Inqilab Logo

শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শোকাবহ আগস্ট ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আর কে চৌধুরী | প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে সর্বকালের সেরা বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হন। এবার স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকী পালন করবে জাতি। একাত্তরের পরাজিত শক্তির সুগভীর ষড়যন্ত্রে প্রাণ হারাতে হয় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতিকে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে প্রকারান্তরে খুনিচক্র বাঙালি জাতির আÍাকে হত্যা করেছে। মীরজাফরের ষড়যন্ত্রে নবাব সিরাজউদ্দৌলার হত্যাকাÐের পর ১৫ আগস্ট ইতিহাসের একটি মর্মান্তিক ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। এ ঘটনার মাধ্যমে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি জাতির ঘাড়ে চেপে বসে।

বঙ্গবন্ধু বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম মহানায়ক। সেরা মুক্তি সংগ্রামী, সেরা রাষ্ট্রনায়ক। জননন্দিত নেতা হিসেবে তার তুলনা ছিলেন তিনি নিজেই। দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা ও দায়বোধ তাকে মহীরূহে পরিণত করেছিল। ব্যক্তি শেখ মুজিব হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু। বাঙালি জাতি, বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অস্তিত্বের শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে প্রকারান্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকেই হত্যা করতে চেয়েছিল। ১৫ আগস্টের ঘটনা জাতীয় রাজনীতিতে অসাংবিধানিক পন্থায় ক্ষমতা পরিবর্তনের যে কালো অধ্যায়ের সূচনা করে তার পরিণতিতে বারবার বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে যে সা¤প্রদায়িকতা ও দ্বিজাতিতত্তে¡র বিভেদ নীতিকে বাংলাদেশের মানুষ কবর দিয়েছিল, তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়াস চলে ১৫ আগস্টের পর থেকে। ৪৪তম শাহাদাতবার্ষিকীতে জাতির পিতার অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা ও অভিবাদন।

দুই.

দশ বছর আগে আগস্ট মাসের ২১তম দিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের হত্যার সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র হিসেবে যে এ হামলা চালানো হয় তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। কিন্তু গ্রেনেড হামলায় অলৌকিকভাবে প্রাণে রক্ষা পান শেখ হাসিনা। দলের নেতাকর্মীরা মানবঢাল রচনা করে গ্রেনেড হামলা থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে যেভাবে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন তা দৃষ্টান্ত হয়েই থাকবে। গ্রেনেড হামলায় দলের সিনিয়র নেত্রী সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভী রহমানসহ ২৪ জন প্রাণ হারান এবং আহত হন শতাধিক।

হত্যা ও ষড়যন্ত্রের যে রাজনীতি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় মদদ জুগিয়েছে, তার শিকড় উপড়ে ফেলাও দেশের সব গণতন্ত্রপ্রেমী মানুষের কর্তব্য বলে বিবেচিত হওয়া উচিত। আরেকটি ২১ আগস্টের উদ্ভব যাতে কোনো দিন না হয়, তা নিশ্চিত করতেই হত্যা ও ষড়যন্ত্রের হোতাদের চিহ্নিত করা এবং তাদের শিকড় সমাজ ও দেশ থেকে উচ্ছেদ করা আজ সময়েরই দাবি।

তিন.

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় প্রাণে বাচাঁসহ নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও বিপদসংকুল পথ পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। নানা সঙ্কটময় পরিস্থিতি ও বিরোধী দলের উত্তাল আন্দোলনের মাঝেও দক্ষ হাতে সরকার পরিচালনা করছেন। শেখ হাসিনা নিজেকে শুধু দক্ষ রাজনৈতিক হিসেবেই গড়ে তোলেননি, আওয়ামী লীগের সরকার পরিচালনাতেও তিনি যথেষ্ট বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। তার দূরদর্শী পরিকল্পনায় দেশের বিদ্যুৎ সঙ্কট সিংহভাগই কেটে গেছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার কৃতিত্ব তিনি দেখিয়েছেন। তার যোগ্য নেতৃত্বে কৃষি খাতের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। দারিদ্র্যবিমোচনে শেখ হাসিনা সরকার চ্যালেঞ্জিং ভ‚মিকা পালন করেছে। বর্তমান সরকার দেশের ইপ্সিত প্রবৃদ্ধির ভিত্তি রচনা করতে সক্ষম হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রাপ্তির হারও কয়েক গুণ এগিয়ে নিয়েছে। শিশুমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১০ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘ পুরস্কার পেয়েছে। শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও বিচক্ষণ পরিকল্পনায় বর্তমান সরকারের আমলে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থায় অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। শোকের মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সৈনিক ও একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি শেখ হাসিনার সফলতা কামনা করি।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


আরও
আরও পড়ুন