Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

৬০ ও ৬১ নম্বর ওয়ার্ডে এখনও পড়ে আছে বর্জ্য

ঈদের দিনের সব অপসারণের দাবি দুই মেয়রের

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

কোরবানির ঈদের দিন রাজধানীতে যে কোরবানির পশুর বর্জ্য জমেছে, তার সবই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র। গত মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের নগর ভবনে আলাদা সংবাদ সম্মেলন থেকে বর্জ্য ব্যবস্থানার সার্বিক তথ্য তারা তুলে ধরেন। তবে উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রের তথ্য সঠিক হলেও দক্ষিণের মেয়রের বক্তব্যের সাথে বাস্তবতার মিল ছিল না। কারণ গতকাল রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখার সময়ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬০ ও ৬১ নং ওয়ার্ডের বহু জায়গার বর্জ্য অপসারণ করা হয়নি। যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সার্ভিস লেনের পুরোটায় কোরবানির বর্জ্য পড়ে ছিল। শনিরআখড়া বাজার থেকে বর্ণমালা স্কুল রোড পর্যন্ত রাস্তার উপর স্তূপাকারে বর্জ্য রাখা ছিল। দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে চলা তো দূরের কথা এলাকায় বসবাস করা দায় বলে জানিয়েছেন এলাকার কয়েকজন।

দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঈদের প্রথম দিন সোমবার বিকাল ৩টা থেকে মঙ্গলবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৭টি পশুর হাটের বর্জ্য এবং কোরবানির পশুর বর্জ্য মিলিয়ে প্রায় ১৬ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। আর উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার বিকাল ৩টার আগে তার এলাকায় ১৩ হাজার ২৩৪ টন বর্জ্য ল্যান্ডফিলে ফেলা হয়েছে।

মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে মেয়র খোকন বলেন, সবশেষ তথ্য অনুযায়ী আমাদের সব ওয়ার্ডের প্রায় শতভাগ বর্জ্য আমরা অপসারণ করতে পেরেছি। এটা আমাদের সূত্র নিশ্চিত করেছে।অথচ তখনও ৬০ ও ৬১ নং ওয়ার্ডের কোনো বর্জ্যই সরানো হয়নি। এমনকি শনিরআখড়া কোরবানির পশুর হাটেরও কোনো বর্জ্য অপসারণ করা হয়নি। মঙ্গলবার দক্ষিণ সিটি মেয়রের বক্তব্য যখন টেলিভিশনে প্রচার করা হচ্ছিল তখন এই দুই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে নানা মন্তব্য করতে থাকেন।

গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে ৬১ নং ওয়ার্ডের বর্জ্য অপসারণের কাজ শুরু হয়। এ সময় ৬১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. জুম্মন মিয়া উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, বিকালের মধ্যেই সব বর্জ্য অপসারণ করা হবে। কিন্তু বাস্তবে তাও হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তড়িঘড়ি করে এবার বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। বেশিরভাগ স্থানেই ময়লার অংশ থেকেই গেছে। সেগুলো থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অথচ গতবারে গাড়ির পাশাপাশি পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কোদাল দিয়ে বর্জ্য পরিষ্কার করায় এমনটা হয়নি।

এদিকে, ধনিয়া বর্ণমালা স্কুল রোডের বর্জ্য অপসারণ করা হলেও শনিরআখড়া বাজার থেকে আরএস টাওয়ারের সামনের রাস্তার বর্জ্য রাতেও অপসারণ করা হয়নি। আরএস টাওয়ারের গ্যারেজের ম্যানেজার শুক্কুর আলী টেলিফোনে জানান, আরএস টাওয়ারের সামনের রাস্তায় কোরবানির বর্জ্য আগের মতো পড়ে আছে। সেগুলো থেকে দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে বর্জ্য ও আর ময়লা মিলে একাকার হয়ে রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে পড়েছে। মানুষ রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারছে না। পঁচা দুর্গন্ধে এলাকায় বসবাস করাই দায় হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর আমি ওয়্যারলেস হাতে থাকা সিটি করপোরেশনের একজন কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম বর্জ্যগুলো কখন সরানো হবে। তিনি উত্তরে বললেন, গাড়ি নষ্ট। গাড়ি আসলে তারপর এগুলো সরানো হবে।

এদিকে, জুরাইন এলাকায় গতকাল বিকালে বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে যেনোতোনাভাবে। ময়লা ও বর্জ্যরে অংশ রাস্তার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কারণে দুর্গন্ধে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছবিটি শেয়ার দিয়েছেন জুরাইন এলাকার অধিবাসী মিজানুর রহমান। কিছুক্ষণের মধ্যেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
বুধবার ফেসবুক গ্রæপ ‘ভয়েস অফ রাইটস’- এ তিনি লিখেছেন, কেমন করে বর্জ্য অপসারণ হলো আপনারাই দেখুন। ছবিতে দুর্গন্ধ পাবেন না, বাস্তবে দুর্গন্ধে টেকা দায়।

তিনি লিখেছেন, বাটপারির আরেক নাম সিটি কর্পোরেশনের কোরবানির বর্জ্য অপসারণের হট লাইন। কয়েকজন স্থানীয় মানুষকে হট নম্বর দিয়ে এসেছি অভিযোগ করার জন্য, কর্পোরেশন ওইসব মানুষের কাছে আমাকে বাটপার বানালো নিশ্চয়। সেখানে রাফসান হোসাইন মন্তব্য করেছেন, গতকাল বাগানবাড়ির মোড়ে গিয়ে তো অবাক! রাস্তা অর্ধেকেও বেশি ময়লা দিয়ে বন্ধ! একটার বেশি যানবাহন একসাথে পার হতে পারে না! এক অংশ বন্ধ থাকে আরেক অংশ যায়। ওই অংশের যাওয়া শেষ হলে বন্ধ থাকা অংশের যানবাহন যায়। ভয়ানক অবস্থা! তবে আপনাদের এলাকার সবচেয়ে বড় সমস্যা রাস্তার সমস্যাটা দূর হয়েছে দেখে খুবই ভালো লেগেছে। এতো উঁচু আর সুন্দর রাস্তা করেছে দেখেই অবাক হয়েছি! আশাকরি আপনাদের এই সমস্যারও সমাধান হবে। মুসাররাত নাজ লিখেছেন, আমাদের তো কোরবানির দিনেই বিকেলের মধ্যে সব পরিষ্কার হয়ে গেছে। রাইসুল রাসেল লিখেছেন, সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দিতে চুলকায় তাইলে বর্জ্য নিজেরাই পরিষ্কার করে না কেন মানুষ? মানার হাফিজ লিখেছেন, আর সাধারণ মানুষের কোন দায়িত্ব নেই। মন চাইলো। রাস্তাতেই ময়লা ফেললাম। রাস্তা তো আর আমার বাপের না। ফেললে কি যায় আসে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ