Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বাঘবদি মিসির আলি

আ লী এ র শা দ | প্রকাশের সময় : ১৬ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম

(পূর্বে প্র্রকাশিতের পর)
উপন্যাসের কাহিনী অনুসারে মিসির আলি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক। তিনি মানুষের মন, আচরণ, স্বপ্ন এবং নানাবিধ রহস্যময় ঘটনা নিয়ে অসীম আগ্রহ রাখেন। কিছুটা আত্মভোলা টাইপের লোক। তাঁর হাসি খুব সুন্দর, শিশুসুলভ। জীবন সম্পর্কে বেশ উদাসীন। ফতে মিয়া যখন বলেন, স্যার সকালে ব্যায়াম করলে শরীর ভালো থাকে। মিসির আলি তার জবাবে বলেন,
কোনো দরকার নেই ফতে মিয়া। হাঁটাহঁটি ব্যাপারটা আমার পছন্দ না। দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার জন্যে মানুষ নানান কষ্টকর পদ্ধতির ভিতর দিয়ে যায়-ব্যায়াম করে, হাঁটাহঁটি করে। আমার দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার কোনো বাসনা নেই।
আয় রোজগার তেমন নেই, বদরুল যখন জানতে চাইলেন কি কাজ করেন,?
মিসির আলি বললেন, কিছু করি না।
রিটায়ারও করি নি। মাস্টারি করতাম। চাকরি চলে গিয়েছিল।
বলেন কি আপনার চলে কীভাবে?
কয়েকটা বই লিখেছিলাম-সেখান থেকে রয়েলটি পাই। এতে কষ্টটষ্ট করে চলে যায়।
মিসির আলি একজন ধূমপায়ী। তিনি ফিফটি ফাইভ› ব্র্যান্ডের সিগারেট খান। তবে তিনি প্রায়ই সিগারেট ছেড়ে দেবার চেষ্টা করেন কিন্তু পারেন না। উপন্যাসটিতে লেখক সিগারেট টানার ভঙ্গি এবং চারপাশের পরিবেশকে এমনভাবে প্রকাশ করেছেন যে, বই পড়তে পড়তে একজন ধুমপায়ী পাঠকের মনে হবে এখন একটা সিগারেট টানতে পারলে এর চেয়ে তৃপ্তিকর আর কিছু হতে পারে না।
মিসির আলি সিগারেট ধরালেন, ফতে ঠিকই বলেছে মাঝ নদীতে সিগারেট ধরাবার আনন্দই আলাদা।
মিসির আলির শরীর বেশ রোগাটে আর রোগাক্রান্ত। নানারকম রোগে তাঁর শরীর জর্জরিত। প্রায়ই অসম্ভব রোগাক্রান্ত হয়ে তাকে হাসপাতালে থাকতে হয় এবং শেষ পর্যন্ত তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন।
উপন্যাসে দেখতে পাই, অসুস্থতার সময় মরণ নিয়ে তাঁর ভাবনা বেশ চমৎকার,
ক্লিনিকে তাঁর বিছানাটা থাকবে জানালার কাছে। তিনি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকতে পারবেন। ডাক্তার এবং নার্সরা মিলে তাঁর জীবন রক্ষার জন্যে যখন ছোটাছুটি করতে থাকবেন, তিনি তখন তাকিয়ে থাকবেন আকাশের দিকে।
মিসির আলি চরিত্রে হুমায়ুুন আহমেদ, পরস্পর বিপরীতধর্মী দুটি বৈশিষ্ট্য ‹যুক্তি› এবং ‹আবেগ›কে স্থান দিয়েছেন।
বর্তমান সময়ে শিক্ষার নামে শিশুদের মনের উপর যে চাপ প্রয়োগ করা হয় তা দেখে মিসির আলি ভাবেন,
বৃত্তি পরীক্ষা উঠিয়ে দিলে কেমন হয়ঃ পরীক্ষার ব্যাপারটাই কি উঠিয়ে দেওয়া যায় না। পরীক্ষা নামের ব্যাপারগুলি রেখে অতি অল্পবয়সেই শিশুদের মাথায় একটা জিনিস আমরা ঢুকিয়ে দিচ্ছি–তোমাদের মধ্যে কেউ ভালো, কেউ খারাপ।
মিসির আলি যুক্তিনির্ভর একজন মানুষ বলেই অনেক সাহসী। ভূতাশ্রিত স্থানেও রাত কাটাতে তিনি পিছপা হোন না, বরং এজন্য থাকেন যে, তাতে তিনি রহস্যময়তার ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে পারবেন। তিনি প্রকৃতির বিষ্ময়ে বিষ্মিত হন না। প্রচন্ড যুক্তিবাদী, কিন্তু উপন্যাসের এক স্থানে তাকে বলতে শুনি,
তোমার জানা উচিত সমস্যা সমাধান আমার পেশা না। সমস্যার সমাধান আমি সেইভাবে করতেও পারি না। জগতের বড় বড় রহস্যের সমাধান বেশির ভাগ থাকে অমীমাংসিত। প্রকৃতি রহস্য পছন্দ করে। রহস্যের মীমাংসা তেমন পছন্দ করে না।
এই আশ্চর্য দ্বিধাদ্বন্দ্ব আর বৈপরীত্য মিসির আলি।
সমাজের আর দশটা মানুষের চেয়ে তিনি আলাদা, একাকী, বুদ্ধিমান, মেধাবী, যুক্তিবাদী কিন্তু সমাজবিচ্যুত।
উপন্যাসটিতে লেখক ছোট-বড় প্রত্যেকটি চরিত্রকে যতে্নর সাথে উপস্থাপন করেছেন। মিসির আলি গল্পের প্রধান চরিত্র হলেও অন্যান্য চরিত্রগুলোকে লেখক ম্লান হতে দেননি। কাজের ছেলে ইয়াসিন, বাড়িওয়ালা বদরুল, বদরুলের স্ত্রী তসলিমা খানম, মেয়ে লুনা, ভাগ্নে ফতে মিয়া, প্রতিমা, ফাইজু মিয়া প্রত্যেকেই নিজ নিজ চরিত্রে উজ্জ্বল। বড় চরিত্রের সাথে ছোট, ছোট চরিত্রকে সমানতালে তুলে ধরতে পারাই একজন গুণী লেখকের মস্তবড় গুণ।
ফতে মিয়া চরিত্রটি মিসির আলির মতোই রহস্যময়। ফতে মিয়ার কাছে মিসির আলি সময় জানতে চান।
এখন কটা বাজে?
এগারোটা পাঁচ।
তোমার হাতে ঘড়ি আছে?
জি না।
আমার এখানে আসার আগে কি ঘড়ি দেখে এসেছ?
জি না।
তা হলে কী করে বলছ-এগারোটা পাঁচ বাজে?
মিসির আলী ফতে মিয়ার এই ক্ষমতা দেখে অবাক হননি, কারণ মিসির আলী যুক্তিবাদী মানুষ। এই বলতে পারার পেছনে নিশ্চয় কোনো কারণ আছে, মিসির আলিকে তা জানতে হবে।
ফতে মিয়া সবাইকে শাস্তি দিতে চায়, বিভিন্নরকম শাস্তি। মানুষকে শাস্তি দিয়ে সে মজা পায়। লেখক তা এভাবে বর্ণনা করেছেন,
ফতের ইচ্ছা করে মিসির আলিকেও শাস্তি দিতে। জ্ঞানী লোকের জন্য জ্ঞানী শাস্তি। মনে কষ্ট দেওয়া শাস্তি।
কখনো বা ভাবেন,
ফজলু মিয়াকেও শাস্তি দিতে হবে। আজ সে চোখের ইশারায় তার মেয়েকে সরে যেতে বলল’
মামা বদরুল, মামী তসলিমা এমনি কি ছয় বছরের লুনাকেও শাস্তি দিতে চায় ফতে মিয়া। মিসির আলি বুঝতে পারেন ফতে মিয়া মানসিক রোগী, গল্প এগিয়ে চলে রহস্যময়তার ভেতর দিয়ে।
হুমায়ুন আহমদ বিশাল এক লাইব্রেরীর নাম, তাকে জানতে হলে পড়তে হবে তার লেখা বিভিন্ন বই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিসির আলি

১৬ আগস্ট, ২০১৯
১৯ জুলাই, ২০১৯
আরও পড়ুন