Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

‘আমরা ঝুঁকি নিরূপণ করতে পারিনি’

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৬ এএম

বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) এবং বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের (বিসিসিটিএফ) আওতায়। এর মধ্যে এডিপির তুলনায় বিসিসিটিএফ কম কার্যকর বলে এক গবেষণায় তুলে ধরেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গতকাল বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে ‘জলবায়ু ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে সামঞ্জস্য নিরূপণ : কোনটি অধিক দক্ষ, কার্যকর ও স্বচ্ছ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উপস্থাপনের এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় গবেষক এম জাকির হোসাইন খান বলেন, আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ হলো এখন পর্যন্ত আমরা স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ভবিষ্যৎ ঝুঁকি সঠিকভাবে নিরূপণ করতে পারিনি।
টিআইবির ফেলোশিপের আওতায় এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রণয়ন ও উপস্থাপন করেন এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট (এসিডি)-এর পরিচালক ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ কে এনামুল হক এবং এসিডির এশীয় ফেলো ও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইসতিয়াক বারী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন ইউনিটের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এম জাকির হোসাইন খান। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় টিআইবি ২০১৮ সালের জুলাই হতে ২০১৯-এর জুন পর্যন্ত সময়ে এই গবেষণার তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়।
সার্বিকভাবে এই গবেষণার ম‚ল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশে উন্নয়ন অর্থায়নে পরিচালিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মস‚চি ও জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অধীনে গৃহীত বা বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর মধ্যে কতটুকু সামঞ্জস্য ও ভিন্নতা রয়েছে তা যাচাই করা এবং উভয় ধরনের প্রকল্পের মধ্যে বাস্তবায়ন দক্ষতা, কার্যকারিতা এবং টেকসই বিবেচনায় কোন ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়ন পদ্ধতি বেশি যৌক্তিক, সে বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা।
এছাড়াও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে বাস্তবায়িত বা বাস্তবায়নরত প্রকল্পগুলো কি তুলনাম‚লকভাবে অধিক দক্ষ, কার্যকর ও টেকসই? এর বিপরীতে যদি ভিন্ন অর্থায়ন প্রক্রিয়ার ফলাফল একই রকম হয় তবে প্রকল্প অর্থায়নের জন্য দুটো পৃথক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখা কতটুকু যৌক্তিক সে বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হয়েছে।

গবেষণার আওতায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মস‚চি ও জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অধীনে গৃহীত বা বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোর প্রভাব পর্যালোচনা করতে গিয়ে প্রধানত অর্থনৈতিক, দারিদ্র্য বিমোচন, সামাজিক উন্নয়ন, জলবায়ু সহিষ্ণুতায় সক্ষমতা তৈরি এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এই কয়েকটি ক্ষেত্রে তুলনাম‚লক বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক প্রভাব পর্যালোচনা করতে গিয়ে গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মতামতকে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, অর্থনৈতিক প্রভাবের পাঁচটি স‚চকের মধ্যে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি এবং গরিব জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধিতে জলবায়ু পরিবর্তন কার্যক্রমের তুলনায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অধীনে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো অধিকতর সহায়ক এবং কার্যকর। তবে প্রকল্প পর্যায়ে অন্য তিনটি অর্থনৈতিক সূচক যথাক্রমে- বৈচিত্র্যপূর্ণ অর্থনৈতিক কার্যক্রম, বাজারে অভিগম্যতা বৃদ্ধি এবং উপজেলার উন্নয়নে দুই ধরনের প্রকল্পের (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ও জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড) প্রভাবের মধ্যে কোন ভিন্নতা পাওয়া যায়নি।

গবেষণা অনুযায়ী দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে প্রভাব পর্যালোচনায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ও জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অধীনে বাস্তবায়িত প্রকল্পের অংশগ্রহণকারীদের মতামত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় দারিদ্র্য বিমোচন প্রভাবের অন্তর্গত ৭টি ভিন্ন সূচকের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ ব্যতীত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সেচ সুবিধা ও বিদ্যুৎ সংযোগের প্রসার, উন্মুক্ত জলাধারে মাছ ধরা, মাছ চাষ ও পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমে উভয় ধরনের প্রকল্পের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখা যায়নি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী দেশসম‚হের অঙ্গীকারের তুলনায় বাংলাদেশসহ অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশে জলবায়ু অর্থ প্রবাহ এখনো পর্যন্ত খুবই নগণ্য। সরকারের প্রাক্কলন অনুযায়ী জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রতি বছর যেখানে ২.২ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন, তার বিপরীতে এখনো পর্যন্ত গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড থেকে মাত্র ১১৩ মিলিয়ন ডলারের বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যার বাস্তবায়নকারী প্রধান কর্তৃত্বও বিদেশি সংস্থার হাতে। এই প্রেক্ষিতে জাতীয় স‚ত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ও ক্ষতি মোকাবেলায় প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন তা বিসিসিটিএফ-এর মাধ্যমেই হোক, সনাতন উন্নয়ন প্রকল্পের অংশ হিসেবেই হোক- অপরিহার্য ও সর্বোচ্চ প্রাধান্যের যোগ্য। তিনি আরো বলেন, এ গবেষণায় যে বিষয়টি পরিষ্কারভাবে উত্থাপিত হলো তা হচ্ছে, উভয় ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিশেষায়িত উপাদানগুলো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা এবং তার ওপর ভিত্তি করে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, দেশি-বিদেশি উভয় স‚ত্রে বাজেট বরাদ্দ, পরিমাপযোগ্য বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও নিরীক্ষা নিশ্চিতের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা।

সংবাদ সম্মেলনে এম জাকির হোসাইন খান বলেন, আমাদের ম‚ল চ্যালেঞ্জ হলো এখন পর্যন্ত আমরা স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ভবিষ্যৎ ঝুঁকি সঠিকভাবে নিরূপণ করতে পারিনি। ফলে উন্নয়ন কর্মকান্ডের সাথে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত কার্যক্রমগুলো সঠিকভাবে সুনির্দিষ্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতে জাতীয়ভাবে জলবায়ু অর্থায়ন কৌশলপত্র প্রণয়নের প্রস্তাব থাকলেও এখন পর্যন্ত তা করা হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক তহবিল সংগ্রহ করতে হলে অবিলম্বে আমাদের জাতীয়ভাবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি নিরূপণ এবং জলবায়ু অর্থায়নে কৌশলপত্র প্রণয়ন করা জরুরি।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ প্রদান করে বলা হয়, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অধীনে বাস্তবায়নরত বা পরিকল্পনাধীন নতুন প্রকল্পগুলো যদি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-এর বাস্তবায়ন ও তদারকি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, তবে তা অধিকতর কার্যকর হতে পারে। অন্যদিকে এডিপির মধ্যেও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা সংশ্লিষ্ট অনেক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে যদি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গৃহীত কার্যক্রমসম‚হ সুনির্দিষ্ট এবং পৃথক করা সম্ভব হয় তাহলে আন্তর্জাতিক জলবায়ু তহবিলসম‚হে বাংলাদেশ আরো অধিকতর অভিগম্যতা অর্জনে সক্ষম হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জলবায়ু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ