Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হুমায়ূন : উত্তরকালে

সো হে ল আ মি ন বা বু | প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৯, ১২:১৭ এএম

একবিংশ শতাব্দীর সাহিত্যাকাশে হুমায়ূন আহমেদ’র (১৯৪৮-২০১২) দিকে তাকালে তাঁকে এক স্বপ্নজগতের বাসিন্দা বলে মনে হয়। তিনি বাঙালি পাঠকের কাছে আজও জনপ্রিয়। এ কালের পাঠকের, আমার মত, মনে হতেই পারে- তিনি পরীর দেশ থেকে উঠে আসা কোন লোক। হুমায়ূন আহমেদের ‘হিমু’ মিসির আলী, শুভ্র’ রহস্যসময় সব চরিত্র। নি¤œমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবন এতো সুন্দর ভাবে আর কোন লেখকের হাতে সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হয় না। হুমায়নের দেখার চোখ ছিল ভিন্ন,তাই তাঁর সৃষ্টিকর্মগুলোও জীবন ভিন্ন ভিন্ন অবয়ব নিয়ে গড়ে উঠেছে। তাঁর কথাসাহিত্যের মধ্যে তাঁর নিজের ব্যাক্তিগত জীবনরচনাতে ঐ দৃস্টিপাত একমাত্র বিবেচ্য বিষয়। ১৯৭২ সালে ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসের মাধ্যমে তাঁর আতœপ্রকাশ ঘটেছিল। বাকি ৪০ বৎসর তিনি উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক যত লিখেছেন তার সংখ্যাও তিন শতাধিক। কিংবা এমন রচনা প্রায় পাওয়াই যাবে না যেখানে জীবন ও জগৎকে দেখার একটি বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গিমা না - পাই। সত্যিই তো দুনিয়া চোখের সামনে পাল্টে যাচ্ছে- এত দ্রæত গতিতে যে প্রায় তাল রাখা যাচ্ছে না। হুমায়ূন আহমেদ সময়ের সঙ্গে ছুটেছেন, অন্তত চেষ্টা করেছেন তাল রাখার। মধ্যবিত্তরা সংসারের ঘানি টানতে যেমন করে ছোটে। হুমায়ূন আহমেদ ব্রাত্যজনের কথা তাঁর সাহিত্যে খুব বেশি স্থান দেননি। তার মানে কী তিনি সিরিয়াস লেখা নন? মধ্যবিত্তরা নি¤œমধ্যবিত্তরা কি সাহিত্যের উপজীব্য হতে পারে না? অবশ্যই পারে। মধ্যবিত্তের জীবন অংকন করে হুমায়ূন সেই কাজটিই করেছেন। তাঁর কথা সাহিত্যে পুরানের ব্যবহার আছে, আছে মিথের ব্যবহার। কাহিনী মানেই শুধু ঘটনার আড়ম্বর নয় এবং ঘটনাহীন জীবনেরও কাহিনী থাকে। হুমায়ূন আহমেদ সেই জীবন কাহিনীরই স্থপতি। হুমায়ূনের প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ তাঁকে খ্যাতি এনে দিয়েছিল। ‘শঙ্খনীল কারাগার’ ও পাঠক প্রিয়তা পেয়েছিল। এর পর লেখককে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। তিনি পাঠক পেয়েছেন বিত্ত গড়েছেন শুধু লেখা দিয়ে । হুমায়ূন আহমেদ নেই তাই বলে কী তার বই বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে? উত্তরকালেও বাংলা সাহিত্যেকাশে হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয়তার চেয়ে তাঁর খ্যাতির পাল্লা ওজনে ভারী।

২.
তাঁর কালোত্তীর্ণ উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’ এই উপন্যাস সম্পর্কে বলা যায় যে, ‘বৃত্তাবদ্ধ’ ও সম্ভাবনাশূন্য নি¤œবিত্ত জীবনের আবেগী শব্দরুপ ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাস। উপন্যাসের কাহিনী সংক্ষেপে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় একটি পারিবারিক জীবনের অন্তরালে উপন্যাসটি অগ্রসর হয়েছে। হুমায়ূন, মন্টু, রাবেয়া, রুনুর জীবনে অনেকটা হঠাৎ করেই আগমন ঘটে মাষ্টার কাকার। শরীফ আকন্দ তথা মাষ্টার কাকা তাদের পরিবারে আসে তাদেরই পিতার হাত ধরে। বিয়ে বাড়িতে বাবার হাত ধরে মাষ্টার কাকা বাবাকে বলেছিল তুমি‘ যে বাড়িতে বিয়ে করেছ আমি সেই বাড়িতে থাকি, বাচ্চাদের পড়াই,’ এরপর খোকার বাবা তার অবস্থার করুন পরিণতি শুনে তাকে নিজ বাড়িতে স্থান দিলেন। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র রাবেয়া। তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর আকস্মিকতায় বিনষ্ট হয়ে যায় একটি পরিবারের মূল্যবোধ, বিশ্বাস, সুস্থতা। অবৈধ মাতৃত্বের কলঙ্ক থেকে পরিবারকে রক্ষা করতে গিয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রাবেয়ার মৃত্যু ঘটে। দীর্ঘদিন ধরে এই পরিবারে আশ্রিত, চিরকুমার মাষ্টার কাকার কর্মধারার কোন ব্যাখ্যা এই উপন্যাসে না থাকলেও তার পরিণাম রাবেয়ার পরিণমের সঙ্গে প্রথিত হয়ে যায়। তাই অবৈধ মাতৃত্বের দায় চাপে মাষ্টার কাকার ওপর যার পরিনতি হিসাবে মন্টু কাকা তাকে হত্যা করে। ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসের নামকরণের সঙ্গে অভিপ্রায়ের চমৎকার মিল পরিলক্ষিত হয়। সাজানো সুখের আবাস একটি আমস্মিক মৃত্যু কীভাবে নরকে পরিণত করে দেয় তা এই উপন্যাসের ধারণ করা হয়েছে। অভিনব বিষয় ও মানবিক সম্পর্কের বহুমুখী রূপ, সর্বপরি বর্ননার নৈপূণ্য ও ঐক্যের সুষমা ‘নন্দিত নরকে’ উপন্যাসটিকে সাহিত্যাঙ্গনে একটি বিশিষ্ট স্থান দান করেছে।
প্রযুক্তি নির্ভর এই সময়েও হুমায়ূন আহমেদ কতটা জনপ্রিয় তার প্রমাণ মেলে বিশিষ্ট সাহিত্যিকের মন্তব্যে, আলোচনায়। তাঁর সম্পর্কে বাঙালি লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁকে ‘বাংলা সাহিত্যে একটি শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক’ উল্লেখ করেন। কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন’। উত্তরকালে অংসখ্য লেখক তার জনপ্রিয়তার প্রসঙ্গ বারবার টেনে সামনে গিয়ে আসেন। তাঁর প্রতি পাঠকের ভালোবাসা হৃদয় ঘটিত। যা কখোনোই ফুরোবার নয়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হুমায়ূন


আরও
আরও পড়ুন