Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কোনো ক্লু উদঘাটিত হয়নি : তদন্ত কমিটির প্রধান নিয়ে তোলপাড়

প্রধানমন্ত্রীকে বহন করা বিমান অবতরণে বিলম্ব

প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বার বার রিপোর্ট প্রকাশের পরেও টনক নড়েনি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহন করা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ফা¬ইটটি  অবতরণ করতে গিয়ে গত মঙ্গলবার বিপাকে পড়ে। নিরাপত্তা সংক্রান্ত কারণে বিমানটি রানওয়ে নামতে পারেনি যথাসময়ে।  প্রায় আধা ঘণ্টা  বিমানবন্দরের আকাশে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানটিকে অপেক্ষা করতে হয়। এ কারণে গঠিত তিনটি  তদন্ত কমিটি কাজ করছে। গতকাল দফায় দফায় কমিটিগুলো পৃথক বৈঠক করেছে। বিমানের তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এছাড়া সব কয়টি গোয়েন্দা সংস্থাও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তবে বিমানবন্দরের পরিচালকের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে তদন্ত কমিটির প্রধান করায় সিভিল এভিয়েশনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তাসহ সবকিছুর দায়ভার  বিমানবন্দর পরিচালকের ও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের। কিন্তু পরিচালক জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। এমন অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে গতকাল পর্যন্ত এ ব্যাপারের কোনো ক্লু উদঘাটিত হয়নি। অন্যদিকে বহাল তবিয়তে আছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের একজন কর্মকর্তা বলেন, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অভিযুক্ত বিভাগের একজন শীর্ষ ব্যক্তিকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করায় সর্বত্র তোলপাড় চলছে। কারণ শাহজালালে বিমান ওঠানামা থেকে শুরু করে সব ধরনের কার্যক্রম মনিটরিং ও দেখভাল করার দায়িত্ব পরিচালক শাহজালালের। তার নির্দেশনা ছাড়া কোনো কাজই হয় না এখানে। বিমানবন্দর কেন্দ্রিক ২৪টি সংস্থার সব ধরনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ হয় পরিচালক শাহজালালের মাধ্যমে। সেখানে তাকে তদন্ত কমিটির প্রধান করায় পুরো তদন্ত কার্যক্রম  নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
গতকাল সকালে সিভিল এভিয়েশনের ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের কনসালটেন্ট মোস্তাক আলীর নেতৃত্বে অপর একটি তদন্ত কমিটি বিমানের হ্যাঙ্গারে গিয়ে টেকনিক্যাল হওয়া বোয়িং ৭৭৭-৩০০ এয়ারক্রাফটি সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। তারা এয়ারপোর্টের যেখানে ধাতববস্তগুলো পড়া ছিল সে স্থানটিও পরিদর্শন করেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে, কমিটি বিমানের প্রকৌশল বিভাগকে ক্রয়ের পর থেকে এই উড়োজাহাজের ইঞ্জিনের যাবতীয় ক্রুটি মেরামত, মেনটেনেন্স, স্পেয়ার পার্টস সংযোগ-বিয়োজন সংক্রান্ত ডকুমেন্ট গুলো প্রদানের জন্য চিঠি দিয়েছে। আজকের মধ্যে এই ডুকুমেন্ট তদন্ত সংস্থার কাছে প্রদান করার কথা রয়েছে। এছাড়া আগামী রোববার উড়োজাহাজটির ইঞ্জিনের বলেস্টিক ইন্সপেকশন করা হবে। ডকুমন্টে পাওয়ার পরই তারা বুঝতে পারবেন কেন ওইদিন উড়োজাহাজটি টেকনিক্যাল হয়েছিল এবং রানওয়েতে পড়ে থাকা ধাতব বস্তুগুলো কি ছিল। তবে প্রাথমিক তদন্তে তারা জানতে পেরেছেন রানওয়েতে পড়া ধাতব বস্তুগুলো উড়োজাহাজের ইঞ্জিনের হট সেকশনের প্লেটের অংশ।
বৃহস্পতিবার বিমানের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংস্থার চীফ অব টেকনিক্যালকে প্রধান করে গতকাল এই কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে বিমানের পরিচালনা পর্যদ চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল ইনামুল বারী নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, এই কমিটি ঘটনার দিন বোয়িং ৭৭৭-৩০০ এয়ারক্রাফটটি কেন টেকিনিক্যাল হয়েছিল তা তদন্ত করবে। আর উড়োজাহাজটি থেকে রানওয়েতে পড়া ধাতব বস্তুগুলো কেন পড়েছিল তাও তদন্ত করবে এই কমিটি। চেয়ারম্যান বলেন, রানওয়ে ক্লিয়ারের দায়িত্ব সিভিল এভিয়েশনের। তারা রেগুলেটরি বডি। বিমান তাদের আন্ডারে একটি এয়ারলাইন্স। রানওয়েতে কি হচ্ছে তা দেখার দায়িত্ব সিভিল এভিয়েশনের।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী ফ্লাইট অবতরণ নিয়ে বিমান বন্দর কর্তৃপক্ষের বড় ধরনের অবহেলা ছিল। রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ হিসাবে বেবিচক কোনোভাবে এর দায়-দায়িত্ব এড়াতে পারবে না। এজন্য সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। অন্যথা তদন্তে সঠিক ফল পাওয়া যাবে না। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পরিচালক শাহজালাল  গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসানের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি বিমান, সিভিল এভিয়েশন ও এটিএস বিভাগের ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাাসাবাদ করেছে। এরমধ্যে ঘটনার দিন টেকনিক্যাল হওয়া দাদ্মাম গামি বিমানের (বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর) পাইলট ক্যাপ্টেন শোয়েব আলী, একজন প্রকৌশলী, সিভিল এভিয়েশন ও এটিএস বিভাগের ১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন।
এদিকে গতকাল পরিচালক শাহজালাল গ্রুপ ক্যাপ্টেন জাকির হাসান জানান, তদন্ত চলছে, শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্পষ্ট করে কোনোকিছু বলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বিমানের পাইলট, ইঞ্জিনিয়ার, ক্রুসহ সিভিল এভিয়েশনের ১২ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আরো অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আগামীকাল নাগাদ রিপোর্ট প্রদান করা হতে পারে বলেও তিনি জানান।




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোনো ক্লু উদঘাটিত হয়নি : তদন্ত কমিটির প্রধান নিয়ে তোলপাড়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ