Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মানুষের টাকা নিয়ে যারা খেলছে তাদের ছাড় নেই : অর্থমন্ত্রী

‘শিগগিরই সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট বাস্তবায়নে প্রজ্ঞাপন’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০০ এএম

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যারা মানুষের টাকা নিয়ে ‘ছিনিমিনি খেলেছে’ তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে ৬ শতাংশ এবং ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহার বাস্তবায়নে খুব শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এই নির্দেশনা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই বলেও তিনি ব্যাংকগুলোকে মনে করিয়ে দিয়েছেন।

গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকে সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী এবং উদ্যোক্তা মালিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাকে একটু সময় দিন। আমরা কাউকে ছাড় দিব না। যারা খারাপ উদ্দেশ্যে টাকা নিয়েছ তারা কেউ পার পাবে না। তবে যারা ভালো উদ্দেশ্যে টাকা নিয়েছে, ব্যবসা করতে গিয়ে লস করেছে। সুদ বেশি হওয়ার কারণে টাকা ফেরত দিতে পারেনি, তাদের বিষয়টা ভিন্ন। আমি কাউকে অপমান করতে আসিনি; কারও ক্ষতি করতে আসেনি। কিন্তু যারা মানুষের টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, টাকা ফেরত না দেওয়ার জন্য নিয়েছে, তাদের কে আইনের আওতায় আনা হবে।

নয়-ছয় সুদহার নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও ব্যাংকগুলো এটা বাস্তবায়ন করছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে অঙ্গীকার করার পরও নয়-ছয় সুদ বাস্তবায়ন করেনি ব্যাংকগুলো। এমনকি প্রধানমন্ত্রী কয়েকবার ক্ষোভ প্রকাশের পরও ব্যাংক মালিকরা ব্যাংক ঋণে সুদের হার এক অংকে নামিয়ে আনেনি।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যাংক সুদ হার বাস্তবায়ন নিয়ে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা আজকে ব্যাংকারদের সাথে বসেছিলাম-এ বিষয়টি জানতে আমরা যে বাজেট ঘোষণা করেছি, তারা সেটার সাথে সংগতি রেখে চলতে পারবে কি না? তাদের সাথে আমাদের ব্যাংকিং খাত নিয়ে অনেক কথা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকাররা আমাকে আশ্বস্ত করেছে, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ব্যাংকিং খাত ঘুরে দাঁড়াবে। বিশেষ করে তারা বলেছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমবে। পাশাপাশি নয়-ছয় বাস্তবায়নের বিষয়টিও আরো এগোবে। একই সঙ্গে ব্যাংকিং খাতের সেবার মান বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো তাদের কস্ট অব অপারেশন কমিয়ে আনবে। এইসব বিষয়ে ব্যাংকাররা আমাদেরকে কথা দিয়েছে এবং আপনারা সেপ্টেম্বরের মধ্যে এর ফলাফল দেখতে পাবেন।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যারা ব্যাংক ব্যবসার অনুমোদন দেয় তারা তা বাতিল করতে পারে। সুতরাং নয়-ছয়ের আদেশ বাস্তবায়ন নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। অর্থমন্ত্রী জানান, এ মুহুর্তে সরকারিসহ মোট ১৬টি ব্যাংক ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে এক অঙ্কের সুদহার বাস্তবায়ন করেছে। অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশের ব্যাংক খাত নিয়ে ‘ঢালাওভাবে’ কিছু না লিখতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান। অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনারা পার্টিকুলার ব্যাংক নিয়ে কথা বলতে পারেন। কিন্তু পুরো খাত নিয়ে যদি লেখেন তাহলে সেটা অর্থনীতির জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন দেশের একটি ব্যাংক ফারমার্স ব্যাংক সমস্যায় পড়েছিল। আমরা সেটি নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি এবং চেষ্টা করে যাচ্ছি। পাশাপাশি বেসিক ব্যাংক নিয়েআমরা কাজ শুরু করেছি; কাজ চলছে। এটি যেন আবার পুরো শক্তিতে ফিরে আসতে পারে এবং অর্থনীতিতে ভালো অবদান রাখতে পারে আমরা সে ব্যবস্থা করছি। একই সঙ্গে আমরা আমেরিকার মতো আমাদের ব্যাংকগুলো বন্ধ করে দিতে পারব না। এগুলো দেশের মানুষের অনেক কষ্টের টাকায় সৃষ্টি। আমরা এগুলোকে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভালো অবস্থায় নিয়ে আসব।

পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমি এটাও বলতে চাই, এই ব্যাংগুলোর দুরবস্থার জন্য যারা দায়ী অর্থাৎ যারা টাকা মেরে যাওয়ার জন্য নিয়েছে তারা কিন্তু সে টাকা ব্যবহার করতে পারবে না। তাদেরকে কী শাস্তি দেওয়া হবে, এখন আমি সেটা বলব না। তবে তারা পার পাবে না। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংকগুলোর এ অবস্থায় আসার পিছনে আরও একটি ব্যাপার কাজ করেছে, আমাদের অর্থনীতি যে গতিতে বার ছিল হঠাৎ করে তার গতি অনেকটা বেড়ে গেছে। আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত ছিল না। আমরা এখন ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আস্তে আস্তে তারা সেই সব ক্ষমতা অর্জন করবে। এ সময় ছিলেন বাংলদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থমন্ত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ