Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

প্রকৃত সত্য জনগণের সামনে উদ্ঘাটন অত্যন্ত জরুরী : প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উস্কানিমূলক : মির্জা ফখরুল

প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : গুপ্তহত্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ‘উস্কানিমূলক ও অগ্রহণযোগ্য’ অভিহিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে দলটি অভিযোগ করেছে, সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাকা- ও এর সঙ্গে জড়িতদের লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার পেছনে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ জায়গার ইঙ্গিত রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বুধবারের সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য উস্কানিদানকারী, অনভিপ্রেত, অগ্রহণযোগ্য। ওই বক্তব্য অসত্য, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপ্রসূত। তার (প্রধানমন্ত্রী) বক্তব্য রাজনৈতিক শিষ্টাচারবিরোধী ও সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ বিপন্নকারী। আমরা মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য রাষ্ট্র ও সমাজের বিভেদ-বিভাজনের পরিসর আরো বিস্তৃত হবে, জঙ্গিবাদ উৎসাহিত হয়ে আরো বেশি সংগঠিত ও তৎপর হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে জঙ্গিবাদ রেহাই দেয়ার শামিল’Ñ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য দৃঢ়প্রত্যয় সহকারে প্রত্যাখ্যান করছি এবং তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
একই সঙ্গে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এতোগুলো হত্যাকা- ঘটে যাওয়ার পরও সরকার নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের এখনো পর্যন্ত খুঁজে বের করতে পারেনি। অধিকাংশ হত্যাকা- প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটেছে।
এসব নারকীয় ঘটনার ন্যূনতম কোনো হদিস বের করতে না পেরে চরমভাবে ব্যর্থ হয়ে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের ওপর এগুলোর দায় চাপাচ্ছে। আমরা মনে করি, এ সমস্ত নিঁখুত হত্যাকা- সংঘটিত হওয়া এবং এর সংঘটনকারীদের লাপাত্তা হয়ে যাওয়ার ঘটনা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ জায়গা অর্থাৎ রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিত না থাকলে এটা কোনোভাবে সম্ভব হতে পারে না।
‘গত বুধবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ করে বলেছেন, আমরা যখন কথা বলি, মনে রেখে দেবেন; কোনো অমূলক কথা বলি না। একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, আমি হেড অফ দি গভারর্নমেন্ট। আমার কাছে নিশ্চয়ই তথ্য আছে। তদন্তের স্বার্থে সব কথা হয়তো প্রচার করা যাবে না, বলা যাবে না, প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু সূত্রটা জানা যায়। আমরা সূত্র ধরেই কথা বলি। যারা সরকারের অভিযোগকে রাজনৈতিক বক্তব্য মনে করেন, তারা যদি জানেন যে সন্ত্রাসী আসলে কারা, তাহলে সেই তথ্যটি সরকারকে দিতে বলেন শেখ হাসিনা’।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাব দিতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারকে বলব, এভাবে শুধুমাত্র নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য বিরোধী দলের ওপর দোষারোপ না করে সত্যিকার অর্থেই প্রকৃত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বের করে আনুন, সত্য উদ্ঘাটিত করুন, তাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসুন।
জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করুন। আমরা এখনো বলছি, এই সংকটের সমাধান হতে পারে, সত্যিকার অর্থে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। সেই নির্বাচন তখনই সম্ভব যখন একটি নিরপেক্ষ সরকার থাকবে, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন থাকবে। তাদের অধীনেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তার কাছে তথ্য আছেÑ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যখন এধরনের কোনো ঘটনা ঘটলেই প্রথম যে আক্রমণটা করেন, বিএনপিকে আক্রমণ ও দোষারোপ করা। গুলশানে যখন ইতালীয় নাগরিক গুপ্তহত্যার শিকার হলেন, এর একদিন পর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে থেকে প্রধানমন্ত্রী বললেন এটার সঙ্গে বিএনপি জড়িত। কোনো রকম তথ্য উপাত্ত ও তদন্ত ছাড়াই তিনি প্রথমে বলে দিলেন এর সঙ্গে বিএনপি জড়িত।
ফলে সরকারের প্রধান যখন বলে দেন যে এরাই জড়িত, তখন সমস্ত তদন্তের ধারাটা সেদিকে চলে যায়, অর্থাৎ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের আর অবকাশ থাকে না। এটা প্রধানমন্ত্রী করেন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে। কারণ তিনি জানেন, এটা করলেই তদন্তের বিষয়গুলো অন্যদিকে চলে যাবে।
এরপরও কিন্তু কোনো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত জনসমক্ষে উপস্থাপন করা হয়নি এবং যাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে, তাদেরকে ঠিক সেইভাবে আমরা চিহ্নিত করতে দেখিনি যে তারাই প্রকৃত হত্যাকারী বা ঘটনার সঙ্গে দায়ী।
তিনি বলেন, বিএনপিকে এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত করার উদ্দেশ্যটা কী? উদ্দেশ্য একটাইÑ যেহেতু বিএনপি একটি উদারপন্থী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, বিএনপি এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে, লড়াই করে সফল হয়েছে। এখনো গণতন্ত্রের পক্ষে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। সুতরাং বিএনপিকে যেভাবে হোক নির্মূল করা প্রয়োজন।
এখন যখন সারা পৃথিবী বাংলাদেশে গুপ্তহত্যা ও জঙ্গিবাদ নিয়ে কথা বলছেন, বাংলাদেশের মানুষ যখন সোচ্চার হয়েছেন, তখন ঠিক একইভাবে প্রধানমন্ত্রী জনগণের যে দৃষ্টি, আন্তর্জাতিক যে দৃষ্টি সেটাকে দূরে সরানো জন্য, ভিন্নপথে পরিচালিত করার জন্য, বিভ্রান্ত করার জন্য আবার বিএনপিকেই দোষারোপ শুরু করেছেন।
৮ বছর ধরে ক্ষমতা থেকে সরকার জঙ্গিবাদ দমনে কি করেছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী যদি এতোই তথ্য পেয়ে থাকেন, তাহলে নাটোরে উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন বাবু, সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনির হত্যাকা-ের বিষয়ে কোনো তথ্য পেলেন না কেনো? বিডিআর হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটার আগে কেনো তথ্য প্রধানমন্ত্রী পেলেন না?
অর্থমন্ত্রী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়ে যাওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, এটা পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি। তাহলে সরকার প্রধান হিসেবে জনগণের টাকা সাগর চুরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আগে তথ্য পেলেন না কেনো। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮শ’ কোটি টাকা ডাকাতি হয়ে গেলো, প্রধানমন্ত্রী পেলেন না কেনো। এগুলো জনগণ জানতে চায়। প্রকৃত সত্য জনগণের সামনে উদ্ঘাটন করা অত্যন্ত জরুরী বলে আমরা মনে করি।
ইলিয়াস আলীসহ বিএনপির নেতা-কর্মীদের গুমের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিরোধীদলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে বিচারবহির্ভূত ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের ৭ জনের পেট চিরে পানিতে ডুবিয়ে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে যা দেশবাসীর অজানা নয়। যারা এসব মানবিক কাজ করতে পারে, তাদের কর্মকা-ের সাথে সম্প্রতি উত্থান হওয়া জঙ্গিদের কাজের অনেকটা মিল খুঁজে যাওয়া যায়। মহান স্বাধীনতা ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট  জিয়াউর রহমানের হত্যাকারীদের কারা মন্ত্রী বানিয়েছেন, কারা এমপি বানিয়েছেন?
বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম, যুবদল নেতা গামা, উপজেলা চেয়ারম্যান নুর হোসেন বাবুর হত্যাকারীদের রাষ্ট্রীয় ক্ষমা করা হয়েছে, তাতে এটাই প্রমাণিত হত্যাকারী, অনাচারকারী, হাঙ্গামাকারীরা বর্তমান ক্ষমতাসীনদের দ্বারা আশীর্বাদ লাভ করে আছেন। জঙ্গিবাদ সরকারী  আচরণেই এর প্রতিফলন।
ক্রসফায়ারে হত্যার প্রসঙ্গ বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রায় সব ধর্মের সম্প্রদায়ের লোকজনকে হত্যা করা হচ্ছে, কেউ বাদ যাচ্ছে না। সম্প্রতি মসজিদের ইমাম বলুন কিংবা সুফী বা সুফীর শিষ্যকে হত্যা করা হচ্ছে, হিন্দু পুরোহিতকে হত্যা করা হচ্ছে। এগুলোকে আমরা কাকতালীভাবে দেখছি না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রেজাউল সাহেব হত্যা হওয়ার পরে যাদেরকে গ্রেফতার করা হলো, তাদের একজনকে গত তিনদিন আগে ক্রসফায়ারের নাম করে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হোসনি দালালের আক্রমণের সাথে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিলো, তাদের দুইজনকে আগেই মেরেছে, গতকাল আরেকজনকে হত্যা করা হয়েছে।
কাশিমপুরে জেলে থেকে আদালতে আনার পথে প্রিজন ভ্যান থেকে যারা পালিয়ে গেলো, তাদের একজনকে ধরে ঘটনাস্থলে গুলি করে হত্যা করা হলো। এ থেকে কী আমরা ধারণা নিতে পারি? যারা জডিত, তাদের গ্রেফতার করা হয়, তাদেরকেই হত্যা করে ফেলা হচ্ছে কেনো। তাদেরকে ক্রসফায়ারের নাম করে হত্যা করে ফেলা হচ্ছে কেনো? কারণটা কী? কোথায় সমস্যাটা। এটা কী এখানে সমস্যা যে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনলে সত্য উদ্ঘাটিত হয়ে যাবে, সেজন্য তাদেরকে ক্রসফায়ারের নাম করে হত্যা করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা সূত্র ধরেই বলছি, যাদেরকে ধরছেন, তাদেরকে বিচারের আওতায় না এনে কেনো বিচারবহির্ভূতভাবে মারছেন? তাদের বিচারের আওতায় আনছেন না কেনো? কেনো তথ্য গোপন করছেন? জনগণের জানার বিষয়গুলো জানার প্রয়োজন আছে।
সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, অনিন্দ্র ইসলাম অমিত, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুল করিম শাহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ