Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ক্ষমতাসীনদের কয়েকজনকে সুবিধা দিতে উন্নয়নের নামে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়েছে -মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ জুলাই, ২০১৯, ৮:১১ পিএম

ক্ষমতাসীন দলের গুটিকয়েকজনকে সুবিধা দিতেই গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, উন্নয়নের একটা ঢোল বাজানো হচ্ছে সবসময়ই। সোমবার প্রধানমন্ত্রী চীন থেকে ফেরত এসে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, উন্নয়ন পেতে হলে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধিতে মেনে নিতেই হবে। অর্থাৎ মূল্য দিতে হবে। সেই মূল্য দিতে হয় কার জন্যে? সেই মূল্যটা দিতে হবে সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্যে। কিন্তু আজকে যে উন্নয়নের কথা বলে জনগণের পকেট থেকে টাকা বের করে নেয়া হচ্ছে, সেই অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে শুধুমাত্র গুটিকতক ক্ষমতাসীন দলের লোকের সুবিধার জন্যেই।

মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকালে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেনের লেডিস ক্লাবে বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ‘ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের ‘কেন্দ্রীয় সম্মেলন-২০১৯’ অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও একগুচ্ছ বেলুন উড়িয়ে কাউন্সিলের উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব।

অনুষ্ঠানে সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে কেনো? এই গ্যাসের মূল্য এলএনজি আমদানি করে তার ভতুর্কি দেয়ার জন্য। এই এলএনজি কারা আমদানি করছেন? সরকারের সঙ্গে যারা ওতোপ্রতোভাবে জড়িত, যারা মন্ত্রী অথবা উপদেষ্টা অথবা তাদের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন তাদের জন্যই আজকে বাড়তি খরচ, বাড়তি ব্যয়। আর এই বাড়তি ব্যয় ও খরচ জনগণকে বহন করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে সরকার কোনো নির্বাচিত সরকার নয়। তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই। এই সংসদ নির্বাচিত হতে পারেনি কারণ তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। রাষ্ট্রের সমস্ত যন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে। এদের জনগণের কাছে কোন দায়বদ্ধতা নেই। তাই গ্যাসের দাম বাড়লেই বা কী, ভ্যাটের পরিমাণ বা ইনকাম ট্যাক্সের পরিমাণ বাড়লেই বা কী?। এরা জনগণের প্রতিপক্ষ হিসেবে অবস্থান নিয়েছে। তাদের একটি মাত্র লক্ষ্য- তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়। সেজন্য গত এক দশক ধরে সমস্ত আয়োজনগুলোকে সেভাবে সম্পন্ন করেছে।

বিচার বিভাগের কোনো স্বাধীনতা নেই মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, এই বিচার বিভাগ এমন একটা পর্যায় গিয়ে পৌঁছেছে যেখানে আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বিচারের হুকুম বা রায় দিতে হয়। পাবনাতে ’৯৪ সালে বিরোধীদলের নেত্রীর ওপরে ট্রেনে হামলা হয়েছিলো, কোনো হতাহত হয়নি। আমরা সবসময় যেকোনো হামলা, যে কোনো সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করেছি। কিন্তু যেখানে কোনো হতাহতই হয়নি এবং তিন বছর পরে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। আজকে ২৫ বছর পরে সেই মামলার রায় দিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে ৯ জনকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে। ২৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদ-। এই হচ্ছে বিচার বিভাগের অবস্থা।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মামলাগুলো সম্পূর্ণভাবে সাজানো। কোথাও কোনো তছরুফ হয়, কোনো টাকা বাইরে যায়নি। আজকে অন্যায়ভাবে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারনে কারাদ- দেয়া হয়েছে এবং সেটাকে বাড়িয়ে আবার ৫ বছর থেকে ৭/১০ বছর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এসব মামলায় তিনি (খালেদা জিয়া) জামিন পাওয়ার যোগ্য, তিনি জামিন পাচ্ছেন না। একই ধরনের মামলায় সবাই জামিন পাচ্ছেন কিন্তু দেশনেত্রী জামিন পাচ্ছেন না। তার বিরুদ্ধে ৩৬টি মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এমনো মামলা আছে যে, একই সময়ে তিনটি থানায় গিয়ে বোমা মেরেছেন। এতে প্রমাণিত হয় বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। কারণ তারা জানে, তিনি গণতন্ত্রের প্রতীক, তিনি যদি বেরিয়ে আসেন জনগণকে নিয়ে চলতে থাকেন তাহলে কোনোভাবে তাকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না এবং তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। সেজন্য তাকে বেআইনিভাবে ১৬/১৭ মাস আটক করে রাখা হয়েছে।

দেশের ছেলেরা বেকার থাকলেও বিদেশীরা অর্থ নিয়ে যাচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার এই দেশকে একটা পরনির্ভরশীল দেশে পরিণত করতে যাচ্ছে। দেশে শিক্ষিত যুবকেরা চাকরি পায় না, কর্মসংস্থান নিচের দিকে নামছে। একদিকে উন্নয়নের কথা বলে, অন্যদিকে আমাদের ছেলেদের চাকরি নেই। অথচ একই সময়ে ভারত থেকে কর্মীরা এসে, বিভিন্ন মানুষেরা এসে তারা প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে যাচ্ছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, বাংলাদেশের বর্তমান যে সরকার ক্ষমতা দখল করে আছে তারা প্রকৃতপক্ষে জনগণের সরকার নয়। এরা একটা পুতুল সরকারে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

সম্মেলনে ড্যাবের নতুন নির্বাচিত সভাপতি হারুন আল রশিদ, মহাসচিব আব্দুস সালাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সেলিম, ট্রেজারার জহিরুল ইসলাম শাকিল ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মেহেদী হাসানের নাম ঘোষণা করা হয়। গত ২৫ মে কাউন্সিলরদের ভোটে এই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়। এই কাউন্সিলের মাধ্যমে ড্যাবের আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

ড্যাবের আহবায়ক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ওবায়দুল কবির খানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, ড্যাবের রফিকুল কবির লাবু, মোস্তাক রহিম স্বপন, একেএম মহিউদ্দিন ভুঁইয়া মাসুম বক্তব্য রাখেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর সদরুল আমিন, আখতার হোসেন খান, মামুন আহমেদ, এবিএম ওবায়দুল ইসলামসহ শতাধিক চিকিৎসক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল

২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ