Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রেমিট্যান্সযোদ্ধারা কতটুকু সম্মান পান?

মোজাম্মেল হক | প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

দেশের বাইরে প্রায় ১৬২ টি দেশে ১ কোটিরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী রয়েছে, যারা দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর মাধ্যমে দেশের মোট জিডিপির প্রায় ১৩ ভাগ পূরণ করে থাকে। পোশাক খাতকে ছাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রার জন্য এটিই শীর্ষ খাত। বাংলাদেশের মতো ঘাটতি বাজেটের উন্নয়নশীল দেশে এসব প্রবাসীরাই দেশের অর্থনীতিতে রক্ত সঞ্চালন করে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ জনশক্তি রপ্তানি শুরু করেছে সত্তরের দশক থেকে। প্রথমত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ছিল বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির প্রধান বাজার। আশির দশক থেকে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়। লিবিয়া, সুদানসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশেও তখন থেকেই জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়। নব্বইয়ের দশক থেকে দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রæনাই, মিশর, মরিশাসসহ কয়েকটি নতুন বাজার সৃষ্টি হয়। নতুন সহ¯্রাব্দে ব্রিটেন, ইটালি, জাপানসহ এশিয়া ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে সৃষ্টি হয় জনশক্তির চাহিদা।
বিগত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের জনশক্তির বাজার উন্মুক্ত হয়েছে। ইরাক, আফগানিস্তান, থাইল্যান্ড, স্পেন, তিউনিশিয়া, চিলি, পেরুসহ শতাধিক দেশে বাংলাদেশ বর্তমানে জনশক্তি রপ্তানি করছে। এসব দেশের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে। সৌদি আরবসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে প্রায় ৫০ লাখ কর্মী রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১১ মাসে (জুলাই- মে) মোট ১ হাজার ৫০৬ কোটি ডলার রেমিট্যান্স বাংলাদেশে এসেছে যা গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। এভাবে রেমিট্যান্স বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশী মুদ্রার সঞ্চয়ন ও ( রিজার্ভ) সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে।
এভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীরা ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। কিন্তু এ প্রবাসীরা কি রাষ্ট্র থেকে তাদের যথাযথ সম্মান বা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে? যে মানুষগুলো পরিবারের শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে, তারপর সেখানে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে প্রচÐ কায়িক পরিশ্রম করে মাস শেষে বেতনের প্রায় পুরো টাকাটা দেশে পাঠিয়ে দেন- তারা কতটুকু সুখী রাষ্ট্র কি তা দেখে?
অভিবাসন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে বিদেশ যাত্রী কর্মীরা সঠিক তথ্যের অভাবে পাসপোর্ট ও ভিসা সংক্রান্ত ব্যাপারে দালালের খপ্পরে পড়ে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হন। এসব সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার দায়িত্ব থাকলে ও তারা তা প্রদানে ব্যর্থ হন। বিদেশ যাত্রার সময় এয়ারপোর্টে তাদেরকে অসহযোগিতা ও তাদের সাথে দুর্ব্যবহারের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে গেলেও সবসময় প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা পান না প্রবাসীরা। বিদেশে নারী গৃহকর্মীরা শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন- এ সমস্যা সমাধানের জন্যও রাষ্ট্রের তেমন কোনো তাগিদ দেখা যাচ্ছে না।
যে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানোর মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছেন, তাদের নেই কোনো ভোটাধিকার। বিদেশে কোনো কর্মী মারা গেলেও দেশে তার লাশ পাঠাতে শিকার হতে হয় নানা প্রকার ভোগান্তির। অনেক প্রবাসীকেই আক্ষেপ করতে দেখা যায় এটা বলে যে, শুধু বাঙালি হওয়ার কারণে তাদের শ্রমের মূল্য কম হয় অন্যদের তুলনায়। কর্মক্ষেত্রে তাদের তত প্রাধান্য দেওয়া হয় না, যতটা ভারতীয় বা পাকিস্তানি প্রবাসীরা পান। তাহলে এর জন্য কি শুধু তাদের অদক্ষতাই দায়ী? নাকি আমাদের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কিংবা দূতাবাসগুলোর ও দায়িত্বে হেরফের হচ্ছে কোথাও?
তাই সরকারের উচিত হবে- যে মানুষগুলো রেমিট্যান্স পাঠানোর মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে অক্সিজেন দিয়ে যাচ্ছেন, তাদের সুযোগ সুবিধার দিকে নজর দেয়া এবং এ রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান প্রদান করা। যাতে করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার এই কারিগররা দেশে ও প্রবাসে মর্যাদার সাথে বাঁচতে পারে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রেমিট্যান্স

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন