Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

রাত পোহালেই ভোট আ.লীগের একক আধিপত্য বিএনপির নিয়ম রক্ষা

প্রকাশের সময় : ৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ওমর ফারুক, ফেনী থেকে

ফেনীতে ইউপি নির্বাচনের আগের রাতে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখা, কেন্দ্র দখল, দলীয় বহিরাগত ক্যাডার দিয়ে জাল ভোট প্রদান এবং বিরোধী পক্ষকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে বিভিন্ন ধরনের হুমকির পাশাপাশি নির্বাচনের দিন সরকার দল সমর্থিত প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্ট প্রবেশ করতে না দেয়াসহ বিভিন্ন দিক থেকে ইউপি নির্বাচনে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করছে আ.লীগ। ফেনী ৪৩টি ইউপির মধ্য ১৫টিতে নির্বাচন শেষ হয়েছে। যার ১৪টিতে বিজয় লাভ করেছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। মাত্র ১টি ইউপিতে বিজয়ী হয়েছে ধানের শীষের প্রার্থী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগে থেকে আ.লীগের ঊর্ধ্বতন নেতাদের হুমকি-ধমকিতে এবারের ইউপি নির্বাচনে বিএনপির অনেকে প্রার্থী হতে পারেননি। হুমকি-ধমকি ও হামলা-মামলা উপেক্ষা করে বিএনপির যে কয়েকজন প্রার্থী হয়েছেন তাদের কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ায় সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি ইউপি প্রার্থী ও বিএনপি নেতা মিনারকে অস্ত্র মামলা দিয়ে চালান দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার কর্মী-সমর্থকরা। সদ্য সমাপ্ত দাগনভূঞা উপজেলার সিন্দুরপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপি নেতা পেয়ার আহাম্মদকে নির্বাচনের দিন বাড়ি থেকে বের হতে দেননি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরনবীর সমর্থক ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা। একই উপজেলার রাজাপুর ইউপি চেয়ারম্যান পদে ধানের শীষের প্রার্থী নিজাম উদ্দিন বাচ্চু কেন্দ্র দখল ও কারচুপির অভিযোগ আনেন নৌকার প্রার্থী কাশেদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। নিজাম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, সকাল থেকে কোনো কেন্দ্রে তার এজেন্টদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। শত শত বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে বিজয় নিশ্চিত করেছে কাশেদুল। পেয়ার বাচ্ছুসহ দাগনভূঞার বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এদিকে আজ ৪ জুন ফেনী সদর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও গত বৃহস্পতিবার উচ্চ আদালত ২ ইউপির নির্বাচন স্থগিত করে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার, হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ তুলে ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ও বালিগাঁও ইউনিয়নের নির্বাচন স্থগিতে উচ্চ আদালতে রিট করেন বালিগাঁও ইউপির নজরুল ইসলাম ও ধর্মপুর ইউপির আত্রামুজ্জামান নামের দুই ব্যক্তি। রিট শুনানি শেষে আদালত এ দুটি ইউপির নির্বাচনে ৬ মাসের স্থগিতাদেশ জারি করেন হাইকোর্টের বিচারক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসাইন ও মো. বদরুজ্জামান। ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিকেএম এনামুল করিম এ সংক্রান্ত একটি আদেশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেন। আজ শনিবার ফেনী সদরে ৬টিতে ও সোনাগাজী উপজেলার ৯টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সরেজমিন জানা গেছে, বেশিরভাগ মেম্বার পদে আ.লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা প্রতিপক্ষকে চাপ সৃষ্টি করে মনোনয়ন প্রত্যহার করিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ইউপি সদস্যরা নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। ফেনী সদর উপজেলার মৌটবী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী মোহাম্মদ নুরুজ্জামানের মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলে আ.লীগ সমর্থিত মেম্বার প্রার্থী হারুনের সহযোগীরা। ফলে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনে হারুনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। মৌটবী ইউনিয়নে বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থী এম এ খালেকের সমর্থনকারী শাহ আলমকে মারধর করে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী হারুনুর রশীদের কর্মী-সমর্থকরা। ফাজিলপুর ইউপির জনপ্রিয় চেয়ারম্যান রুহুল আমিনকে প্রার্থী হতে দেয়নি আ.লীগ। সেখানে নৌকার প্রার্থী রিপনের বিপরীতে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন করছে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোঃ শাহজাহান। সদর উপজেলার শর্শদীতে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা যুবলীগের সদস্য জানে আলম। এখানেও নিয়ম রক্ষার নির্বাচনে মাঠে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিএনপি প্রার্থী অ্যাডভোকেট নুর ইসলাম। অ্যাডভোকেট নুর ইসলাম বলেন, বিএনপি প্রার্থী হিসেবে তিনি মাঠে প্রচারণা চালালেও জেলা বিএনপি বা সদর উপজেলা বিএনপি কোনো নেতা তাকে সহযোগিতা করেননি। এ পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচারণায় কেউ যাননি বলে নিশ্চিত করেন তিনি। এদিকে দুর্বল নেতৃত্ব ও আ.লীগের সাথে গোপন আঁতাতের কারণে ফেনীতে ইউপি নির্বাচনে একচেটিয়া আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছে আ.লীগ। জনসমর্থনে অনেক পিছিয়ে থাকলেও ভোটারশূন্য নির্বাচনে মাঠে আ.লীগ প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হচ্ছেন। এদিকে ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ও বালিগাঁও ইউনিয়ন নির্বাচন স্থগিত করেছেন উচ্চ আদালত। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে এ সংক্রান্ত সোনাগাজীর ৯ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্লাহ, কেন্দ্রীয় আ.লীগ নেতা জহির উদ্দিন লিপটন এবং মনজুরুল আলম শাহীনসহ অনেক নেতার হস্তক্ষেপ রয়েছে প্রার্থী বাছাইয়ে। ফলে সোনাগাজীতে আ.লীগের প্রার্থী বাছাইয়ে জেলা আ.লীগের সাথে নীরব কোন্দল চলছে। সোনাগাজীর চর মজলিশপুরে জেলা আ.লীগের নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয় আনোয়ার খায়েরকে। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপে নৌকার প্রার্থী হন ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতি আবুল হোসেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আনোয়ার খায়ের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। বগাদানা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়েছেন ইসহাক খোকন। উপজেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি ফয়েজ কবীরের ভাগিনা হওয়ায় ইউনিয়নে কোনো অবস্থান না থাকলেও প্রার্থিতা পান তিনি। এখানে বর্তমান চেয়ারম্যান সাখাওয়াতুল হক বিটু দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া সোনাগাজীর অন্য ইউনিয়নগুলোতে আ.লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগ। বিএনপি পরিচিতি আর নিয়ম রক্ষার নির্বাচন করছে। ফেনীর ইউপি নির্বাচন ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশে সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়ে তামাশার নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হচ্ছে এমন অভিযোগ এ এলাকার ভোটারদের। এ অবস্থার পরিবর্তন, অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন এটাই তাদের প্রত্যাশা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাত পোহালেই ভোট আ.লীগের একক আধিপত্য বিএনপির নিয়ম রক্ষা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ