Inqilab Logo

বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

হাতুড়ে ডেন্টিস্টের দূর্বলতাকে পুঁজি

মোবাইল কোর্ট ঠেকানোর আশ্বাসে অর্থ আদায়ের অভিযোগ

ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২২ আগস্ট, ২০১৯, ১১:৪৮ পিএম

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিক ও হাতুড়ে ডেন্টিষ্টের দূর্বলতাকে পুঁজি করে মোবাইল কোর্ট ঠেকানোর আশ্বাসে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। শহরের অন্তত ৩০টি ডেন্টাল ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। হাতে গুণা কয়েকজন ডাক্তার ও ক্লিনিক মালিকের বৈধ কাগজপত্র থাকলেও বেশিরভাগ ক্লিনিক ও ডেন্টিস্টের বৈধ্য কাগজপত্র নেই। তারা ক্লিনিক নিয়ে বসলেও ওইসব ক্লিনিকের বেশিরভাগ ডাক্তার নামধারীরাই হাতুড়ে। হাতুড়ে ডেন্টিষ্টের দূর্বলতাকে পুঁজি করে কামাল আহামেদ নামে এক ব্যক্তি নগদ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, স্বাস্থ্য সেবাদানের সাথে জড়িত ভৈরবের ট্রমা ও মেডিল্যাবসহ একাধিক প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ডায়াগনিস্টক সেন্টারের কর্মরত ডাক্তারসহ স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা অনিময়সহ প্রতারণার অভিযোগ উঠলে বিষয়টি কিশোরগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমানের নজরে আসে। সিভিল সার্জন তখন ভৈরব শহরের গড়ে উঠা বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ সকল প্রতিষ্ঠান সরেজমিনে পরিদর্শন করে ১৫ দিনের ভিতর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচও ডা. বুলবুল আহমেদকে নিদের্শ দেন। ইউএইচও হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, চক্ষু হাসপাতালসহ ডেন্টাল চিকিৎসালয়ে পরিদর্শনে গেলে নানা বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ে। ওই সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মরত সাবার্ক্ষণিক ডাক্তার, প্যাথলজিষ্ট, টেকনোলজিষ্ট, নার্স এবং ডেন্টিস্ট সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হন বলে একটি সূত্র জানান। ফলে গ্রামের সহজ-সরল রোগীদের সাথে প্রতারণার বিষয়টিও ধরা পড়ে। পরিদর্শন শেষে বিভিন্ন হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডেন্টাল ক্লিনিক মালিককে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী লোকবল নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় সঠিক কাগজপত্র সংগ্রহ করতে নিদের্শ দিয়েছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউএইচও ডা. বুলবুল আহমেদ।
ভৈরবে যখন বিভিন্ন হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ডেন্টাল ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দূরনীতি ও প্রতারণা অভিযোগ উঠে, ঠিক তখনই ভৈরবের ডেন্টিষ্টের দূর্বলতাকে পুঁজি করে মোবাইল কোর্ট ঠেকানোর আশ্বাসে বিভিন্ন ডেন্টাল ক্লিনিকের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ উঠে কামাল আহমেদ নামে এক ডেন্টাল ডাক্তারের বির“দ্ধে। শহরের অন্তত ৩০টি ডেন্টাল চিকিৎলয়ের মালিক বা হাতুড়ে ডেন্টিস্টের মধ্যে বিডিএস ডিগ্রীধারী ৭ থেকে ৮জনের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। যাদের বৈধ কাগজপত্র নেই সেইসব ক্লিনিক মালিক ও ডেন্টিষ্টদের কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়।
চলতি বছরের ১৬ জুলাই ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ইস্যু করে উপজেলার বৈধ ও অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিকে দেয়া প্রেরণ করা হয়। ওই চিঠিতে ভৈরবের সকল ডেন্টাল চেম্বারের ডাক্তার, কর্মচারী ও মালিকদের ডেন্টাল চেম্বার সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদির বৈধ কাগজ পত্র নিয়ে ২১ জুলাই ১১টায় ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতার্র অফিসে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করা হয়। ২১ জুলাই অন্তত ২২জন ডেন্টাল ক্লিনিকের ডাক্তার ও মালিকগণ উপন্থিত হয় এবং ওই চিঠিকে কেন্দ্র করেই কামাল আহমেদ অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিক মালিক ও চিকিৎসকদের কাছ থেকে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায় করেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ডেন্টাল ক্লিনিকের ডাক্তার জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত ওই ডেন্টাল চিকিৎসক শহরের মাতৃকা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ও বাংলাদেশ ডেন্টাল পরিষদের মহাসচিব বলে জানাগেছে। তিনি নিজেক একটি দৈনিক পত্রিকার বাতার্ সম্পাদক পরিচয় দিয়ে ব্যাঙ্গের ছাতারমত গড়ে উঠা হাতুড়ে ডেন্টিস্ট ও ডেন্টাল ক্লিনিক মালিকদের ভয় ও চাপে রেেেখে এসব অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
হাতুড়ে ডেন্টিস্টদের অপচিকিৎসার কারণে দন্ত রোগীরা দন্তহানি সহ স্ট্রোকের ঝুকিঁ রয়েছে বলে মনে করেন দন্ত বিশেষজ্ঞরা। এসকল অপচিকিৎসকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষে কমনা করছেন সচেতন মহলের লোকজন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ডেন্টাল চিকিৎসক ও মাতৃকা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক কামাল আহমেদ নিজেকে বাংলাদেশ ডেন্টাল পরিষদের মহাসচিব পরিচয় দিয়ে মুঠোফোনে সাংবাদিকদের কাছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ঠেকানোর কথাটি অকপটে বলে ফেললেও, মুহুর্তের মধ্যে তাঁর বক্তব্য পাল্টে বলেন, সংগঠনের মাসিক চাদাঁ ও সংগঠনের খরচের জন্য কিছু টাকা নেয়া হয়েছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান ঠেকানোর জন্য টাকা নেয়া হয়নি । ভৈরবে ডেন্টাল মালিক সমিতি বা ডেন্টাল পরিষদ নামে কোনো সংগঠন রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, ভৈরবে ডেন্টিষ্ট ও ডেন্টাল ক্লিনিক মালিকদের কোন সংগঠন নেই। তবে একটি দৈনিক পত্রিকার বাতার্ সম্পাদক বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ভৈরব উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা ইসরাত সাদমীন বলেন, খোজঁ-খবর নিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ