Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আদালত অবমাননার মুখোমুখি করছে আইন মন্ত্রণালয়কে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত কর্মচারীদের হাতে রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছেন গোটা মন্ত্রণালয় ও ভুক্তভোগীরা। একই চেয়ারে দীর্ঘদিন থাকার সুবাদে এক শ্রেণীর কর্মচারী গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। মন্ত্রণালয়ের সদ্য বিদায়ী একজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে সামনে রেখে এ সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। সিন্ডিকেটের সদস্যরা এতই শক্তিশালী যে, তাদের কারণে মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তাদের প্রায়ই আদালত অবমাননার মুখোমুখি হতে হয়। অর্থের বিনিময়ে সিন্ডিকেট সদস্যরা ফাইল থেকে নিমিষেই গায়েব করে দেয় গুরুত্বপূর্ণ নথি। ভুক্তভোগীদেরও ফেলে দেয় সীমাহীন দুর্ভোগে। আইন সচিব মো. গোলাম সারোয়ার শনিবার টেলিফোনে বলেন, আমি কিছুদিন হলো দায়িত্ব নিয়েছি। এমন কোনো সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব থাকলে নিশ্চয়ই এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আইন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সদ্যবিদায়ী একজন শীর্ষ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সহকারী আবু কায়ছারের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে সিন্ডিকেট। একই মন্ত্রণালয়ের মো. জালাল, আবুল কালাম, কিবরিয়া, টাইপিস্ট রোজী বেগম, ফয়ছাল এবং রাসেল এ সিন্ডিকেটের সদস্য। এদের মধ্যে কায়ছার, আবুল কালাম এবং কিবরিয়া সম্পর্কে পরস্পর আত্মীয়। শাখা-৫ এর তৎকালীন সিনিয়র সহকারী সচিব খাদেমুল কায়েসেরও আত্মীয় তারা। কিবরিয়া একই টেবিলে রয়েছেন ৮ বছর ধরে। অভিযোগ রয়েছে, এ সিন্ডিকেটকে দিয়ে অর্থের বিনিময়ে ফাইল যেকোনো কাজে সিদ্ধহস্ত। বিশেষ করে জেলা রেজিস্ট্রার, সাব-রেজিস্ট্রার এবং নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, শাস্তি, নোটারি পাবলিকসহ সেবাধর্মী কাজগুলো সম্পাদন করে অর্থের বিনিময়ে। নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগ সংক্রান্ত ফাইল থেকে নথি গায়েব করে দেয়ার অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে পুরনো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগসংক্রান্ত ফাইল থেকে নথি গায়েবের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে। বিনিময়ে চক্রের সদস্যরা লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ ওঠে।

অন্যদিকে মন্ত্রণালয়কে আদালত অবমাননার মুখোমুখি করে। নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগসংক্রান্ত ফাইল থেকে নথি গায়েব করে দেয়ায় ২০১৮ সালে দু’টি আদালত অবমাননার রুল (নং-৫৮৭১/২০১৮, ১৬০৮৮/১৮) জারি হয় মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে। চলতি বছর আরো দু’টি (নং-৩৮/২০১৯, ১০২/২০১৯) রুল জারি হয়। এসব রুলের জবাব দিতে মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের হিমশিম খেতে হয়।

অভিযোগ রয়েছে, কায়সার আইন সচিবের নাম ভাঙিয়ে প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হন। তিনি সচিবের দোহাই দিয়ে বিচারকদের কাছে ফোন করে বদলি-বাণিজ্য, জামিন-বাণিজ্য এবং রায়-বাণিজ্য করতেন। সচিবের দপ্তরে যেকোনো নিয়োগ হলে কায়সারের সঙ্গে কথা বলতে হতো। এসবের মাধ্যমে তিনি ৭ বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর লেবুখালীতে ৩ তলা ভবন করেছেন। বিভাগীয় শহর বরিশালে রয়েছে ৫ তলা বাড়ি। নামে-বেনামে বিপুল টাকা ব্যাংকে জমা করেছেন।

উপ-সচিব (রেজিস্ট্রেশন) শাখার পিয়ন রাসেল এ শাখায় কর্মরত ৮ বছর ধরে। তিনিও আইন মন্ত্রণালয়ের গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের সদস্য। প্রশাসন শাখায় কর্মরত বড় ভাই আব্দুর রব হচ্ছেন রাসেলের বড় শক্তি। এ দপ্তরে নথি আসে আইন সচিবের স্বাক্ষরের পর। সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য উপ-সচিব (রেজিস্ট্রেশন) নাজমুল আহসান। সচিবের দপ্তর থেকে তার দপ্তরে ফাইল যায় রাসেলের হাত হয়ে। সিন্ডিকেটের সংকেত না পাওয়া পর্যন্ত রাসেল ফাইল ড্রয়ারে আটকে রাখেন।

সিন্ডিকেটের ভেতর রয়েছেন টাইপিস্ট রোজী বেগমও। চাকরির শুরু থেকে তিনি একই দপ্তরে রয়েছেন। সচিবের ব্যক্তিগত সহকারী রোজী বেগমের ভগ্নিপতি। এ আশীর্বাদে তিনিও ভাগ পান অর্থের। সম্প্রতি আবু কায়ছার এবং আবুল কালামের বিরুদ্ধে নিকাহ রেজিস্ট্রার নিয়োগের নাম করে গাজীপুর এবং কুমিল্লার বাসিন্দা দুই প্রার্থীর কাছ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী দুই ব্যক্তি আইন মন্ত্রণালয়ে নালিশ করে কোনো প্রতিকার পাননি।

সিন্ডিকেট সদস্য রেজিস্ট্রেশন শাখার জালালউদ্দিন। তিনি মুজিবনগর কর্মচারীদের পক্ষে দালালি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। তার অধিকাংশ লেনদেন হয় বিকাশে। আইন মন্ত্রণালয়ের পরিবহন পুল ভবন দপ্তরে কর্মরত এই সিন্ডিকেট জেলা রেজিস্ট্রার, সাব-রেজিস্ট্রার এবং নিকাহ রেজিস্ট্রারদের বিরুদ্ধে ভুয়া অভিযোগ দাখিল করেন। পরে সেগুলো তদন্ত করার নাম করে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা।

এদিকে আইন মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখা-৭ এ গড়ে ওঠে সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মিদশা থেকে পরিত্রাণ চেয়ে আইন সচিব বরাবর আবেদন দিয়েছেন নিকাহ রেজিস্ট্রারগণ। রাজধানী এবং এর আশপাশে ২৪ জন নিকাহ রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরে এই আবেদন গত ১৮ আগস্ট মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ