Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার সৈকত

সাগরে বিলীন হচ্ছে ঝাউবাগান

শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য ও উপক‚লের সবুজ বেষ্টনি হিসবে পরিচিত ঝাউবাগান সাগরের করাল গ্রাসে এখন তচনচ হয়ে পড়েছে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য যেন বিলীন হয়ে যাচ্ছে সাগরে। সাগরের ঢেউয়ের তুড়ে হাজার হাজার ঝাউগাছ বিলীন হচ্ছে। এতে নষ্ট হচ্ছে সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য ও আকর্ষণ। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, গত এক মাসে প্রবল বর্ষণে সাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত সৈকতের অন্তত দশ হাজার ঝাউগাছ সমুদ্রে তলিয়ে গেছে। এভাবে গত সাড়ে ৪ দশকে ভাঙন ও নিধনের কবলে পড়েছে ৮ লাখেরও বেশি ঝাউগাছ।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার সদর রেঞ্জের নাজিরারটেক থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত ১৯৬১-৬২ সালে ১২ হেক্টর বালিয়াড়িতে প্রথমে সৃজন করা হয় ঝাউ বাগান। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কক্সবাজার সফরে এলে ঝাউবাগানের প্রসার ঘটানো নির্দেশ দিয়েছেন। তখন থেকেই এ ঝাউ বাগান সমুদ্র পাড়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপক‚লবাসীদের রক্ষা করে আসছে। তবে ১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড়ে অর্ধেকের বেশি বাগান বিলীন হয়ে যায়।
এদিকে গত ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ঝাউবন রক্ষা ও আরও বাগান সৃজনের নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরপরই সৈকতের ডায়বেটিস পয়েন্ট থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত এক হাজার ৪শ’ মিটার স্থানে জিওটিউব বসিয়ে ঝাউগাছ রক্ষায় উদ্যোগ নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে অপরিকল্পিত ও নিন্মমানের কাজ হওয়ায় ঢেউয়ের ধাক্কায় জিওটিউব বাঁধও ভেঙে পড়েছে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-জ্বলোচ্ছ্বাসে সবুজ বেষ্টনী বিশাল ঝাউবাগান হারিয়ে যাচ্ছে। জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তাছাড়া দুর্বৃত্তরাও প্রতিনিয়ত বাগানের গাছ কেটে নিচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে ঝাউবাগান দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ বসতি। সরকারি টাকা ভাগভাটোয়ারার জন্য তড়িগড়ি করে জিওটিউব বসিয়ে ঝাউবাগান রক্ষা সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার পরিকল্পিত, টেকসই পর্যটক বান্ধব শহর রক্ষা বাঁধ ও সবুজ বেষ্টনী তৈরি।
পাউবো কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা বলেন, বালিয়াড়ির ভাঙন এবং ঝাউবাগান বিলীন ঠেকাতে সৈকতের ডায়াবেটিক পয়েন্ট থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত ১ হাজার ৪০০ মিটার লম্বা জিও টিউব স্থাপনের জন্য প্রায় ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কাজও প্রায় শেষ করা হয়েছে। কিন্তু জোয়ারের ধাক্কায় জিওটিউবের কয়েকটি অংশ ফুটো হয়ে বিলীন হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, এ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান।
বন বিভাগ সূত্র মতে ১৯৯১-৯২ সালে ১২ হেক্টর বালিয়াড়িতে নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার চারা রোপণ করা হয়। ১৯৯৬-৯৭ সালে ১১৫ হেক্টর বালিয়াড়িতে রোপণ করা হয় ৩ লক্ষাধিক ঝাউ চারা। ১৯৯৭-৯৮ সালে ৪০ হেক্টরে লক্ষাধিক চারা, ১৯৯৮-৯৯ সালে ৫ হেক্টরে সাড়ে ১২ হাজার চারা, ২০০২-০৩ সালে ৮ হেক্টরে ২০ হাজার চারা, ২০০৩-০৪ সালে ৮৭ হেক্টরে ২ লাখ ১৭ হাজার চারা ও ২০১০-১১ সালে ৫ হেক্টরে সাড়ে ১২ হাজার চারা রোপণ করা হয়।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, যেখানে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে অবস্থানগত কারণে হয়তো সেসবস্থানে নতুন চারা লাগানো যাবে না। তবে আগামী ৩ বছরে ১৪০ হেক্টর এলাকাজুড়ে খালি জায়গায় আরও ১ লাখ চারা রোপণ করা হবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার বলেন, সৈকতের ঝাউবাগান রক্ষা এবং সেখানে আরও বনায়ন সৃজনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এখন ঝাউগাছ রক্ষায় পাউবোর জিওটিউব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন ভাঙন ও জিওটিওব কাজ পরিদর্শন করেছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ