Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রভাবশালী মহলের পুকুর ভরাটের চেষ্টা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০১৯, ৩:১৮ পিএম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অমান্য করে পুকুর ভরাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিদিন রাতের আঁধারে ট্রাক্টরে করে বালু পুকুরে ফেলা হচ্ছে। পুকুরের প্রায় অর্ধেকের বেশি অংশ বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। গত ১০ বছরে জেলা শহরে বিধিবহির্ভূতভাবে অন্তত ২৫-৩০টি পুকুর বালু ও মাটি দিয়ে ভরাট করে ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করেছেন প্রভাবশালীরা।

পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব স্বাক্ষরিত এক নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর জেলা শহরের কোর্ট রোড এলাকার গোলাপ রেস্ট হাউজ সংলগ্ন পুকুর ভরাটের মৌখিক অভিযোগের পায় পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক হাসান আলী সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ৬০ শতক ওই পুকুরের প্রায় অর্ধেক বালু দ্বারা ভরাট করা হয়েছে বলে দেখতে পান। ২০১৮ সালের ১৫ মার্চ পুকুরের ভরাট প্রসঙ্গে গোলাপ মিয়া (৬০) ও জাহাঙ্গীর কবিরের ছেলে সোহেল কবীরকে (৩২) শুনানীর নোটিশ দেন পরিবেশ অধিদপ্তর। ওই বছরের ২২ মার্চ পরিবেশ অধিদপ্তরে স্বশরীরে হাজির হতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর উপধারা ৬ (ঙ) অনুযায়ী পুকুর ভরাট করায় গোলাপ ও সোহেলের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না-এর লিখিত জবাব দিতে বলা হয়। কিন্তু তারা কেউই যাননি।

জানা গেছে, কোর্টরোডের পুকুর সংলগ্ন এলাকায় অমরেন্দ্রনাথ লাল রায়সহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১১জনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাঁরা বিভিন্ন দাগে প্রায় সাড়ে ১০ শতক জায়গায় প্রায় ৭০ বছর যাবৎ ভোগ দখলে আছেন। সম্প্রতি গোলাপ ও জাহাঙ্গীর সেখানে পুকুর ভরাট করে নির্মাণকাজ করতে গেলে ব্যবসায়িরা বাধা দেন। চলতি বছরের গত ২৯ জুন গোলাপ ও জাহাঙ্গীরসহ তাদের লোকজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এই ১১জনকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভয় দেখান এবং জায়গা জোরপূর্বক দখলের হুমকিও দেন। পরে গত ৩০ জুন অমরেন্দ্রনাথ লাল রায়সহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১১জন ব্যবসায়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে ১৪৪ ধারা জারির জন্য আবেদন করেন।

মামলায় ১১জন ব্যবসায়ি উল্লেখ করেন, তাদের দলিলমূলে চৌহদ্দীতে কোর্টরোডের ওই জায়গার দক্ষিণ দিকে পুকুর রয়েছে। কিন্তু সদর উপজেলার সহকারি কমিশনারের (ভূমি) দায়িত্বে থাকা সোহেল রানা ও সদর ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই স্বাক্ষরিত ৫৩২৪ নম্বর খতিয়ানের ১৯৭২ দাগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মৌজার ওই জায়গাটির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর হালে ভিটি দেখিয়েছেন। সেখানে ৪৯ শতকের মধ্যে ১৭ দশমিক ১৬ শতক জায়গার মালিক জাহাঙ্গীর গং। কিন্তু সিএস খতিয়ানে একই জায়গার ৭৬ শতক এবং এসএ খতিয়ানে ৮৯শতক জায়গা পুকুর রয়েছে। জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী, কোনো পুকুর-জলাশয়, নদী-খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। ওই আইনের ৫ ধারামতে, জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। পরিবেশ অধিদপ্তরের রিসার্চ কর্মকর্তা রুনায়েত আমিন রেজা বলেন, জায়গাটি অবশ্যই পুকুর। এখানে গোলাপ রেস্ট হাউজ ছিল বলে ভরাটের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন। আর তাঁরা জায়গাটির পুকুর থেকে শ্রেণি পরিবর্তন ভিটি করেছেন। যা আইনত দন্ডনীয় একটি কাজ। তারা বালু ফেলে পুকুরের অনেকদূর ভরাট করে ফেলেছে। জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, আমরা পুকুর ভরাটের ঘোর বিরোধী। এখনই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করছি।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ব্রাহ্মণবাড়িয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ