Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বন্ধ ব্রুনাই শ্রমবাজার

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

পূর্ব এশিয়ার তেল সমৃদ্ধ দেশ ব্রুনাইয়ের সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার ধ্বংসে একশ্রেণির দালালচক্র মরিয়া হয়ে উঠেছে। অবৈধ ভিসা ট্রেডিং বন্ধ ও দালালচক্রকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ব্রুনাই সরকার গত ৪ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের ওয়ার্ক ভিসা ইস্যু সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছে। ঢাকাস্থ ব্রুনাই দূতাবাসের সাইন বোর্ডে এ ব্যাপারে একটি নোটিশ টানানো হয়েছে।

ব্রুনাই কর্তৃপক্ষ দারুসসালামে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পার্টনারশিপের বেশ কিছু ভুঁইফোড় কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করার চিন্তা-ভাবনা করছে। কিছু দালাল ব্রুনাই থেকে দেশে ফিরে গা-ঢাকা দিয়েছে বলেও জানা গেছে। গতকাল ব্রুনাই দারুসসালামস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দেশটির ২০৩৫ সালের মেগা প্রকল্পে প্রচুর বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে।

ভ্রাতৃপ্রতিম ব্রুনাইয়ের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। দেশটিতে প্রায় চল্লিশ হাজার বাংলাদেশি কঠোর পরিশ্রম করে প্রচুর রেমিট্যান্স আয় করছে। ব্রুনাই সুলতানের আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৮ এপ্রিল তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে দেশটিতে যান। ঐ সময়ে উভয় দেশের মধ্যে একাধিক দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু দারুসসালামে প্রবাসী দালালচক্রের অনৈতিক কর্মকান্ডে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। ব্রুনাইয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মাহমুদ হোসেন সম্ভাবনাময় এ শ্রমবাজারটি ধরে রাখতে ব্যাপক উদ্যোগ নিচ্ছেন। তিনি দালালচক্রের একটি তালিকাও ইতোমধ্যে তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন। শিগগিরই চিহ্নিত এসব দালালচক্রের তালিকা দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও হাইকমিশন সূত্র জানায়।

দারুসসালামস্থ হাইকমিশনের শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল বুধবার ইনকিলাবকে বলেন, জনশক্তি রফতানির নামে অনৈতিক কর্মকান্ড রোধ এবং দারুসসালামে বসবাসকারী দালালদের অপতৎপরতা নির্মূলের লক্ষ্যে ব্রুনাই সরকার কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে। দেশটিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গঠিয়ে ওঠা পার্টনারশিপের বেশ কিছু কোম্পানির অনৈতিক কর্মকান্ডের দরুন এ শ্রমবাজারটি দুয়ার আপাতত বন্ধ হয়ে গেল। তিনি বলেন, ব্রুনাইয়ে ঐতিহাসিক তুমবারুং সেতু (৩৫ কিলোমিটার লম্বা) নির্মাণকাজ শেষের পথে। আগামী নভেম্বর মাসে দেশটির সুলতান নবনির্মিত এ সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের কথা। এ সেতুর ওপারের দ্বীপে অর্থনৈতিক জোনে ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণ খাতে প্রচুর বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

দারুসসালামস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের একটি সূত্র জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভুঁইফোড় কোম্পানির কোটার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাজ না থাকার পরও দেদারসে কর্মী যেত ব্রুনাইয়ে। ভালো বেতনে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কর্মীদের দেশটিতে নেয়া হয়েছে। সরকার ব্রুনাইয়ে কর্মী নিয়োগে অভিবাসন ব্যয় নির্ধারণ করেছে জনপ্রতি ১ লাখ ২০ হাজার ৭৮০ টাকা। অথচ কাজ না থাকার পরও গলাকাটা হারে অভিবাসন ব্যয়ে (প্রায় চার লাখ টাকায়) শত শত কর্মী ব্রুনাইয়ে নিয়ে ছেড়ে দিচ্ছে দালালরা। বিষয়টি ব্রুনাই সুলতানের নজরে এলে স্থানীয় ইমিগ্রেশন বিভাগ, শ্রম মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে সাময়িকভাবে বাংলাদেশি ওয়ার্ক ভিসা ইস্যু বন্ধ করে দেয়। ফলে বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কর্মী নিয়োগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ব্রুনাইয়ের দারুসসালামে নামে-বেনামে কোম্পানি খুলে সাব-কন্ট্রাক্টের নামে চড়া দামের ভিসায় কর্মী নিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এসব দালালচক্র। চড়া অভিবাসন ব্যয়ে ভিসা ট্রেডিংয়ের সুযোগে এয়ারপোর্ট কন্টাক্টের মাধ্যমে দফায় দফায় কর্মী নিয়ে ব্রুনাইয়ের বিভিন্ন এলাকায় গুদামের মতো অস্বাস্থ্যকর রুমে আটকে রাখে। খুঁজে খুঁজে বিভিন্ন প্রজেক্টে অস্থায়ীভাবে কয়েক জনকে কাজ দিলেও তাতে খাবারের টাকাই জোটে না। কাজ না পেয়ে প্রতারণার শিকার শত শত প্রবাসী কর্মী দারুসসালামস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে দালালচক্রের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীর ব্যবস্থা নিতে লিখিত অভিযোগ জমা দিচ্ছে।

অসহায় কর্মীদের অভিযোগের স্তূপ নিয়ে হাইকমিশন কর্তৃপক্ষকে গলদঘর্ম পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিন দালালচক্রকে ডেকে হাইকমিশনে নিয়ে প্রতারণার শিকার কর্মীদের কাজ দেয়ার জন্য জোর তাগিদ দিচ্ছে লেবার উইংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ঋণ ও ভিটেমাটি, গবাদি পশু বিক্রি করে নিরীহ কর্মীরা ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে পাড়ি জমাচ্ছে ব্রুনাইয়ে। কিন্তু প্রলোভনে পা দিয়ে ব্রুনাই গিয়ে টাকা তুলতে না পেরে অনেকেই পথে বসছে। এতে দেশের আত্মীয়-স্বজনরা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

ব্রুনাইয়ের ভান্ডার থেকে টাঙ্গাইলের মধুপুরের প্রতারণার শিকার খাদেমুল, রাজু ঘোষ, নূরুল ইসলাম, ইব্রাহিম, সুরুজ মিয়া, গিয়াস কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, টাঙ্গাইলের দালাল সাইফুলের মাধ্যমে রহিমের কোম্পানির ভিসায় গত ১৩ জানুয়ারি ব্রুনাই এসে মাত্র ১ মাস ১৯ দিন কাজ পেয়েছি। কাজ দেয়ার কথা বললে দালাল সাইফুল মা-বাবার নাম ধরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। কোনো উপায় না দেখে তারা সম্প্রতি দারুসসালামস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে লিখিত অভিযোগ পেশ করেন। হাইকমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা গত সোমবার দালাল সাইফুলকে ডেকে অফিসে আনলে কাজ দিতে না পারায় প্রতারণার শিকার এসব কর্মীরা হাইকমিশনের বাইরে দালালকে গণধোলাই দেয়। এতে উপস্থিত লোকজন হতবাক হন। প্রতারক রহিম গা-ঢাকা দিয়েছে বলেও তারা জানান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শ্রমবাজার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ