Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ফ্লাইওভারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০৪ এএম

যানজট নিরসন এবং স্বচ্ছন্দ চলাচল নিশ্চিত করতে গত দেড় দশকে নির্মিত ঢাকার ফ্লাইওভারগুলো নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত সংযোজন। উত্তরে বিমানবন্দর সড়ক এবং দক্ষিণের প্রবেশপথে ট্রাফিক সিস্টেমে কিছুটা উন্নতি হলেও এসব ফ্লাইওভার নির্মাণের পরও ঢাকার সামগ্রিক যানজট ও জনদুর্ভোগ লাঘবে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। তবে ফ্লাইওভার চালুর পর থেকে ঢাকায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বেড়েছে। দুর্ঘটনার পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে ফ্লাইওভারগুলো ছিনতাই, রাহাজানিসহ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। গত রবিবার রাতে খিলগাঁও ফ্লাইওভারে এক রাইড শেয়ারিং মোটর সাইকেল চালককে গলা কেটে তার মটর সাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচিত হচ্ছে। গত দু’দিনে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে ঢাকার বিভিন্ন ফ্লাইওভারের নিচে এবং উপরে অপরাধীচক্রের তৎপরতা, অব্যবস্থাপনা, বিশৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তাহীনতার নানা মাত্রিক চিত্র পাওয়া যায়। শুরু থেকেই ফ্লাইওভারের নিচে ময়লা আবর্জনার স্তূপ এবং মাদকাসক্ত ও অপরাধীচক্রের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল। দীর্ঘদিনেও তার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এরই মধ্যে কোনো কোনো ফ্লাইওভারের উপরের অংশে বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে বিপজ্জনক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা যায়।

একেকটি ফ্লাইওভারে নির্মাণে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় এবং বিশাল অংকের দুর্নীতি-অপচয় ও জনদুর্ভোগের অভিযোগ ও অভিজ্ঞতা রয়েছে নাগরিক সমাজের। তবে নির্মাণের পর থেকে ফ্লাইওভারের নিচের অংশের জঞ্জাল এবং উপরের অংশের নিরাপত্তা বিধানে সংশ্লিষ্টদের অনীহা ও ব্যর্থতা সীমাহীন। বেসরকারি বিনিয়োগে নির্মিত ফ্লাইওভারে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা টোল আদায় হলেওÑ এটিতেও জনদুর্ভোগ একই রকম। ফ্লাইওভারের কিছু অংশে দীর্ঘদিন ধরে ল্যাম্পপোস্টের বাতিগুলো অকেজো হয়ে থাকায় সন্ধ্যার পর পর এসব স্থান অন্ধকারে ভূতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয়। এই অন্ধকারেই ওত পেতে থাকা অপরাধীরা ছিনতাই-ডাকাতিসহ অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সুযোগ নিচ্ছে। এসব ঘটনা এড়াতে দ্রæত গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে চালক ও যাত্রীরা। খিলগাঁও ফ্লাইওভারে মিলনের মৃত্যু তার সর্বশেষ উদাহরণ। খিলগাও ফ্লাইওভারে যাত্রীর ছদ্মবেশে ছিনতাইকারী মটরসাইকেল চালক মিলনকে হত্যা করে মটর সাইকেল ছিনিয়ে নেয়ার পর ইতিমধ্যে ৫ দিন অতিবাহিত হলেও মটরসাইকেলটি উদ্ধার বা হত্যাকারীকে ধরতে পারেনি পুলিশ। ফ্লাইওভারের উপর পর্যাপ্ত আলো না থাকলেও পাশের বহুতল বাড়ির সিসি ক্যামেরায় ছিনতাই ঘটনার ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে অপরাধীদের শনাক্ত করা অসম্ভব নয়। এ নৃশংস ঘটনার পর ফ্লাইওভারের ল্যাম্পপোস্টের বাতি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো থাকার প্রশ্নটি সামনে চলে এসেছে। সেই সাথে ফ্লাইওভারের উপরে ট্রাফিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতির বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে গেছে। মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভারের উপর একের পর দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ট্রাফিক, ক্রাইম বিভাগ, সিটি কর্পোরেশন এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের মধ্যে দায় এড়ানোর ঠেলাঠেলির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

যানজট, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িসহ নাগরিক সমস্যা সংকট ও জনদুর্ভোগের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর দায় এড়ানোর এমন রশি টানাটানি দেখা যায়। একদিকে সরকার এসব সমস্যা নিরসনে জনগণের রাজস্বের হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে, অন্যদিকে দায় দায়িত্ব পালনে সংশ্লিষ্ট দফতর ও কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা ও জবাবদিহিতার অভাবে অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না। ঢাকার পাশাপাশি বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ফ্লাইওভারগুলোও একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন। ফ্লাইওভারের নিচে ময়লা আবর্জনার স্তূপ, মাদকসেবী, ছিনতাইকারী, জুয়াড়ি, ঠেকবাজ-সন্ত্রাসীদের দখলবাজি থেকে রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেই। নিচের অপরাধীরা এখন উপরে গিয়ে ছিনতাই-হত্যাকান্ডে জড়িয়ে পড়লেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টনক নড়ছে না। রাজধানী ঢাকায় নাগরিক নিরাপত্তা এখন যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঐচ্ছিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রাজধানী শহরের এমন বাস্তবতা জিইয়ে রেখে দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়া অসম্ভব। ফ্লাইওভারগুলো এখন রাজধানীর প্রবেশ দ্বারে পরিণত হলেও প্রয়োজনীয় নজরদারি না থাকায় ল্যাম্পপোস্টগুলোর ক্যাবল কেটে এবং বাতি নষ্ট করে দিয়ে ছিনতাই-ডাকাতির অভয়ারণ্যে পরিণত করেছে অপরাধীরা। ফ্লাইওভার এবং গাড়িচালক-যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে ফ্লাইওভারের সর্বত্র উপরে ও নিচে পর্যাপ্ত আলো এবং সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে হবে। ফ্লাইওভারের নিচে অবৈধ দখলবাজি বন্ধের পাশাপাশি ময়লা আবর্জনা সরিয়ে সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ নিতে হবে। এসব উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আগে ফ্লাইওভারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও নজরদারি বাড়াতে হবে। ফ্লাইওভারের উপর যাত্রী উঠানামা এবং অবৈধ পার্কিং থেকে বিরত রাখতে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। ফ্লাইওভারের নিচে ও উপরে অপরিচ্ছন্নতা, মাদকের আখড়া, দখলবাজি ও নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্নে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমন্বয় ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফ্লাইওভার


আরও
আরও পড়ুন