Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কাশ্মীর নিয়ে বিক্ষোভ লন্ডনের ভারতীয় হাই কমিশনে ভাঙচুর

গুলিতে আহত যুবকের মৃত্যুতে উপত্যকায় উত্তেজনা : শ্রীনগরের মেয়র গৃহবন্দী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঢেউ আরো একবার আছড়ে পড়ল ব্রিটেনে। মঙ্গলবার লন্ডনে ভারতীয় হাই কমিশনের বাইরে কেন্দ্রের কাশ্মীর ইস্যুতে বিক্ষোভ দেখালেন একদল প্রবাসী ভারতীয়। বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইটে দূতাবাসের কাচ ভেঙে যায়। এদিকে, অধিকৃত কাশ্মীরে বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর পেলেট গানের গুলিতে আহত আসরার আহমেদ খান (১৮) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল মারা যান। এ ঘটনায় ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে উপত্যকায়। অন্যদিকে, কাশ্মীরের সবচেয়ে বড় শহর শ্রীনগরের মেয়র জুনায়েদ আজিম মাত্তুকে মঙ্গলবার গৃহবন্দী করা হয়েছে।
বুধবার ভারতীয় হাই কমিশনের পক্ষ থেকে টুইটারে বিক্ষোভের কথা জানানো হয়েছে। লেখা হয়েছে, ‘৩ সেপ্টেম্বর আরও একটি সহিংস প্রতিবাদের ঘটনা ঘটল লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনে। এই প্রতিবাদের ফলে হাইকমিশনের অফিসের ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে।’

এই নিয়ে কাশ্মীর ইস্যুতে দ্বিতীয় বার প্রতিবাদ হল হাই কমিশনের সামনে। প্রতিবাদীরা প্রথম জমায়েত করেছিলেন ভারতের স্বাধীনতা দিবসের দিনে। হাই কমিশন বিল্ডিংয়ে সেই বারও ডিম, পাথর ছোড়ে বিক্ষুব্ধ প্রবাসী ভারতীয়রা। পুলিশ চার জনকে আটক করেছিল ১৫ আগস্টের ঘটনায়।
লন্ডনের মেয়র সাদিক খান এ দিন গোটা ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনিও টুইটারে লিখেছেন, ‘এই ঘটনা অপ্রত্যাশিত। প্রতিবাদীদের আচরণের তীব্র নিন্দা করছি আমি। ব্রিটেনের পুলিশকে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে আমি অনুরোধ করেছি।’

মঙ্গলবার লন্ডনের পার্লামেন্টেও বিষয়টি ওঠে। ভারতীয় বংশোদ্ভ‚ত সাংসদ শৈলেশ ল²ণ ভারা প্রথম অধিবেশনে এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘হিংসা কখনওই কাম্য নয়। আমাদের দেশে তো নয়ই, অন্য দেশেও কোনও বিশেষ গোষ্ঠীর ওপর আক্রমণ সমর্থনযোগ্য নয়। আপাতত আমাদের লক্ষ্য ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দুই দেশের মধ্যে কথাবার্তার মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হবে বলে বিশ্বাস করি।’ ব্রিটেনের বিরোধী দলনেতা তথা লেবার পার্টির সাংসদ লিয়াম বায়ার্ন আবার মঙ্গলবারের এই প্রতিবাদকে সমর্থন করছেন সরাসরি। তিনি একটি অনলাইন পিটিশন জমা করার ব্যবস্থা চালু করেছেন। সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি বলেন, ‘হাজার মানুষ আজ ব্রিটেনের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করল। এই প্রতিবাদ ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি বার্তা, কাশ্মীর নিয়ে মানুষের মুখ বন্ধ রাখা যাবে না।’
এদিকে, আসরার আহমেদ খানের মৃত্যু হতেই ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে উপত্যকায়। স্থানীয়দের দাবি, নিরাপত্তা বাহিনীর পেলেট গানের গুলিতেই মৃত্যু হয়েছে নামে ওই যুবকের। যদিও সেনার দাবি, পেলেট গান নয়, ভোঁতা কিছুর আঘাতে মৃত্যু হয়েছে ওই যুবকের। তবে উত্তেজনার আশঙ্কায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে শ্রীনগর-সহ বিভিন্ন এলাকায়।

গত ৫ আগস্ট ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা তুলে নেওয়ার পরের দিনই শ্রীনগরের কাছে ইলাহিবাগ এলাকায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে শামিল হন এলাকার কিছু বাসিন্দা। অভিযোগ, সেই বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে পেলেট গান ছোড়ে নিরাপত্তা বাহিনী। তাতেই আরসার গুরুতর চোট পান বলে অভিযোগ পরিবার ও স্থানীয়দের। তার পরই তাকে সৌরা এলাকায় শের-ই-খান ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এ ভর্তি করানো হয়। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু মঙ্গলবার রাত থেকেই তার অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। বুধবার সকালে হাসপাতালেই মৃত্যু হয় তার। ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা ইলাহিবাগ এলাকায় তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন। কিন্তু এর পর থেকেই ওই এলাকায় চাপা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ফের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ওই এলাকায় নিরাপত্তা আঁটসাট করেছে প্রশাসন। এলাকার উপর রয়েছে কড়া নজরদারি।

অন্যদিকে, শ্রীনগরের মেয়র জুনায়েদ আজিম মাত্তুকে মঙ্গলবার গৃহবন্দী করা হয়েছে। অধিকৃত রাজ্যটির স্বায়ত্তশাসন বাতিলের প্রতিবাদ ও অচলাবস্থায় বহু লোক তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না বলে মন্তব্য করায় এবার তাকে নিশানা করেছে ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকার।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম কুইন্ট জানিয়েছে, দিল্লিতে চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন মাত্তু। কিন্তু ফিরে যাওয়ার পরই তাকে গৃহবন্দী করা হয়েছে। কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘিরে মেয়রের গতিবিধি আগে থেকেই সীমিত করে দেয়া হয়েছিল। এর আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, কাশ্মীরের রাস্তায় কোনো লাশ পড়ছে না বলে এমনটা কল্পনা করা খুবই অবাস্তবিক যে কাশ্মীরের স্বাভাবিকতা ফিরেছে। তিনি জানান, ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের আটক রাখার নীতি পুরোপুরি কাজ করছে। কাশ্মীরে এখন অনেক পরিবার রয়েছে, যারা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কাশ্মীর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ