Inqilab Logo

রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্কুল ফিডিং কর্মসূচি প্রসঙ্গে

| প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০২ এএম

দরিদ্র পরিবারের শিশুদের বিদ্যালয়ে এনরোলমেন্ট এবং ঝরে পড়া ঠেকাতে কিছু কিছু এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল অনেক আগেই। বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি(ডাব্লিউএফপি) সহযোগিতায় পরিচালিত এই কর্মসূচির সাফল্যও আশাব্যঞ্জক। বর্তমানে দেশের ১০৪টি উপজেলায় এই কর্মসূচি চালু রয়েছে। তবে প্রাথমিক স্তরে প্রত্যাশিত শতভাগ এনরোলমেন্ট এবং ঝরে পড়া রোধ করা এখনো সম্ভব হচ্ছে না। পারিবারিক দারিদ্র্যই এর মূল কারণ। এই প্রেক্ষাপটে সারাদেশে প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক স্তরের ৩-১২ বছরের শিশুদের মধ্যে অবস্থা ভেদে উন্নত বিস্কুট, রান্না করা খাবার পরিবেশন করার নীতিমালা গ্রহণ করেছে সরকার। গত সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রীপরিষদের সভায় জাতীয় স্কুল মিল নীতিমালা ২০১৯ এর খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠকে ইতিমধ্যে পরিচালিত স্কুল ফিডিং কর্মসূচিভক্ত এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি, উপস্থিতির হার বৃদ্ধির পাশাপাশি শিশুদের পুষ্টির চাহিদা পুরণ এবং স্বাস্থ্যগত তথ্য উপাত্তের মূল্যায়ণ করা হয়। বিস্কুট দেয়ার ফলে শিশুদের উপস্থিতির হার ৬ শতাংশ বাড়ে এবং রান্না করা খাবার দেয়ার ফলে এ হার ১১ শতাংশ বলে জানা যায়। কর্মসূচির আওতাভুক্ত শিশুদের অপুষ্টি ও রক্তস্বল্পতার মাত্রা উল্লেখযোগ্যহারে কমেছে বলে রিপোর্টে জানা গেছে। শিশুদের দৈনিক পুষ্টি ও ক্যালরি চাহিদার প্রায় অর্ধেক স্কুল মিল থেকে নিশ্চিত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার।

প্রাথমিক ও প্রাক প্রাথমিক স্তরের শিশুদের জন্য স্কুল মিল নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ নি:সন্দেহে সরকারের একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। বিশেষত হাওর-বাওর ও দারিদ্রপীড়িত-অনুন্নত এলাকার শিশুদের স্কুলে যাওয়া নিশ্চিত করতে এবং শিশুদের খাদ্য চাহিদা ও অপুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রেখে খাদ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার উদ্যোগ জাতির ভবিষ্যত বিনির্মানে বিশেষ ভ’মিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। তবে ইতিমধ্যে শতাধিক উপজেলায় ১৫ হাজারের অধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু থাকলেও ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। অথচ প্রায় বিনা বেতনে বা স্বল্প খরচে পড়া ও থাকা-খাওয়ার সুযোগ থাকায় দেশের অতি দরিদ্র মুসলমান পরিবারের এবং পিতৃমাতৃহীন শিশুরা মূলত এসব ইবতেদায়ি, ক্বওমি মাদরাসায় ভর্তি হয়ে থাকে। বেসরকারী উদ্যোগে গড়ে ওঠা হাজার হাজার ইবতেদায়ি ও ক্বওমি মাদরাসাগুলো ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি স্বাক্ষরতা ও সাধারণ শিক্ষায় অসামান্য অবদান রাখছে। ঝরে পড়া রোধ ও পুষ্টি চাহিদার পুরণের লক্ষ্যে গৃহিত স্কুল মিল কর্মসূচিতে মাদরাসাগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবী অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই। মাদরাসার শিশুদের বেশিরভাগ অভাবি ও ভাগ্যবিড়ম্বিত পরিবারের সন্তান। এদের শিক্ষা ও পুষ্টির দিকে নজর দেয়া রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব। আড়তদার ও টেনারি মালিকদের সিন্ডিকেটেড কারসাজির কারণে এবার কোনবানির পশুর চামড়ার অস্বাভাবিক দর পতনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের কওমি মাদরাসা ও এতিম-হতদরিদ্র পরিবারের শিশুরা। স্কুলমিল কর্মসূচির পাশাপাশি মাদরাসা শিশুদের জন্য খাদ্য কর্মসূচি গ্রহণ এখন সময়ের দাবী।

মুলত স্বাধীনতার পর থেকেই দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্যাকেটজাত খাদ্য(বিস্কুট, গুড়োদুধ) ও শিক্ষাসামগ্রী নিয়ে এগিয়ে এসেছিল ইউনেস্কো ও বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি। সেটি ছিল যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের জরুরী প্রয়োজনের নিরীখে। আজকের বাস্তবতা ভিন্ন। দেশের প্রতিটি শিশুকে স্কুলে ভর্তি করানো এবং ন্যুনতম শিক্ষায় শিক্ষিত করা এখন সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক কর্মসূচির অংশ। টেকসই উন্নয়ন এবং একবিংশ শতকের উপযোগি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে সব শিশুর শিক্ষা, প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের সামগ্রিক বাস্তবতায় শিক্ষাব্যবস্থা নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে। প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠির কথা বিবেচনায় রেখে স্কুলমিল নীতি গ্রহণ করা হয়ে থাকলে এবং সেখানে ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোকে এই কর্মসূচির বাইরে রাখার কোনো সুযোগ নেই। সেই সাথে প্রাথমিক ও প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের স্কুলে খাবার দিতে গিয়ে তা যেন শিক্ষার চেয়ে খাবার কেন্দ্রিক তৎপরতায় বেশি মনোযোগি হয়ে না পড়ে সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। বর্তমানে পরিচালিত স্কুল ফিডিং কর্মসূচি নিয়ে বেশকিছু অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠে এসেছে। বিস্কুট ও খাদ্য সরবরাহে নিয়োজিত সরকারী কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা স্কুলের কোমলমতি শিশুদেরকে শ্রমিক হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগও আছে। সরকারের একটি মহতি ও ব্যয়বহুল কর্মসূচি যেন অনিয়ম-দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতার কারণে কিছু সংখ্যক মানুষের পকেট ভারী করার উপলক্ষ্য হয়ে না দাঁড়ায় সে দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।



 

Show all comments
  • নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ২০ আগস্ট, ২০১৯, ৯:১০ পিএম says : 0
    সরকার স্কুল গুলোতে দুপুরের খাবার দিচ্ছে, কিন্তু ইবতেদায়ী মাদ্রাসা গুলো এটা থেকে বঞ্চিত কেন? এরা কি এদেশের প্রজা নয়? নাকি মাদ্রাসার ছাত্র হওয়ার কারণে এই এতিম এবং হতদরিদ্র শিশুদের সাথে এমন আচরণ!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন