Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অনলাইনেই জমেছে পশু কেনাকাটা

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

কোরবানীর ঈদের প্রধান অনুষঙ্গই হচ্ছে পশু। যেটি কিনতে কোরবানির হাটগুলোতে সকাল থেকে বিকেল, সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত অবধি ঘুরতে হয়। আর এজন্য যানজট ঠেলে, রোদে পুড়ে, ঘেমে-নেয়ে একাকার হতে হয় পশু কিনতে আসা মানুষগুলোকে। আবার পছন্দের পশু কেনার পর সেটি নিয়ে বাড়ি ফিরতেও রীতিমত যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয় অনেককে। যা অনেকের কাছেই বিড়ম্বনা ও কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। ভিড় ঠেলে দরদাম করে হাট থেকে পশু কিনে আনার ঝামেলা থেকে যাঁরা দ‚রে থাকতে চান, তাঁদের জন্য বড় স্বস্তি হয়ে এসেছে অনলাইন পশুর হাট।

বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ঢুকে পছন্দমতো গরু কেনার সুযোগ করে দিচ্ছে ভার্চুয়াল এই মার্কেট। যেখানে কেবল পশুর ছবি দেখেই নয়, বরং ভিডিও দেখে পশু পছন্দ করার সুযোগ করে দিচ্ছে বিভিন্ন অনলাইন প্রতিষ্ঠান। শুধু গরু কেনা নয়, গরু-ছাগল বাড়িতে পৌঁছে দেয়া, কোরবানি দিয়ে বাড়িতে মাংস পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করবে এসব প্রতিষ্ঠান। আবার পশু জবাই ও মাংস কাটার কাজ করার জন্য পেশাদার কসাই, কোরবানীর কাজে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় পণ্য-সামগ্রীরও খোঁজ দিচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত কোরবানির হাটে নিজে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করে কোরবানির পশু কেনা বর্তমানে অনেকটা চ্যালেঞ্জিং। এ অসুবিধা সমাধান করতে সাইটে আছে পশুর সর্বাধিক তথ্য। আছে পশুর জাত, বয়স ও ওজনসংক্রান্ত সব প্রয়োজনীয় তথ্য, এর পাশাপাশি থাকছে খাদ্য তালিকা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষাসংবলিত বিস্তারিত তথ্যগুলো। অনলাইন হাট পরিচালনায় যুক্ত উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কোরবানি ঈদে প্রায় ছয় হাজার পশু বিক্রি হয়েছে, টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৪২ কোটি টাকা।

জানা যায়, কোরবানির আগের এ সময়ে হাটে-ঘাটে-মাঠে থাকে যানজট আর জনজট দালালদের খপ্পর, ছিনতাইয়ের ভয়, জাল টাকা ইত্যাদি নানা ঝক্কি ঝামেলা। এসব ঝক্কি এড়াতে দেশে এবং দেশের বাইরে থেকেও ক্রেতারা ভিড় করছেন ভার্চুয়াল কোরবানির হাটে। পশু কেনা ও জবাই করার মধ্য দিয়ে কোরবানি সম্পন্ন করার এ কাজকে এখন আরও সহজ করেছে প্রযুক্তি। প্রতিবারের মতো এ বছরও অনলাইনেই বসছে বিভিন্ন কোরবানির হাট। এখন শুধু গরু নয়, অনলাইনে মিলছে কসাইও। কোরবানীর পশু বিক্রির এসব ওয়েবসাইটে গেলে দেখা যাবে কোরবানি উপলক্ষে বিক্রির অপেক্ষায় থাকা বেশ কিছু গরুর ছবি, কোড নম্বর, দাম এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর ভিডিও। হাটে বিক্রির অপেক্ষায় থাকা কোরবানির গরুর দাম ৩৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে। দাম ও সাইজ দেখে কেউ যদি কোনো পশু পছন্দ করেন তবে দিয়ে দিতে পারেন অনলাইনে বুকিং। এর পাশাপাশি ব্র্যাক ব্যাংক ও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ই-ক্যাশ, বিকাশ কিংবা ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে পছন্দের পশু কিনতে পারবেন ক্রেতারা। ইচ্ছে করলে দেশের বাইরে থেকেও কেউ অর্ডার দিয়ে করতে পারবেন এই কেনাকাটা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিষ্ঠিত কিছু কেনাবেচার ওয়েব সাইটের পাশাাপাশি ফেসবুকেও বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজ খুলে গরু-ছাগল কেনা বেচা হচ্ছে। অনলাইনের পরিসরে পরিচিত নাম বেঙ্গল মিট। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো প্রতিষ্ঠানটি তাদের অনলাইন হাট চালু করেছে। তাদের সাইটে বিভিন্ন জাত ও আকারের গরুর ছবিসহ দাম উল্লেখ করা আছে। ক্রেতারা কুরবানি ডট বেঙ্গলমিট ডট কম ঠিকানায় কোরবানির পশুর অর্ডার দিতে পারবেন। বিক্রির পর পশু ক্রেতাদের বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান বলেন, পশুর সহজলভ্যতার ওপর ৮ আগস্ট পর্যন্ত অর্ডার নেওয়া হবে। তাঁদের সাইটে দেড় হাজার গরু বিক্রির জন্য তোলা হয়েছে। এর মধ্যেই অর্ধেকের বেশি বিক্রি হয়ে গেছে। অনলাইনে কোরবানির পশু কেনার বিষয়ে ক্রেতাদের আগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চলতি বছর যে রকম সাড়া পাচ্ছি, তাতে গত বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি গরু বিক্রি হবে। মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং তা বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার বিশেষ সেবাও রয়েছে তাঁদের। তবে এটি শুধু রাজধানীর জন্য।

অনলাইন বেচাকেনার পোর্টাল বিক্রয় ডটকমে পশুর বেচাকেনা এখন জমজমাট। এখানে মিলছে ফ্রিজিয়ান জাতের গরু থেকে দেশি ষাঁড় ও বকনা গরু। দাম ৪৫ হাজার থেকে শুরু করে চার লাখ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া ছাগল পাওয়া যাচ্ছে ১৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকার মধ্যে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বিপণন কর্মকর্তা ঈশিতা শারমিন জানান, ২০১৭ সালে এই পোর্টাল থেকে পশু বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৫৪৪টি। পরের বছর তা ২ হাজার ২৯৩টিতে পৌঁছায়। আর চলতি বছর এখন পর্যন্ত বিক্রি হওয়া পশুর সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার ছুঁয়েছে। ঈশিতা শারমিন আরও বলেন, গত বছর বিক্রয় ডটকমে মেম্বারশিপ সার্ভিস নিবন্ধনের মাধ্যমে আমরা ৭০ জন খামারির পশু বিক্রি করেছি। এ বছর খামারির সংখ্যা এক শ ছাড়াবে।

আজকের ডিল ডটকমে মাংস মাপার ডিজিটাল যন্ত্র, ছুরি, চাপাতিসহ কোরবানি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে ‘কাটাকুটির মেলা।

ওয়েব সাইটভিত্তিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করেও প্রচারণা চলছে কোরবানীর পশু বিক্রির। বিশেষ করে ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজ তৈরি করে বিক্রি চলছে গরু-ছাগল। এর মধ্যে জনপ্রিয় একটা গ্রুপ হচ্ছে ‘গরু ছাগলের বিরাট হাট’। এই গ্রুপের সদস্যসংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি। আছে বিডি ক্যাটেল শো নামের আরেকটি গ্রুপ। চার বছর আগে পেশাদার কসাই দিয়ে কোরবানির পশুর মাংস তৈরির জন্য ‘কসাই সাপ্লাই’ নামের একটা ফেসবুক পেজ খুলেছিলেন সোলায়মান হোসেন নামের এক অটোমোবাইল ব্যবসায়ী। এ মুহূর্তে গ্রুপটির সদস্য দেড় শর বেশি পেশাদার কসাই। সোলায়মান জানান, গত বছর তাঁর গ্রুপের সদস্যরা রাজধানী ৯৭টি জায়গায় তিনশ’র বেশি পশু জবাই করেছেন। এ বছর সেই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে তাঁর ধারণা।

অনলাইনে কোরবানির কেনাকাটার বিষয়ে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহায়েদ তমাল বলেন, অনলাইনে কোরবানির পশুর হাট বড় হচ্ছে। তবে গরুই বেশি। তিনি জানান, এখনও ডিজিটাল হাট সেভাবে জমে ওঠেনি। ঈদের একদিন বা দুই দিন আগে একটা সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা যাবে। তিনি বলেন, অনলাইনের হাটের অনেক সুবিধা। ওজন, রং দেখে অনেক গরু থেকে পছন্দেরটা বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকছে। বয়স্কদের পক্ষে ভিড় ঠেলে হাটে যাওয়া সম্ভব নয়। ফলে এই হাট গ্রাহকদের ‘কমফোর্ট’ দিয়েছে। তমাল বলেন, দেশের বাইরে থেকে প্রচুর গরুর ফরমায়েশ আসছে। যারা ঈদে দেশে আসতে পারেন না কিন্তু কোরবানি করতে চান, তারা অনলাইন থেকে গরু কিনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর হোম ডেলিভারি দেওয়ায় অনেকেই এই সুযোগটা নিয়ে থাকে।



 

Show all comments
  • Most .Sonia Khatun ১৪ জুলাই, ২০২১, ৮:৪২ এএম says : 0
    wants to know Poshu bikri r details
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ