তি দাবি করে ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট দিয়েছেন সুনাম দেবনাথ। এসব পোস্টে তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকেও ইঙ্গিত করেছেন। শুধু তা-ই নয়, ঘটনার জন্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের আত্মীয়কে দায়ী করে বিভিন্ন মিডিয়াতে বক্তব্যও দিয়েছেন সুনাম দেবনাথ। তবে তিনি তার পোস্টে নয়নের ব্যাপারে কিছুই লেখেননি।

সুমন তার একটি পোস্টে রিফাত হত্যায় স্ত্রী মিন্নিকে ‘মূল ভিলেন’ হিসেবে ইঙ্গিত করেছেন। তিনি লিখেছেন, বিভিন্ন খবর ও মিডিয়াতে যাকে এখন হিরো বানানো হচ্ছে মূল ভিলেন সে নিজেও হতে পারে, রিফাত শরীফের বন্ধুদের থেকে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তাতে এটাই বোঝা যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সুমন দেবনাথ লেখেন, নয়নের নেতৃত্বে রিফাত ও তার ভাই রিশান বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছিল। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে পারিবারিক যোগাযোগ থাকায় তার প্রভাবেই তারা অনেকটা বেপরোয়া।

বরগুনা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, নয়ন চিহ্নিত মাদক কারবারি। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক, মারামারি আর চুরির ঘটনায় ৮টি মামলা রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া নয়ন পুলিশের সোর্স নয় দাবি করে তিনি বলেন, নয়ন যেহেতু মাদক কারবারি, তাই কারবার চালিয়ে নেওয়ার জন্য নিজেকে পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচয় দিতেও পারে। যার দায় পুলিশের ওপর বর্তায় না।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, রিফাত ও রিশান আমার আত্মীয় হলেও তারা চিহ্নিত বখাটে। যার কারণে তাদের সঙ্গে আমার পারিবারিকভাবেই কোনো সম্পর্ক নেই। তার দাবি, রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্যই আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ তার বিরুদ্ধে লেগেছে। এর আগে তারা তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করেছিল। তিনি রিফাত শরীফ খুনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবিসহ ভায়রার ছেলে রিফাত ও রিশানেরও শাস্তি দাবি করেন।

এদিকে, রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনার পর থেকে তার স্ত্রীমিন্নিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। ঘটনার পর রিফাতকে নিয়ে হাসপাতাল যাওয়া বা নয়নের সঙ্গে মিন্নির সম্পর্ক নিয়ে একটি মহল নানা কথা বলছে। এরমধ্যে ফেসবুক ছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমে মিন্নি ও নয়নের আগের বিয়ের ছবি ও কাবিননামা প্রকাশ করা হলেও বিষয়টিকে বানোয়াট বলে দাবি করছেন মিন্নির পরিবার।

এদিকে, বৃহস্পতিবার খুনের বর্ণনা দিতে গিয়ে মিন্নি বলেছেন, বিয়ের পর নয়ন তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছেন। এমনকি বিষয়টি পরিবারকে জানাতে নিষেধ করে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন। রিফাত শরীফের বাবা আব্দুল হালিম দুলাল শরীফও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, নয়ন নামের এক যুবক তার ছেলের বউকে নিয়ে ফেসবুকে আজেবাজে কথা লিখছে।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন বলেন, রিফাত বেকার থাকায় বিয়েতে আমরা রাজি ছিলাম না। পরে আমার ভাই সালেহ ও রিফাতের বাবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়। তিনি আরো বলেন, মিন্নিকে তার শ্বশুরবাড়ির সবাই ভালবাসত। ও যেভাবে রিফাতকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছিল, তা দেখেও কেউ কেউ বাজে মন্তব্য করছে যা খুবই বেদনাদায়ক।

পটুয়াখালীতে সন্দেহভাজন একজন আটক
রিফাত কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সাইমুন (২২) নামে আরও এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে পটুয়াখালী শহরের গালর্স স্কুল এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পটুয়াখালী সদর থানা পুলিশের সহায়তায় বরগুনার আমতলী থানা পুলিশের একটি দল সাইমুনকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সাইমুন বরগুনার হাজারবিঘা এলাকার বাসিন্দা কাওসার মিয়ার ছেলে এবং পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ভিপি মান্নানের ছোট মেয়ে মিথিলা ফারজানার স্বামী। তবে ভিপি মান্নান সাইমুনকে জামাই হিসেবে স্বীকার করেন না।

আমতলী থানা পুলিশের ওসি আবুল বাসার বলেন, সাইমুন হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি রাব্বি আকনের বন্ধু। যার কারণে রাব্বিকে গ্রেফতার করতে সাইমুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওসি বলেন, কয়েক বছর আগে রাব্বির জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সাইমুনের স্ত্রী মিথিলার জন্য একটি মোবাইল সিম কেনা হয়েছিল। সেই সিম ব্যবহার করায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে আটক করা হয়েছে।

আসামিদের দু’দিনের মধ্যে গ্রেফতার
রিফাত শরীফ হত্যা মামলার সব আসামিদের দু’দিনের মধ্যে গ্রেফতার করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন বরগুনা পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফ হোসেন।

তিনি বলেন, আমরা বসে নেই। জালের ফাঁস ছোট হয়ে আসছে, আইনে ফাঁক গলে কেউ বাঁচতে পারবেনা। আসামিদের পালানোর সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসপি আরও বলেন, হয়তো আর দু’দিন সময় লাগতে পারে মামলার সব আসামিদের আইনের আওতায় আনতে। রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত তিনজনকে/চারজন গ্রেফতার করা হয়েছে। এরই মধ্যে তাদের শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া শুক্রবার থেকে গতকাল পর্যন্ত অভিযুক্ত অনেকের স্বজনদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

দীর্ঘসূত্রতা এবং বিচারহীনতা রিফাত হত্যার মূল কারণ
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বিচারের দীর্ঘসূত্রতা এবং বিচারহীনতার সংস্কৃতি রিফাত হত্যার মূল কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন এখনো পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যার কারণে প্রকাশ্য দিবালোকে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা এবং নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার মতো ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সকালে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে আয়োজিত সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে যোগদান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিয়াজুল হক এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিচার কাজ সম্পন্ন করতে অনেক বেশি সময় লাগছে। যে কারণে অপরাধীরা কোনো না কোনোভাবে পার পেয়ে যাচ্ছে। এটি অপরাধীদের অপরাধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়ার জন্য সাহস জোগাচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
রিফাত হত্যাকান্ডের মূল হোতা নয়ন বন্ডকে গ্রেপ্তারে বিলম্ব প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নয়নকে গ্রেপ্তার করা কঠিন কিছু না। এটি খুবই সহজ কাজ। পুলিশ চাইলে ১৫ দিনের মধ্যে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করতে পারে এবং এক মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারে। একইভাবে হত্যাকারীদের সাথে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা থাকাটাও গ্রেফতারে কোন বাধা নয়।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, যেহেতু সব আলামত সামনেই আছে তাই চাইলে এক মাসের মধ্যে চার্জশিট দিয়ে দেওয়া যায় এবং দুই-তিন মাসের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ফেলা যায়। সেটি করতে পারলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যাবে।

বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন
রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবিতে বরগুনাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এসব মানববন্ধন থেকে নৃশংস এ হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, বরগুনা বলেন, শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বরগুনা প্রেস ক্লাবের সামনে ‘সর্বস্তরের জনগণ’র ব্যানারে মানবন্ধন হয়। এতে শ্রমিক, কৃষক, চাকরিজীবী, রাজনৈতিক, ব্যবসায়ীসহ হাজারো মানুষ অংশ নেয়।

মানবন্ধনে অংশ নিয়ে নিহত রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, রিফাতের মা শয্যাশয়ী। গত ১৮ বছর ধরে সে প্যারালাইজড হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। আর এখন আমার ছেলেটিকে হারাতে হয়েছে। তিনি ছেলের হত্যাকারীদের কঠিন শাস্তির দাবি জানান।

এদিকে, রাজধানীতে পৃথকভাবে প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশন, শাহবাগে ছাত্র ফেডারেশন, সাতক্ষীরায় জেলা নাগরিক কমিটি, ঝিনাইদহ শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিহঙ্গ সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্রসহ অন্যান্য জায়গায় বিভিন্ন সংগঠন হত্যাকান্ডে প্রতিবাদ ও জড়িতদের গ্রেফতারসহ বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মো. আব্দুর রহিম খান বলেন, মানুষের মধ্যে মানবতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যার কারণে মানুষ প্রকাশ্যে হত্যার মতো অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে। এমন নৃশংস হত্যাকান্ডের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে না পারলে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা চরম সংকটের মধ্যে পড়বে।

আলোচিত হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির আহ্বান
এদিকে, গতকাল জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে আলোচিত হত্যা মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ও সরকারি দলের সাংসদ কামরুল ইসলাম।

রিফাত হত্যাকান্ডের কথা উল্লেখ করে সাবেক এ প্রতিমন্ত্রী বলেন, মানুষের মধ্যে পশুবৃত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। রিফাতের ঘটনায় কেউই তাকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে যায়নি। এ রকম ঘটনা দ্রুততম সময়ে বিচার করা উচিত। তিনি আরও বলেন, নিম্ন আদালতে দ্রুত বিচার হচ্ছে। কিন্তু চূড়ান্ত বিচার করে দন্ড কার্যকর করা যাচ্ছে না। এ জন্য উচ্চ আদালতে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নিতে হবে।



 

Show all comments
  • Sha Saheb ৩০ জুন, ২০১৯, ২:৫৪ এএম says : 0
    The Borguna incidence is the poisonus result of state patronizing of terrorism. The act of Nayan and his gang is just an example of creation of nation wide terrorist gangs. Nayan and his gang is micro part of nation wide thousands of such gangs.
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩০ জুন, ২০১৯, ২:৫৭ এএম says : 1
    But who is the godfather of those criminals? I think there must be very strong one. Seize him too if you can.
    Total Reply(0) Reply
  • Md. Ahsan Habib ৩০ জুন, ২০১৯, ২:৫৮ এএম says : 0
    সরকার, প্রশাসন, প্রভাবশালীরা ও পুলিশ যদি এদের এখনো কিছু করতে না পারেন, তবে একদিন এরাই আপনাদের কোপাবে। মনে রাখবেন, আজ আল্লাহ আপনাকে ক্ষমতা দিয়েছে। কিন্তু এই ক্ষমতা কাল থাকবে কি? আপনাদের উত্তরসূরীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এদের অপরাধ করার ক্ষমতা চিরতরে বিনষ্ঠ করুন। দুধ দিয়ে কালসাপ পুষবেন না। এরা যেমন শত শত কালসাপ জন্ম দিয়ে যাচ্ছে, তেমনি যাকে তাকে ছোবলও দিচ্ছে। প্রতিটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে নৈতিক শিক্ষার উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিল পাশ করুন এবং কঠোর মনিটরিং করুন। জাতি গঠনে প্রতিটা জায়গায় রেডএলার্ট জারি করুন। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে জাতি গঠনের ভার দিন। এটাও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার মতই গুরুত্বপূর্ণ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mr Rayman ৩০ জুন, ২০১৯, ২:৫৮ এএম says : 0
    অপরাধের শাস্তি শুধু মাত্র সংশ্লিষ্ট অপরাধির জন্য নয় , ভবিষ্যৎ অপরাধিদের জন্য। বিশ্বজিতদের মতো হত্যার কি বিচার হয়েছে ? কজন জানে অপরাধি গ্রেফতার হওয়ার পর কি হএ ? যে দেশে খুনের আসামী জামিনে ছাড়া পাএ , যেদেশে শত জনতা সাহায্য না করে নৃশংস খুনের ভিডিও করতে থাকে । আমরা কি আশা করতে পারি ?
    Total Reply(0) Reply
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩০ জুন, ২০১৯, ২:৫৯ এএম says : 0
    হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রামদা আর কোপানোর স্টাইল বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ডের হুবহু কপি।। বিশ্বজিৎ খুনিদের ফাঁসি এখনো কার্যকর না হওয়ায় খুনিরা নিজেদের নিরাপদ মনে করছে।।
    Total Reply(0) Reply
  • ahmed ৩০ জুন, ২০১৯, ২:৫৯ এএম says : 0
    প্রত্যেক আসামির ক্লোজ ছবি পত্রিকায় প্রকাশ করেন । জনগণ যেন খুনির ছবি দেখে চিনতে পারে এবং খুনিদের পুলিশে ধরিয়ে দিতে পারে ।।
    Total Reply(0) Reply
  • abul hossain ৩০ জুন, ২০১৯, ২:৫৯ এএম says : 1
    আমরা বাঙ্গালীরা সত্যিই তামাশার জাতি ।দিনে দুপুরে মানুষের সামনে এভাবে কুপিয়ে মারল আর কেউ তাদের থামাতে পারলনা ।শুধু চেয়ে চেয়ে দেখল ।
    Total Reply(0) Reply
  • শফিউর রহমান ৩০ জুন, ২০১৯, ১০:৫২ এএম says : 0
    আমরা এখন কোন সমাজে আছি কেউকি বলবেন? এত জগন্য অপরাধি কেন এখনও আসামি ধরা পরেনি ? আমরাত দেখেছি এবং এখনও দেখতেছি সামান্য অপরাধ করলেও বিরোধি দলের কর্মিদেরকে মাটির নিছ থেকেও দরে ফেলে অথচ এত ভড় ঘটনা তার আসামি দরতে কষ্ট কোথায় । এত জগন্য অপরাধ চিন্তা করলে মনে হয় কোন অসভ্য সমাজে আমরা বিচরন করতেছি । কিছু কিছু নেতা বলতেছেন এটা বিছিন্ন ঘটনা । এটা বিছিন্ন ঘটনা হলে এর চেয়েও কঠিন কিছুর জন্ন্যকি আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ? কিছু কিছু সিনেমাকেও হার মানায় । তবে আসস্হ হলাম মাননীয় প্রধান মর্ন্তি সয়ং এর বিচারের কথা বলেছেন । আমরা এর অপেক্ষায় থাকলাম ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হত্যাকান্ড

২২ এপ্রিল, ২০২২
৯ ডিসেম্বর, ২০২১
৩ ডিসেম্বর, ২০২১
১৪ অক্টোবর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ