Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

তিনদফা দাবিতে জাবির প্রশাসনিক ভবন অবরোধ

‘উপাচার্য আপনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করুন’

জাবি সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ৬:২৪ পিএম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও মহাপরিকল্পনা পুনর্বিন্যাসসহ তিন দফা দাবিতে পূর্ব ঘোষিত প্রশাসনিক ভবন অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এতে স্থবির হয়ে পড়ে সকল ধরনের প্রশাসনিক কার্যক্রম। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী দুপুর পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করতে পারেনি।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করে।
এতে কয়েকজন শিক্ষকসহ জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জাবি শাখার নেতাকর্মী অংশ নেয়।
আন্দোলনকারীদের দাবি, অপরিকল্পিত মাস্টার প্লানের অধীনে তড়িঘড়ি করে ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের’ কাজ শুরু করা হয়েছে এবং অপরিকল্পিতভাবে যে কয়েকটি স্থাপনার কাজ শুরু হয়েছে তাতেও ব্যাপক আর্থিক অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে বলে তারা জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জেনেছেন। এজন্য প্রকল্পে অপরিকল্পনা ও দুর্নীতির প্রতিবাদে এবং তিন দফা দাবি আদায়ে তারা এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন।
আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো হলো- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের পাশের তিনটি হল স্থানান্তর করে নতুন জায়গায় দ্রুত কাজ শুরু করা, মেগাপ্রজেক্টের টাকার দুর্নীতির ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা, টেন্ডারের শিডিউল ছিনতাইকারীদের শাস্তি প্রদান ও মেগাপ্রজেক্টের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে সকল ব্যয়ের হিসেব জনসম্মুখে প্রকাশ করা এবং মেগাপ্রজেক্টের বাকি স্থাপনার কাজ স্থগিত রেখে সকল স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে মাস্টারপ্লান পুনর্বিন্যাস করা।
এদিকে অবরোধ চলাকালে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক জহির রায়হান বলেন, 'ছাত্রদের জন্য তিনটি আবাসিক হল নির্মাণের জন্য এমন স্থান নির্বাচন করতে হবে যেখানে গাছ কম কাটা পড়বে। আর অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের টাকা ছাত্রলীগের মধ্যে ভাগাভাগির যে অভিযোগ এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা মিথ্যা দাবি করছে। যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে কোনও উচ্চতর কমিটির মাধ্যমে এই অভিযোগের তদন্ত হতে হবে। সেটা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কিংবা ইউজিসির তদন্ত হতে পারে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এসব দাবি আদায়ের জন্য সময় দিয়েছিলাম। কিন্তু, কোন পদক্ষেপই নেওয়া হয়নি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আহমেদ শিশির বলেন, প্রশাসন একগুয়ে আচরণ করছে। এর সত্য জবাব ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা দিবে। প্রশাসন দাবি মেনে না নিলে আমরা লাগাতার কর্মসূচি পালন করতে বাধ্য হবো।
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আশিকুর রহমান বলেন, “উপাচার্য ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগকে তিনি মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যমূলক আখ্যায়িত করেছেন এবং এসব অভিযোগের যথাযথ প্রমাণ দিতে বলেছেন। তাই আমরা বিনীতভাবে বলতে চাই- উপাচার্য, আপনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করুন।’
দকে অবরোধের মধ্যেই দুপুর সাড়ে ১২ টায় পুরানো প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি মুরাদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে দুর্নীতির প্রতিবাদে পথনাটক পরিবেশন করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৩ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। গত ৩০ মে এই প্রকল্পের প্রথম ধাপে পাঁচটি হলের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। এসব হল নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থানে প্রায় ১২ শ গাছ ছিল। এই গাছ কাটার প্রতিবাদ ও প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা ‘অপরিকল্পিত’ দাবি করে আন্দোলন করতে শুরু করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। এর মধ্যেই অভিযোগ ওঠে ভিসির বাসভবনে বৈঠক করে প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠভাবে করার জন্য ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এমন অভিযোগ ওঠার পরেরদিন থেকে টাকা লেনদেনের অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও মহাপরিকল্পনা পুনর্বিন্যাসসহ তিন দফা দাবিতে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনে নামেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাবি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ