Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আনন্দ স্কুলে বেদনার অশ্রু

প্রকাশের সময় : ৩০ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তানোর (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা : রাজশাহীর তানোরে ‘আনন্দ স্কুল’ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তানোর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, আনন্দ স্কুল প্রকল্পের সমন্বয়কারি (টিসি) ও শিক্ষকরা যোগসাজশ করে ভূয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা মিলেমিশে লোপাট করছে। ফলে সরকারি মাল দরিয়া মে ঢাল নীতিতে চলছে এসব আনন্দ স্কুল। সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৪ সালে তানোরের বিভিন্ন এলাকায় ১১৭টি আনন্দ স্কুল স্থাপন করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগে ৮টি স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয় এখন ১০৯টি আনন্দ স্কুলের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ের ঝরে পড়া শিক্ষা বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের প্রামথিক শিক্ষা প্রদানের জন্য এসব স্কুল স্থাপন করা হয়েছে। সরেজমিন আনন্দ স্কুলগুলো পরিদর্শন ও তদন্ত করলেই এসব অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তানোরের বিভিন্ন এলাকায় প্রাথমিক স্তরে মাত্র ৫১ জন ঝরে পড়া শিক্ষার্থী রয়েছে। অথচ ৫১ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ১০৯টি আনন্দ স্কুল তাদের কার্যক্রম চলমান রেখেছে। এসব ১০৯টি আনন্দ স্কুলে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেখানো হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার, তবে বাস্তবে এর অর্ধেক শিক্ষার্থীই নাই। অধিকাংশক্ষেত্রে এসব স্কুলে প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী না থাকলেও খাতা-কলমে ভূয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, সমন্বয়কারি ও শিক্ষকরা যোগসাজশ বেতন-ভাতার টাকা উত্তোলন করছেন। এছাড়াও ভূয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে তাদের মধ্যে বিতরণের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ লোপাট করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি-বর্গ ও সচেতন মহলের মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি ৭৪টি আনন্দ স্কুলের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর ১৬৫৪ জন শিক্ষার্থীকে মাথাপিছু ৪৮০ টাকা করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সিংহভাগ শিক্ষার্থীরই কোনো হদিস নাই। গত ২৮ জানুয়ারি সরেজমিন তালন্দ ইউপির মিরাপাড়া গ্রামের আনন্দ স্কুলে গিয়ে মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থীকে খেলা করতে দেখা যায়। কথা হয় স্কুলের শিক্ষক নাদিরার সঙ্গে তিনি বলেন, কমবেশি তানোরের সব স্কুলেরই একই অবস্থা বিরাজ করছে। কালনা গ্রামের আনন্দ স্কুলের শিক্ষক মনোয়ারা বলেন, তাদের গ্রামে ঝরে পড়া শিশু শিক্ষার্থীর সংখ্যা নগন্য। তিনি বলেন, বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ ও টাকা পাওয়ার লোভে বিভিন্ন এনজিও এবং স্কুলের শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হয়ে এসব পাবার পরেই আর স্কুলে আসে না। এব্যাপারে তানোর আনন্দ স্কুল পরিচালনা পর্ষদের ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর (টিসি) আকতারুজ্জামান বলেন, তানোরে ১০৯টি স্কুলে তাদের প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন এনজিও স্কুলের শিক্ষার্থীরা এখানে ভর্তি হয়ে বিনামূল্যে উপকরণ ও টাকা পাওয়ার পরে আর নিয়মিত উপস্থিত হয় না। এব্যাপারে তানোরের তালন্দ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান হান্নান বলেন, তারা কোনো প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে পান থেকে চুন খসলেই তাদের সবাই ঘিরে ধরেন। অথচ তার এলাকায় আনন্দ স্কুলের নামে যেভাবে অর্থ হরিলুটের মচ্ছব চলছে সেটা যেনো দেখার কেউ নাই। তিনি এ বিষয়ে সরেজমিন তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আনন্দ স্কুলে বেদনার অশ্রু

৩০ জানুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ