Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কেউই নিরাপদ নই

অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার নিয়ে চট্টগ্রামে সেমিনার

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৮ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

নির্বিচারে ক্রয়-বিক্রয় এবং যথেচ্ছ অপব্যবহার হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ। এতে করে দেশের জনগণের স্বাস্থ্য-চিকিৎসা খাতে অ্যান্টিবায়োটিক ডেকে আনছে ভয়াবহ ঝুঁকি। আমরা কেউ আর নিরাপদ থাকবো না। বন্দরনগরী চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ‘অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার, এর ভয়াবহতা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসকগণ উপরোক্ত উদ্বেগ ব্যক্ত করেন।

অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের অপপ্রয়োগ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সাবেক স্বাস্থ্য মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এম এ ফয়েজ গতকাল (রোববার) দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, বিষয়টি উদ্বেগজনক। যে ক্ষেত্রে যতটুকু ডোজ প্রয়োজন, যতদিন প্রয়োজন তার বেশি কিংবা কম হলেই তা অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার। শুক্রবার রাতে পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্ল-তে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পেশ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. মুলকুতুর রহমান।

সেমিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ইমরান বিন ইউনুস, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ রিসার্চ সেন্টারের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. রিদওয়ানুর রহমান, কবি সাংবাদিক আবুল মোমেন, দৈনিক পূর্বকোণের পরিচালনা সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী ও দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক। মূল প্রবন্ধে ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, বিজ্ঞানী আলেকজেন্ডার ফ্লেমিং সতর্ক করে বলেছিলেন- অপব্যবহারের কারণেই এই বিস্ময়কর আবিষ্কার (অ্যান্টিবায়োটিক) একসময় তার কার্যকারিতা হারাবে। তার এই সতর্কবাণী যেন সত্যি হতে চলেছে। বর্তমানে অর্ধেকেরও বেশি অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার হচ্ছে। অন্য ওষুধের কার্যকারিতা হারানোর কারণে পরিবর্তনটা ঘটে মানুষের শরীরে। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হারানোর কারণে পরিবর্তন ঘটে ব্যাকটেরিয়ায়।

এক হিসেবে দেখা গেছে, প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ মানুষকে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে। এক বছরে এ সংখ্যা দাঁড়ায় সাড়ে ৩৬ কোটি। অর্থাৎ এক বছরে সাড়ে ৩৬ কোটি মানুষকে প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে। দেশের ৫-৬ কোটি মানুষ রেজিস্ট্রার্ড ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পরামর্শ নেন। আর ১০-১২ কোটি মানুষ এখনও অর্ধশিক্ষিত ও অপ্রশিক্ষিত চিকিৎসা সেবাদানকারীদের কাছ থেকে পরামর্শ নেন। দেশে অর্ধশিক্ষিত ও অপ্রশিক্ষিত চিকিৎসা সেবাদানকারীর সংখ্যা ২ লাখ। যাদের অর্ধেকেরও বেশি সাধারণ মানুষকে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর অ্যান্টিবায়োটিকের যত বেশি ব্যবহার-ততবেশি রেজিস্ট্যান্স। অ্যান্টিবায়োটিকের বেশি ব্যবহারই রেজিস্ট্যান্স উদ্ভবের প্রধান কারণ।

বিশ্বের ইউরোপ ও আমেরিকায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কম। তাই ওখানে রেজিস্ট্যান্সও কম। কিন্তু এশিয়া ও আফ্রিকায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বাড়ছে। আর দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয়। এভাবে অপব্যবহার হতে থাকলে কেউ নিরাপদ থাকবে না।

এতে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. এম এ ফয়েজ। আর স্ট্রাটেজি পরিবর্তনের কথা জানান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. ইমরান বিন ইউনুস। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মুলকুতুর রহমান বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার রোধে আইনের কঠোর প্রয়োগের বিকল্প নেই।

সেমিনারে বিশিষ্ট আলোচকগণ অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার এবং প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি বন্ধ করতে আইনের কঠোর প্রয়োগ দাবি করেন। কারণ কোন অ্যান্টিবায়োটিকই যদি শরীরে আর কাজ না করে, তবে মৃত্যু অবধারিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ওষুধ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ