সম্প্রতি পাস্তুরিত দুধ নিয়ে গবেষণা করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বায়োমেডিক্যাল রিসার্স সেন্টারের সদ্য সাবেক পরিচালক প্রফেসর আ ব ম ফারুকের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। একইসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের রুঢ় ও অসৌজন্যমূলক আচরণের প্রতিবাদও জানানো হয়েছে সমিতির পক্ষ থেকে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাবি শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘সম্প্রতি ঢাবির সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর আ ব ম ফারুকের পাস্তুরিত তরল দুধে এন্টিবায়োটিকসহ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানসমূহের উপস্থিতি বিষয়ক একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর মৎস্য ও প্রাণিসম্প্রদ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব গবেষণা-বিশ্লেষণকে ভুল এবং প্রফেসর আ ব ম ফারুকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ৭১ টেলিভিশনের একটি টক শোতে প্রফেসর আ ব ম ফারুকের সাথে মৎস্য ও প্রাণিসম্প্রদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব যে রূঢ় ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন, তা অনাকাক্সিক্ষত ও শিষ্টাচার বহির্ভূত। ঢাবি শিক্ষক সমিতি এহেন আচরণের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছে।’

এতে আরও বলা হয়, ‘কোনো গবেষণার ফলাফল ভুল অথবা শুদ্ধ, তা পাল্টা গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করতে হয়। মন্ত্রণালয় এ ধরণের কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে গবেষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার যে হুমকি দিয়েছে, তা যেকোন গবেষকের গবেষণার স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। এ ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন গবেষকদের গবেষণায় নিরুৎসাহিত করবে এবং তাতে জাতির প্রভূ ক্ষতি হবে বলে শিক্ষক সমিতি মনে করে।’

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমাদের বিশ্বাস, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/ব্যক্তিবর্গ এরই মধ্যে তাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। সরকারি সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ জনস্বার্থ সম্প্রর্কিত যে কোনো বিষয়ে নিয়মিত গবেষণা, পর্যালোচনা করবে এটাই স্বাভাবিক। জ্ঞান অন্বেষণ ও বিশ্লেষণের ফলাফল জনস্বার্থে প্রকাশ করা যেকোন গবেষকের দায়িত্বের অংশ এবং মৌলিক অধিকার। প্রফেসর আ ব ম ফারুক জনস্বার্থে তার গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেছেন। জার্নালে প্রকাশিত হওয়ার আগে কোনো গবেষণার ফলাফল সভা, সেমিনার ও সম্মেলনে প্রকাশ করা যাবে না এ ধারণাটিও সঠিক নয়।’

এতে বলা হয়, ‘ঢাবি শিক্ষক সমিতি শুরু থেকেই এ সংক্রান্ত সকল তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করে আসছে। গত ১৮ জুলাই শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের এক সভায় প্রফেসর আ ব ম ফারুককে হেনস্থাসহ এ ধরনের অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা করা হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি এবং বিশিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানসহ সচেতন মহল বিবৃতি, মানববন্ধন, পত্র-পত্রিকায় লেখনী, টক-শোর মাধ্যমে তার গবেষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং পাশে দাঁড়িয়েছেন। সে জন্য শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে দুধসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যে ক্ষতিকর উপাদানসমূহ দ্রæত নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহকে আহ্বান জানাই।’ বিজ্ঞপ্তিতে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ ও মানবকল্যাণে শিক্ষকরা সর্বদা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে এসেছে এবং তা অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়।