Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

টানা বর্ষণ : বান্দরবানের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন শিশুসহ নিহত ৪

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

 বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরে মারা গেছে ২ শিশু, রাঙ্গামাটি কাপ্তাইয়ে শিশুসহ ২ জনের নিহতের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।

স্টাফ রিপোর্টার, বান্দরবান জানান, টানা বৃষ্টিতে সাঙ্গু নদীর পানি বেড়ে বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কের বাজালিয়ায় প্রধান সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। এ কারণে মঙ্গলবার সকাল থেকে বান্দরবানের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার থেকে আসা বাসগুলো আটকা পড়েছে বাজালিয়ায়। যাত্রীরা পানিতে ডুবে থাকা সড়কের প্রায় আধা কিলোমিটার অংশ ভ্যান, নৌকা এবং পায়ে হেঁটে পার হচ্ছেন।

গত শনিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয় ভারি বর্ষণ। এর ফলে সোমবার পাহাড় ধসে সড়কের ওপর পড়ে বান্দরবান থেকে রুমা ও থানচির সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ভারি বর্ষণের ফলে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে বাজালিয়ায় ডুবে যাওয়ায় সারাদেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে বান্দরবান সড়ক ও জনপথের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী সজিব আহমেদ বলেন, ‘বান্দরবান- চট্টগ্রামের বাজালিয়ার সড়কটি উঁচু করার কথা ছিল। কিন্তু গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে আমরা এ সড়কটি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছি। আমরা তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বাজালিয়ার এ সড়কটি উঁচু করতে অনুরোধ জানিয়েছি।’

কক্সবাজার ব্যুরো জানান, গত পাঁচদিনের প্রবল বৃষ্টি এবং ঝড়ো বাতাসে উখিয়ার শিবিরে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয়স্থল হারিয়েছেন বলে জানা গেছে। এ সময় মারা গেছে দুই রোহিঙ্গা শিশু। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করতে গিয়ে এমন চিত্র দেখেছেন বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম-এর স্বোচ্ছাসেবিরা বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে ক্ষতিগ্রস্তদের আবাসস্থলগুলো মেরামত এবং আশ্রয়হীন পরিবারগুলোকে জরুরি আশ্রয়স্থলে নিতে সংশ্লিষ্টরা কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট সূত্র । নিহত দুই শিশু হলো, উখিয়া হাকিমপাড়া ক্যাম্পের মোহাম্মদ হামিম (৮) ও মধুরছড়া ক্যাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহীম (৭)। এর আগেও ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ধসে মোস্তফা খাতুন (৫০) নামে আরেক রোহিঙ্গা নারী নিহত হন।

আইওএম-এর কর্মকর্তা জানান, বর্ষাকালের মাত্র অর্ধেক সময় পার হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে গত ৭২ ঘণ্টায় তারা দুই হাজার মানুষকে সহায়তা করেছেন। তাদের সদস্যরা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। বৃষ্টিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক পরিমান ইতোমধ্যেই ২০১৮ সালের ক্ষয়ক্ষতির থেকেও বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা।

আইওএম এর ভাষ্য মতে, ২ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ১ হাজার ১৮৬টি, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ২১৬টি, ঝড়ো হাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ১ হাজার ৮৪০টি, বন্যায় বা অন্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৫ হাজার ৫৩৪ জন। ভূমিধস হয়েছে ৩৯১টি, ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে ৫১ বার এবং সোমবার রাত পর্যন্ত (৭ জুলাই) হয়েছে ২৬ বার। গত ২৪ ঘণ্টায় আইওএম এর ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন অনুযায়ি দেখা যাচ্ছে- আরও ১৩ টি ভূমিধস হয়েছে, নয়বার ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে এবং দুটি বন্যায় দুই হাজার ২শ ব্যক্তি এবং ৪৩২টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ সপ্তাহজুড়ে বৃষ্টি এবং ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন আবহাওয়া বিদরা।

কাপ্তাই (রাঙ্গামাটি) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গত ক’দিনের প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন ইউপি এলাকায় পাহাড় ধস, বিদ্যুৎখুঁটি, সড়ক ও ঘর বাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কাপ্তাই উচচ বিদ্যালয় ও চন্দ্রঘোনা আশ্রয় কেন্দ্রে দলে দলে লোকজন পাহাড়ের ঢালু হতে নিরাপদে আসতে শুরু করেছে। মঙ্গলবারের প্রবল বৃষ্টিপাতে কেপিএম এলাকায় পাহাড় ধসে শিশুসহ দু’জনের মৃত্যু হয়। রাইখালী, লগগেইটসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে প্রায় ৪০ ঘর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশ্রাফ আহমেদ রাসেল জানান, এলাকায় মাইকিং করে, নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে আসার জন্য আহবান করা হয়েছে। পাহাড়ের ঢালু হতে নিরাপদে সরে আসার জন্য বহু ঘরে নিজ হাতে তালা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ