Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কি সান্তনা দেবেন মাশরাফি-তামিম?

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

গত চার বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় তুলেছে এই দল। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনাল হয়ে ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনাল, ২০১৮ এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছে বাংলাদেশে তাদেরই কল্যাণে। দেশের মাটিতে এসেছে একের পর এক সিরিজ জয়ের সাফল্য। দেশের বাইরেও এসেছে জয়, সিরিজ জয়সহ প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি। সাফল্যের পথ ধরেই এগিয়ে গেছে অভিজ্ঞ আর তারুণ্যের মিশেলে দলটি। সেই সাফল্যই স্বপ্ন দেখিয়েছে বিশ্বকাপ সেমি-ফাইনালের। ক্রিকেটারদের চোখেই স্বপ্ন দেখেছে সমর্থকরাও। আস্থা রেখেছে সামর্থ্য।ে তবে পূরণ হলো না সেই স্বপ্ন। স্বপ্ন পূরণ না হওয়া মানে অবশ্যই ব্যর্থতা নয়। কিন্তু বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযানকে ব্যর্থ বলা যায়- লক্ষ্যটুকু পূরণ করতে না পারায়, সামর্থ্যরে পুরোটা দেখাতে না পারায়, পয়েন্ট টেবিলের তলানির ভাগে থাকায়।

দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দারুণভাবে শুরু করা বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এরপর হারাতে পেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তানকে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটিতে জয় ছিল প্রত্যাশিত, ভেসে গেছে বৃষ্টিতে। সেটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে ছিল না। কিন্তু পাকিস্তানকে হারানোর সুযোগ ছিল নিজেদের হাতেই। সেটি পারেনি দল। পাকিস্তানকে হারালে পয়েন্ট তালিকার পাঁচে থাকার সুযোগ থাকত। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে লম্বা ফরম্যাটের বিশ্বকাপে পাঁচে থাকতে পারা র‌্যাঙ্কিংয়ের সাত নম্বর দলের জন্য যথেষ্ট ভালো ফলই হয়তো হতো। অন্তত নিজেদের কাজটুকু করার স্বস্তি থাকত।
এবারের আগে ২০০৭, ২০১১ ও ২০১৫ বিশ্বকাপেও তিনটি করে ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে ২০০৭ সালের সাফল্যে কাঁটা হয়ে আছে আয়ারল্যান্ডের কাছে হার, ২০১১ সালে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৮ রানে অলআউট হওয়ার যন্ত্রণা। ২০১৫ বিশ্বকাপে তিন জয়ের দুটি স্কটল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এবার সেদিক থেকে পুরো টুর্নামেন্ট বিচার করলে হয়তো বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক বিশ্বকাপ। কিন্তু শুধু এই আসরের বাস্তবতায় প্রাপ্তির চেয়ে অপ্রাপ্তিই বেশি।

এমনিতে এই আসর থেকে প্রাপ্তি কিছু আছে। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি অবশ্যই সাকিব আল হাসানের অতিমানবীয় পারফরম্যান্স। আরও বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই তিনি বলা যায় বাংলাদেশের সবসময়ের সেরা ক্রিকেটার। গত ১০ বছর ধরে বেশির ভাগ সময় ছিলেন র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ অলরাউন্ডার। কিন্তু বিশ্ব আসরে নিজের শ্রেষ্ঠত্বে ছাপ রাখার ব্যাপার হয়তো ছিল। সাকিব যেভাবে পারলেন, সেটি অনেকের কল্পনাকেও হয়তো ছাড়িয়ে গেছে। একজনের কাছ থেকে এমন অসাধারণ অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বিশ্বকাপ আর দেখেনি। বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচটির আগে মোটামুটি ধারাবাহিকভাবে ভালো ব্যাটিং করে গেছে দলের প্রায় বাকি সদস্যরাও। নিজেদের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ছাড়িয়েছে দুইবার। গড়েছে রান তাড়ার রেকর্ড। বিরুদ্ধ কন্ডিশনে সত্যিকারের বিশ্বমানের দলগুলির সঙ্গে অন্তত ব্যাটিং দিয়ে পাল্লা দেওয়ার নিদর্শন দল রাখতে পেরেছে।

কিন্তু বোলিং, বিশেষ করে নতুন বলের বোলিং দলকে ভুগিয়েছে প্রবলভাবে। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা নিজেকে হারিয়ে খুঁজেছেন টুর্নামেন্ট জুড়ে। বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে বোলারের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে দীর্ঘ উইকেটখরা এসেছে এই টুর্নামেন্টেই। দুই পায়ে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট নিয়ে চেষ্টা করে গেছেন ম্যাচের পর ম্যাচ, কিন্তু এবার আর চোট জয়ের গল্প রচনা করতে পারেননি। মাশরাফি নিজেও স্বীকার করলেন, হতাশার যথেষ্ট কারণ আছে। তবে একবারেই ব্যর্থ অভিযান বলতে চান না অধিনায়ক, ‘শেষ ম্যাচটা জিতলে হয়তো পাঁচে থাকতে পারতাম। হেরে যাওয়ায় সাত-আটে। হয়তো একটু যদি-কিন্তু, এদিক-সেদিক হলে অন্যরকম হতো। পাঁচে যাওয়ার সুযোগ ছিল। তবে সাতে গেলেই যে খুব হতাশ বা সফল নই, সেটাও পুরোপুরি বলা যাবে না। এখান থেকে ইতিবাচকভাবে নেওয়ার অনেক কিছু আছে। হয়তো আমরা আপসেট, আপনারা আপসেট, দর্শক আপসেট। ইতিবাচক দিক হয়তো বের করা কঠিন। কিন্তু এই দলটিই গত কয়েক বছরে চেষ্টা করে যাচ্ছে ভালো কিছু উপহার দিতে, আশা করি দিয়েছেও।’

তবে সাকিবের অভাবনীয় পারফরম্যান্সের পর দল সেমি-ফাইনালে না ওঠা হতাশার, সেটি মানছেন অধিনায়ক, ‘খারাপ লাগছে সাকিবের জন্য। এরকম পারফরম্যান্সের পর তার দল সেমি-ফাইনাল খেলবে, এটিই প্রত্যাশিত। অন্যরা যারা রান করেছে বা উইকেট নিয়েছে, হয়তো সময়মতো করতে পারেনি বা প্রয়োজনের সময় হয়নি। এটা হতাশার।’

মাশরাফির মতোই হতাশার বিশ্বকাপ কেটেছে আরেক জনের- তামিম ইকবাল। গত বিশ্বকাপের পর থেকে এই বিশ্বকাপের আগ পর্যন্ত ৫৭.০৬ গড়ে করেছেন আড়াই হাজারেরও বেশি ওয়ানডে রান। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও ছিলেন সফল। কিন্তু বিশ্বকাপ আসতেই আবার বিবর্ণ। ৮ ইনিংসে কেবল ১ ফিফটিতে ২৯.৩৭ গড়ে করেছেন ২৩৭ রান। প্রত্যাশা একটুও পূরণ করতে পারেননি, নিজেই বলেছেন দেশসেরা এই ব্যাটসম্যান, ‘ব্যর্থ হয়েছি। সরাসরি বলি বা যেভাবেই বলি, আমি ব্যর্থ হয়েছি। দলের বা নিজের কাছে নিজের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো যে, আমি খারাপ ব্যাটিং করিনি। ব্যাটিং মোটামুটি করেছি। কিন্তু বড় স্কোর পাইনি। শেষ ম্যাচটিতেই কেবল সিঙ্গেল ডিজিটে আউটে হয়েছি। তার আগের চারটি স্কোর ৪৮, ৬২, ৩৬, ২২... এমন নয় যে ম্যাচের পর ম্যাচ ১, ২, ৫, ১০ রানে আউট হয়েছি। যতক্ষণ উইকেটে ছিলাম, নিয়ন্ত্রণ হারানি কখনোই। কিন্তু হুট করেই আউট হয়ে গেছি। এমন সব আউট হয়েছি, যেগুলো বেশিরভাগ সময় আমার নিয়ন্ত্রণে ছিল না।’

নিজের পারফরম্যান্সের ব্যবচ্ছেদে মনস্তাত্তি¡ক সমস্যাকেই ব্যর্থতার মূল কারণ বললেন এই ওপেনার। শোনালেন ফেরার প্রত্যয়, ‘অবশ্যই আমি নিজের যে মান ধরে রাখতে চাই, এতদিন ধরে যে মান ধরে রেখেছি, সেই বিচারে অবশ্যই ব্যর্থ টুর্নামেন্ট আমার জন্য। এটা মেনে নিতেই হবে। যত কথা বলি বা ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করি, এটা মানতেই হবে আমাকে যে ব্যর্থ হয়েছি। এখন আমাকে পথ খুঁজতে হবে কিভাবে এখান থেকে বের হতে পারি। আগেও সেটি করতে পেরেছি। আবার না পারার কারণ নেই।’



 

Show all comments
  • Ash ৭ জুলাই, ২০১৯, ৪:৩১ এএম says : 0
    মনে হয় বাংলাদেশ দলের একজন সাইকোলজিস্ট এবং অভিজ্ঞ বিশ্লেষক প্রয়োজন যারা আলাদা ভাবে দলের দুর্বলতাগুলোকে বিশ্লেষন করবে এবং তা শোধরানোর উপায় খুঁজে ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করবে। আর দলের বাইরেও তরুণ ট্যালেন্ট খুঁজতে হবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ