প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, দেশে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে উপজেলা পর্যায়ে কারিগরি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, দক্ষ শ্রমিক তৈরিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গা কারিগরি শিক্ষা। আমরা কারিগরি শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। একই সঙ্গে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে প্রশিক্ষক বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। প্রত্যেক জেলায় ৬৫ থেকে ৭০ জন প্রশিক্ষক তৈরি করা হচ্ছে। নতুন এই উদ্যোক্তাদের ৬৪ জেলায় প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। উদ্যোক্তাদের স্লোগান হচ্ছে, ‘চাকরি চাই না, চাকরি দিতে চাই’।

গতকাল ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) ও ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশন (আইএসসি) যৌথ আয়োজনে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর পল্টনে ইআরএফের নিজস্ব কার্যালয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইএফসি’র সিনিয়র অর্থনীতিবিদ ড.মাশরুর রিয়াজ ও বেসরকারি খাত বিশেষজ্ঞ হোসনা ফেরদৌস সুমি, ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সালমান এফ রহমান বলেন, সহজে ব্যবসা করার সূচকে উন্নতি করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। দেশে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে উপজেলা পর্যায়ে কারিগরি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখী করতে হবে, তবে সেটা পোশাক খাতকে বাদ দিয়ে নয়। পোশাকে আমরা বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছি। আরো উন্নতির সুযোগ আছে। পাশাপাশি অন্য খাতের রপ্তানি বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, পোশাকের মতো সব রপ্তানি খাত সমান সুযোগ পাবে। অতীতে আমরা সেই সুযোগ দিতাম না। এবার সে সুবিধা পাবে। এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই ঘোষণাও দিয়েছেন।

সালমান এফ রহমান বলেন, আমাদের গার্মেন্ট পণ্যের বহুমুখীকরণ হয়েছে। পাশাপাশি গার্মেন্ট পণ্যের বাজারেরও বহুমুখীকরণ হয়েছে। ডেনিম, সোয়েটারের চাহিদা বেড়েছে। আগে আমরা আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি করতাম, এখন বিশ্বের অনেক দেশে গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা বলেন, শিল্পের এক খাত থেকে যখন আমরা অন্য খাতে যাচ্ছি, তখনই আমাদের অভিজ্ঞতার অভাব দেখা দেয়। নতুন সেক্টরে অনেক্ষেত্রে আমাদের শ্রমিক সংকট না হলেও ম্যানেজারের সংকট হয়। সেই অভিজ্ঞতার অভাবে আমরা বাইরে থেকে ম্যানেজার আনি। আশা করি, ভবিষ্যতে এ সংকট থাকবে না।
সালমান এফ রহমান জানান, আগামী অক্টোবরের শেষ নাগাদ ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যখন ইজ অব ডুইং বিজনেসের র‌্যাংকিং ঘোষণা করবে, আশা করছি বাংলাদেশের র‌্যাংকিংয়ে উন্নতি হবে। একই সঙ্গে এ নিয়ে কাজ চলছে। আশাকরি আগামী বছরে ডাবল ডিজিটে থাকবে। যদি আমাদের আশা পূর্ণ হয়, তাহলে এটি বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে ভ‚মিকা রাখবে। এছাড়া রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের অংশ হিসেবে চামড়া ও চামড়াজাত পন্য রপ্তানি এবং ওষুধ রপ্তানিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সবধরণের প্রতিবন্ধকতা দূর করা হচ্ছে। শিগগিরই রপ্তানিতে বড় সুযোগ আসবে।

তিনি বলেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা), বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা), বেপজা ও হাইটেক পার্ক এসব জায়গায় যারা বিনিয়োগ করবে, তারা ওয়ান স্টপ সার্ভিসের সুবিধা পাবে। সবকিছু সমন্বিতভাবে করা হবে। এদিকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধের সুফল কিভাবে ব্যবহার করা যায় সেদিকে বিশেষ নজড় দেওয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়াও গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। আমাদের মানসিকতার ব্যপক পরিবর্তন এসেছে। এখন আমাদের মাইন্ড সেট মধ্যম আয়ের দেশের। পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নত দেশের কাতারে যাওয়ার জন্য কাজ চলছে। সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করলে অর্জন অবশ্যই সম্ভব।

ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল বলেন, বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে ৭৪৪টি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। কিন্তু রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশই আসে একটি মাত্র খাত পোশাক শিল্প থেকে। আমরা মনে করি- কেবল একটি পণ্যের ওপর এভাবে নির্ভরশীল হয়ে একটি দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। তাই রপ্তানি পণ্য বহুমূখীকরণের উদ্যোগ নেয়া এখন সময়ের দাবি। আমাদের পণ্য বহুমূখীকরণের বাঁধা কোথায়? সেটি নিশ্চয় সরকারের নীতি নির্ধারকরদের অজানা নয়। তবে আমরা মনে করি ব্যবসায় পরিবেশের উন্নয়ন ও বাণিজ্য সহজীকরণের প্রতি আমাদের মনোযোগ বাড়াতে হবে।